আতাতুর্ক কামাল পাশা
ষাটের দশকের প্রতিভাধর লেখক যাযাবর ওসমান। ১৯৫৫ সালে তাঁর কবিতা প্রথম প্রকাশ হয়। ষাটের দশকে তিনি বাংলা ও ইংরেজিতে এক অনবদ্য কবি হিসেবে পাঠক সমাজের কাছে গৃহীত হতে থাকেন।
গত শতকের আশি সাল পর্যন্ত জাতীয় দৈনিকগুলোতে মোটামুটি লেখালেখি চালিয়ে যান। পরবর্তীতে শারিরীক মন্দাবস্থার কারণে বাসায় বসে তাঁর নিয়মিত সাহিত্যচর্চা করতে থাকেন। মাইকেলের পর তিনিই প্রথম বাঙালি যিনি বাংলা ও ইংরেজিতে দু’টি মহাকাব্য স্বার্থকভাবে রচনা করেন। আজ তাঁর আটাত্তরতম জন্মবার্ষিকী। অর্থাৎ ঊনসত্তরে পা রাখলেন তিনি। আজকের দিনে তিনি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলার সাপখোলা গ্রামে ১৯৪০ সালে এক সম্ভ্রান্ত সিকদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
যাযাবর ওসমানের বেশ ছেলেবেলাতেই বিদ্যালয় মহাবিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রত্রিকাগুলোতেই সাহিত্য বিশেষ করে কবিতার হাতেখড়ি। পাকিস্তানের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে ও ১৯৭২ সালে পেশোয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পড়ার সময়ে তিনি জাতীয় দৈনিকগুলোতে লেখালেখি করতে থাকেন।
কর্মজীবনে ১৯৬৩ সালে শ্রীরামপুর হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে রাওয়ালপিন্ডির চাকলালা কেন্দ্রীয় সরকারী বালক-বালিকা বিদ্যালয়ে সিনিয়র ইংলিশ টিচার হিসেবে যোগ দেন। পরে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। সেখান থেকেই অবসর নেন।
যাযাবর ওসমানের অধিকাংশ লেখার বক্তব্যই হচ্ছে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ মূলনীতির ওপর অবিচল আস্থা। তিনি পাকিস্তানে বসেই আইয়ূববিরোধী তথা গণতন্ত্রের প্রতি সংহতি নিয়ে বিদ্রোহের কবিতা লিখতে থাকেন। দেশ স্বাধীন হবার পর বাংলাদেশে ফিরে এসে কাস্টমস্ এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগে যোগ দেন।
এ সময় তার অজস্র কবিতা ও প্রবন্ধ প্রকাশ হতে থাকে সাপ্তাহিক ঢাকা, বাংলার বাণী, যুগান্তর, জনকণ্ঠ, দৈনিক ঢাকা, অবজারভার, মর্নিং নিউজসহ প্রায় সব জাতীয় দৈনিকে। আশির দশকে তাঁর সোনালী দিগন্তের প্রতীক্ষায় (১৯৮৫), যুদ্ধ নয় শান্তি (১৯৮৭), হাভাতের প্রার্থনা (১৯৮৮), সংবর্তধ্বনি (১৯৯০) কাব্যগুলো পাঠকদের অমিত প্রশংসা কুড়োয়।
২০০০ সালে তাঁর এক অমর মহাকাব্য ‘রাহুমুক্তি’ প্রকাশিত হলে তিনি মহাকবি আখ্যায় ভূষিত হন। বাংলায় তিনিই প্রথম কবি যিনি মাইকেল মধুসুদন দত্তের পর মহাকাব্য লেখেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ ও তারপর শুরু হওয়া বাংলাদেশের বিশাল স্বাধীনতা সংগ্রামকে নিয়ে লেখা এ মহাকাব্য। সম্প্রতি এ বছরের ফেব্রুয়ারির বইমেলায় মহাকবির আরো একটি মহাকাব্য প্রকাশ পেয়েছে। ৩৫,০০০ পংক্তির এ বিশাল মহাকাব্যটি আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসকে নিয়ে লেখা ইংরেজি মহাকাব্য Democracy Wins । বাঙালির কাছে এটি একটি গৌরবের বিষয় যে বিশাল আমেরিকার দু’শ’ বছরের ইতিহাসে কেউ তাদের মুক্তিসংগ্রাম নিয়ে তেমন কোন দীর্ঘ কবিতা লিখল না সেখানে যাযাবর ওসমান তাদের গণতন্থ ও স্বাধীনতার সংগ্রামকে নিয়ে মহাকাব্য লিখলেন। মহাকাব্যটিও দেশে বিদেশে কবির জন্য এনে দিয়েছে অজস্র সম্মাননা।
সামগ্রিক কাব্যচর্চা ও সাহিত্যকীর্তির জন্য তিনি পেয়েছেন মাইকেল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৫), শেরে বাংলা স্বর্ণপদক (১৯৯১), স্বরবীথি থিয়েটার পুরস্কার (১৯৯২), চলন্তিকা সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯২), পিসি সরকার পুরস্কার (১৯৯৩), চিত্রালী পাঠক পাঠিকা সংসদ পুরস্কার (১৯৯৩), সাহিত্যিক আবিদ হোসেন পুরস্কার (২০১১), পূর্ণিমা বাসর সাহিত্য পুরস্কার (২০১৩)।