বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ৬২’তে জেনারেল নে উইন সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। নতুন করে দুর্ভোগের পড়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। তাদের বিদেশি অাখ্যায়িত করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চলাফেরার স্বাধীনতাসহ সব ধরণের অধিকার কেড়ে নেয় সামরিক জান্তা। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অং সান সূচি সরকারের আমলেও তাদের হত্যা-ধর্ষণ, অত্যাচার, ধর্মীয় কর্তব্য পালনে বাধা, সম্পত্তি কেড়ে নেয়া হয়।
এ অবস্থায় রাখাইনে শান্তি ফেরাতে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠিত হয়।কিন্তু শান্তির পথ দেখানো আনান কমিশনের বহুরৈখিক সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন দাখিলের আগেই সেনা নেপথ্যের সরকারি ষড়যন্ত্র।
রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ ও ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যায়িত করে তাদের চিরতরে বিতাড়নের জন্য অপারেশন চালাতে গত বছরের ১৪ আগষ্ট স্টেট কাউন্সিলর সূচি’র কাছে একটি লিখিত প্রস্তাব দেয় সেনা সমর্থিত ২০টি রাজনৈতিক দল। পূর্ব পরিকল্পিতভাবে রাখাইন রাজ্যে সেনা ফোর্সও মোতায়ন হয়। এরপর রোহিঙ্গা কর্তৃক মংডুর পুলিশ স্টেশনে অগ্নিসংযোগের নাটক মঞ্চস্থ।ঠুনকো অজুহাত দাঁড় করিয়ে ২৫ আগস্ট ২০১৭’র সেনা-মগদের বর্বরতা। নিরস্ত্র রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী ও তাদের দোসর মগদের একক ‘যুদ্ধ’!
ঘরের সামনে উঠান, রাস্তা-ঘাট, ডোবা-নালায় লাশের স্তুপ। প্রাণ বাঁচাতে ভয়ে ভয়ে বৃদ্ধকে কাঁধে, শিশুকে হাতে লয়ে ঘণ্টাখানের পথ পাড়ি দিতে তিন/চারদিন দুর্গম অঞ্চল ঘুরে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী । পেটে ক্ষুধার যন্ত্রণা। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে নিগৃহীত-নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের মুখে বলা এসব ঘটনা পাঠকের সামনে তুলে ধরার অন্যতম কাজ সংবাদকর্মীদের। ইতিহাসের ঘৃণ্যতম রোহিঙ্গা গণহত্যা শুরুর পর ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭’তে বান্দরবানের নাইক্ষ্যৎছড়ি হয়ে মিয়ানমারের তমব্রুতে অবৈধভাবে ঢুকে পড়েন অনুসন্ধানী সাংবাদিক হাসান জাভেদ।
রোহিঙ্গা তাবু থেকে শাহপরীর দ্বীপ, নাফ নদী ঘুরে ঘুরে সংবাদ তৈরি করেছেন। এর আগে ২০১৬ সালের মে মাসে মাছ ব্যবসায়ী পরিচয়ে রাখাইনের মংডু শহর ঘুরে এসে রোহিঙ্গাদের অবস্থা, ইয়াবাবাহী একটি ট্রলারের প্রতিবেদন প্রকাশ করেন জাভেদ। সহকর্মীদের ভাষায় ‘রোহিঙ্গা সাংবাদিক’।
সেনাবাহিনীর বন্দুকের নল ও দোসর মগদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে চোখের সামনে প্রিয়জনের সবল দেহ মাটির সঙ্গে লুটে পড়া, কোলের শিশুকে পানিতে ছুড়ে হত্যা, সাজানো সংসারে অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ-নির্যাতনের সেই সব দু:সহ বর্ণনা আর এক রোহিঙ্গা তরুণীকে নিয়ে সুঁই-সুতোর মেলবন্ধনের একটি উপখ্যানের নাম ‘নাফ তীরের কন্যা’।
পাখির মতো মা-বাবা ও তিন ভাইবোনের নির্মম মৃত্যু দেখে কাঁটাতার ডিঙিয়ে বাংলাদেশে আসেন রোহিঙ্গা কন্যা। ভাবছিলেন হয়তো নিধু’র দেখা পাবে। যার সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। কিন্তু হাজারো স্বজাতির ভীড়ে কে দেবে তার সন্ধান। নিধু কী আদৌ বেঁচে আছে? অতপর সেই অন্ধকারের পথে কৃষ্ণকন্যার ফিরে যাওয়া।
রাজধানীর অমর একুশে বইমেলার ৪৫২-৪৫৩ নম্বর স্টল ‘দেশ পাবলিকেশন্স’ এ মাসজুড়ে পাওয়া যাবে বইটি। এছাড়া ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত বইমেলায় ২০-২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই রোহিঙ্গা উপাখ্যান ‘নাফ তীরের কন্যা’ বইটি পাওয়া যাবে।