মোঃ ইকবাল হোসেন
নারী ও শিশুর উন্নয়নে যারা নিবেদিতপ্রাণ সে মহৎ মানুষদের একজন আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার গুসি অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত ডরপ এর প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারী জেনারেল এএইচএম নোমান। অন্যদিকে তিনি সম্প্রতি তিনি মাতৃত্বকালীন ভাতা ও স্বপ্ন প্যাকেজের উদ্ভাবক। যা আজ সরকার প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করা বাংলাদেশের মায়েরা উপকৃত হতে শুরু করেছে। অথচ এমন একটি মহৎ কর্মের স্বপ্নদ্রষ্টা এই মানুষটি। উন্নয়ন পাগল এই মানুষটি নিজ সংস্থা ডরপ এর মাধ্যমে নানা কর্মসূচী বাস্তবায়নের মাধ্যমে দারিদ্রপীড়িতদের পাশেপাশে থেকেছেন। তাদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন। বলা যায়, বঞ্চিত শ্রেণির সামাজিক-আর্থিক উন্নয়নে এ এক বিরল দৃষ্টান্ত।
তিনি প্রায়ই যাদের জন্য কাজ করছেন, তাদের অগ্রসরতার মাপকাঠি সচক্ষে দেখতে যান। সম্প্রতি তিনি ভোলার নদী ভাঙ্গণ প্রবণ দৌলৎখান উপজেলার চর খলিফা ইউনিয়নের পশ্চিমকলাকোপা গ্রামের কমিউনিটি ও ইউনিক স্কুল কমিটির সদস্যদের সাথে সাক্ষাতে এবং এলাকার তাঁর জন্মস্থান উপজেলার উন্নয়ন কার্যক্রম দেখতে যান।
লোকজন জানান এ স্কুল প্রতিষ্ঠার ফলে যে সব অগ্রগতি হয়েছে তা বলে শেষ করা যাবে না, বিশেষ করে এ এলাকার কাছাকাছি কোন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। ২০০৭ সালে ঢাকা আহসানিয়া মিশন আওতায় র্ডপ ইউনিক স্কুল প্রতিষ্ঠার ফলে এলাকার দরিদ্র ও অধিকার বঞ্চিত ঝড়ে পড়া এবং স্কুল বহির্ভূত শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের সুযোগ হয়েছে। এ স্কুল না থাকলে এ পর্যায়ে পড়াশুনা করে আসতে পারতো না। এটা এলাকার জন্য বিরাট প্রাপ্তি।
মোঃ আবুল কালাম, নসু মিয়া, আঃ গণি ও মোঃ জাকির হোসেন, দলীল উদ্দিন মিয়া রাড়ী- এএইচএম নোমান’র সাথে কুশল বিনিময় শেষে অভিভাবকদের পক্ষে জান্নাত বেগম জানান, এ স্কুল প্রতিষ্ঠার ফলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি অভিভাবক সভার মাধ্যমে পারিবারিক শিক্ষা যেমন: শিশুর যত্ন ও বিকাশ, কৈশোরকাল ও কৈশোরকালীন শিক্ষা, মাতৃত্বকালীন যত্ন ও নিরাপদ মাতৃত্ব, প্রাথমিক স্বাস্থ্য শিক্ষা, নিরাপদ পানি ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, পুষ্টি ও সামাজিক সচেনতা, নারী ও শিশু সুরক্ষা অধিকার ইত্যাদি পেয়েছি।
এছাড়া শ্রেণি ও শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় স্কুলের পাঠের সহায়ক যেমন : ছড়া, গান, কবিতা আবৃতি, কৌতুক, দেশাত্মবোধক গান ইত্যাদির এখানে আযোজন রয়েছে। স্কুল থেকে সরাসরি পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী শিক্ষার্থী ও বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে দেখা যায় যে, ১৪ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন কলেজ মাদ্রাসায় উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে অধ্যায়ণরত এবং ১ জন বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশে কর্মরত।
এদের মধ্যে ১. মোঃ হাসিব, পিতা মোঃ মিলন ডাক্তার বর্তমানে দৌলতখান আবি আব্দুল্যাহ সরকারী কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যায়ণরত, ২. রুমা বেগম, পিতা মোঃ আঃ ওয়াদুদ ৩. জাফরিন আক্তার, পিতা মোঃ জাকির, ৪. শিমূল আক্তার, পিতা মৃত মোঃ কাঞ্চন, এঁরা সবাই দৌলতখান মহিলা কলেজে মানবিক বিভাগে অধ্যয়ণরত। এরা সবাই তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করেন।
মাতৃত্বকালীন ভাতা কেন্দ্রিক স্বপ্ন প্যাকেজপ্রাপ্ত মায়েরা কেমন আছেন, তিনি তারও খোঁজখবর নেন।
