হাসান হাফিজ
‘মুক্তিযুদ্ধে আমি অস্ত্র ধরতে পারিনি। এই ভাস্কর্য নির্মাণ করতে গিয়ে দুই হাত রক্তাক্ত করে দেশের প্রতি আমার ঋণ শোধ করলাম।’ বলেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলাভবন প্রাঙ্গণের ‘অপরাজেয় বাংলা’ ভাস্কর্যের স্রষ্টা সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ।
ভাস্কর খালিদ ৭৫ বছর বয়সে চিরবিদায় নেন গত বছর ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের ২০ মে। এই ২০ মে তাঁর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। তাঁকে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করি। মহান আল্লাহ তাঁকে চিরশান্তি দান করুন।
ভাস্কর্যটির নির্মাণ পর্যায়ে এই মহান শিল্পীর সঙ্গে প্রীতিমধুর সৌহার্দ্য, সখ্য ছিল আমার। ১৯৭৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর এই ভাস্কর্যের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছিল। ওই উপলক্ষে ডাকসু (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) যে স্যুভেনিরটি বের করে, তার একমাত্র লেখাটি লিখেছিলাম আমি। দৈনিক বাংলার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ছিলাম তখন।
ওই স্যুভেনির সম্পাদনা করেছে স্নেহভাজন ড.আলী রীয়াজ, সে ছিল ডাকসু’র সাহিত্য সম্পাদক। রীয়াজ ওরফে বিজু বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। স্যুভেনিরে প্রকাশিত সবগুলো ছবি ছিল আশফাক মুনীরের (মিশুক মুনীর নামেই বেশি পরিচিত, মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় ওঁর অকালমৃত্যু ঘটে কয়েক বছর আগে) তোলা।
২০১৬ সালের ১৯ ডিসেম্বর মিশুকের তোলা ‘অপরাজেয় বাংলা’ ভাস্কর্যের নির্মাণকালীন তোলা অনেকগুলো ছবি নিয়ে একটি বইয়ের প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সেমিনার কক্ষে ছিল বেঙ্গল পাবলিকেশন্স প্রকাশিত বইটির প্রকাশনা উৎসব। ফটো এ্যালবামটির নাম: ‘মন জানালা’ এ উইনডো ইনটু দ্য হার্ট। মূলত মিশুকের স্ত্রী মঞ্জুলী কাজী ও মিশুকের ছোট ভাই আসিফ মুনীর ওরফে তন্ময়ের চেষ্টা ও উদ্যমে বইটি আলোর মুখ দেখতে পায়। ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত বক্তাদের মধ্যে আমিও ছিলাম একজন।
(ছবিতে বাঁ থেকে- ভাস্কর সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ, ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আআমস আরেফিন সিদ্দিক, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, ডাকসুর সাবেক জিএস ও ভিপি আখতারউজ্জামান এবং আমি।)
এই ভাস্কর্যের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের ৩৮ বছর পর, মৃত্যুর মাস ছয়েক আগে শিল্পীর উপলব্ধি, অনুভূতি কেমন ছিল? ফটো এ্যালবাম ‘মন জানালা’য় বলছেন শিল্পী- “… খুব প্রেসার নিতে হয়েছে। সৃষ্টির যন্ত্রণা ছিল অনেক, কিন্তু সেই যন্ত্রণাই আমাকে এই অসম্ভব কাজ করতে আমাকে সাহায্য করেছে। কংক্রিট ছিল অসম্ভব শক্ত। দিনের বেলায় কাজ করতে হতো। এর মাঝে দুর্জনেরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে আর ডাকসুর ছেলেরা আমায় সর্বক্ষণ পাহারা দিয়ে রেখেছে।…”