মা’দের অগ্রযাত্রা দেখেও তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। মায়েদের কেস স্টাডি এরকম- এক. তিন বার নদী ভাঙ্গায় ক্ষত বিক্ষত স্বপ্ন মা মিনারা বেগম, স্বামী মৃত মোঃ আব্দুল্ল্যাহ, গ্রাম চরসূভী, ইউনিয়ন সৈয়দপূর, উপজেলা দৌলতখাঁন, জেলাঃ ভোলা। ২০০৯-১০ অর্থ বছরে মাতৃত্বকালীন ভাতার আওতাভুক্ত হন। ২০১১ সালে তার স্বামীঃ কর্মরত অবস্থায় চট্টগ্রামে এক সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যান। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে স্বপ্ন প্যাকেজের আওতাভুক্ত হয়ে একটি বসত ঘর, একটি স্বাস্থ্যসম্মত লেট্রিন, একটি গাভী গরু পান। এছাড়া মহিলা ও শিশু বিষয়ক কর্মকর্তার মাধ্যমে স্বাস্থ্য পুষ্টি ও জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্ড এবং শিশুদের জন্য শিক্ষা ও বিনোদন কার্ড প্রাপ্ত হন। তিনি তাঁর অবস্থার কথা বলতে গিয়ে এক পর্যায়ে কেঁদে ফেলেন এবং বলেন, ‘আমি এক সময় অনেক কষ্টে দিন অতিবাহিত করেছি, স্বপ্ন প্যাকেজ পাওয়ার পর আমি গরুর দুধ বিক্রি ও সেলাই মেশিন দ্বারা সেলাই করে মাসিক কম বেশী ১৫,০০০ টাকার মত আয় করছি। ইতোমধ্যে আয় দিয়ে একটি সেলাই মেশিন কিনেছি ও তা চালাই। এর মাধ্যমে সংসার পরিচালনা করে দুই এতিম শিশুদের (গাড়ী চালক স্বামী সড়ক দূঘটনায় চট্টগ্রামে কর্তব্যরত অবস্থায় মারা যান) নিয়ে এখন আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছি। দুই জনই স্কুলে যায়। স্বাস্থ্য কার্ড ব্যবহার কার্যকারিতা নিয়ে জিজ্ঞেস করলে, মিনারা বলেন আল্লাহ না করুক এ যাবৎ কোন অসুখ হয় নাই। শিক্ষা কার্ড সম্পর্কে বলেন স্কুল হেড মাষ্টার শিশুদেরকে সহযোগীতার ভাল দৃষ্টিতে দেখেন। আমি স্যারের প্রতি এবং সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। এ ভাতা এবং স্বপ্ন প্যাকেজ উদ্ভাবন করায় স্যারের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি, আল্লাহ যেন স্যারকে অনেক নেক হায়াৎ দান করেন।
দুই. একই গ্রামের মাহিনুর বেগম, স্বামীঃ মোঃ আজাদ, ২০০৯-১০ অর্থ বছরে মাতৃত্বকালীন ভাতার আওতাভুক্ত হন, তার সাথে সাক্ষাত করে বর্তমান অবস্থার কথা জানতে চান। তিনি বলেন, ‘এক সময় আমাদের মূল বাড়ী নদী গর্ভে বিলিন হওয়ার পর নিজের কোন বসত ঘর ছিল না। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে স্বপ্ন প্যাকেজের আওতাভুক্ত হয়ে একটি বসত ঘর, একটি স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন, একটি গরু পাই। গাভীটি বাচ্চা দেয়ার অপেক্ষায় আছে যা আমার এবং আমার পরিবারের জীবিকা নির্বাহের বিরাট হাতিয়ার হয়েছে, এর থেকে আয় রোজগার করে আমরা এখন অনেক ভালো আছি’।
ফিল্ড পরিদর্শন শেষে ঢাকা কাঁঠাল বাগান থেকে আগত আলহাজ্ব খন্দকার মোঃ ইউসুফ, ইউনিক প্রকল্পের টিউটর এবং স্বপ্ন প্যাকেজ প্রকল্প স্টাফদের নিয়ে উপজেলা কৃষি ট্রেনিং সেন্টারে এক মত বিনিময় সভা করেন। এক পর্যায় ইউনিক স্কুলের টিউটরদের কাছে মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রাপ্ত মায়েদের খোঁজ জানতে চাইলে এবং বলেন এখন হতে স্বপ্ন প্রকল্পের সুফিয়া বেগম এবং উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা থেকে মায়েদের তালিকা নিয়ে কেন্দ্র পার্শ্ববর্তী মায়েদের তথ্য স্কুলে রাখবেন এবং মায়েদের খোঁজখবর নিবেন।
অতিথিপরায়ণ দৌলতখাঁন বাসীদের মধ্যে স্কুলশিক্ষিকা সাবিকুন নাহার’র বাড়ীতে পাক্কন পিঠা এবং পথিমধ্যে জনাব নোমান’এর আত্মীয় সুলতান উদ্দিন হাওলাদার বাড়ীতে দেলু মিয়া এবং বাচ্চু মিয়ার ঘরে আপ্যায়ন ও আন্তরিকতায় মুগ্ধ হন।
মোঃ ইকবাল হোসেন, এরিয়া ম্যানেজার, ডরপ ইউনিক, দৌলতখাঁন, ভোলা।