মেট্রো নিউজ : চতুর্দিকে মেঘনা নদীবেষ্টিত সবুজ-শ্যামল ঘেরা মনপুরা। সুবিশাল নদী , চতুর্দিকে বেড়ীবাঁধ, ধানের ক্ষেত, বিশাল ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছের বাগানে সমৃদ্ধ। মনপুরা উপজেলা দেশের মানুষের কাছে যেমন আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় জায়গা তেমনি বিদেশিদের কাছেও।
বাংলাদেশের বৃহওম দ্বীপ ভোলা জেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলা ভূমি রূপালী দ্বীপ মনপুরা। এ দ্বীপে সকালবেলার সূর্য যেমন হাসতে হাসতে পূর্বদিকে ডিমের লাল কুসুমের মত উদিত হতে দেখা যায়, তেমনি বিকেলবেলাতে আকাশের সিঁড়ি বেয়ে লাল আভা ছড়াতে ছড়াতে পশ্চিম আকাশে মুখ লুকায়।
এখানে বিশেষ বিশেষ কিছু খাবার লক্ষ্য করা যায়। শীতের হাঁস, মহিষের দুধের দধি, টাটকা ইলিশ, বড় কই, মাগুর, কোরাল, বোয়াল ও গলদা চিংড়ি। মেঘনা নদী থেকে ধরে আনা টাটকা ইলিশ ও চর থেকে আনা কাঁচা দুধের স্বাদই আলাদা। ঐতিহাসিক বেভারিজ মনপুরার নামকরণ নিয়ে লিখেছেন, জনৈক মনগাজি নামের ব্যক্তি সে সময়ের জমিদার থেকে মনপুরা জমি লিজ নেন অষ্টাদশ শতাব্দীর যুগে । তখন তার নামানুসারে এ দ্বীপের নামকরণ হয় মনপুরা। জনৈক ব্যক্তিদের মতে মনগাজি নামের লোকটি বাঘের থাবায় প্রাণ হারালে তখন তার নামানুসারে নামকরণ হয় মনপুরা। স্থানীয়দের মতে এখানকার খাটি দুধ খেয়ে ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলা দেখে মানুষের মন ভরে যেত। এজন্য এর নামকরণ করা হয় মনপুরা।
ভোলা জেলা সদর থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে মেঘনার মোহনায় ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মনপুরা উপজেলায় লক্ষাধিক লোকের বসবাস। মিয়া জমিরশাহ’র স্মৃতি বিজড়িত মনপুরা দ্বীপ অতি প্রাচীন। একসময় এ দ্বীপে পর্তুগীজদের আস্তানা ছিল। তারই নিদর্শন হিসেবে দেখতে পাওয়া যায় লম্বা লোমওয়ালা কুকুর।
মনপুরার সবচেয়ে আকর্ষণীয় ম্যানগ্রোভ বাগান। ছোট বড় ১০টি চর ও বনবিভাগের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে সবুজ বিপ্লব। মাইলের পর মাইল সবুজ বৃক্ষরাজি বিশাল মনপুরাকে সাজিয়েছে সবুজের সমারোহে। শীত মৌসুমে শত শত পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকে। এই চরগুলো হলো চরতাজাম্মুল, চর পাতালিয়া, চর পিয়াল, চরনিজাম, চর সামসুউদ্দিন, লালচর, ডাল চর, কলাতলীর চর ইত্যাদি। মনপুরা সদর থেকে দুই কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব পাশে গড়ে উঠেছে মনপুরা ফিশারিজ লিঃ। প্রায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ২১০ একর জমিতে গড়ে উঠা খামার বাড়ীটি গড়ে উঠতে পারে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে।
মন চাইলে যে কেউ মনপুরা আসতে বা যেতে পরবে না। এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে রুটিন মাফিক। প্রতিদিন ঢাকা থেকে একটি লঞ্চ বিকাল সাড়ে ৫টার সময় হাতিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে মনপুরা হয়ে পরদিন সকাল ৯টার সময় হাতিয়া পৌছে। ঐ লঞ্চটি আবার হাতিয়া থেকে ছাড়ে দুপুর ১২ টায়। মনপুরাতে আসে দুপুর ১টায় এবং ১ ঘণ্টা যাত্রা বিরতি থাকে রামনেওয়াজ লঞ্চঘাটে। মনপুরার মানুষ যে লঞ্চে করে ঢাকা থেকে মনপুরা আসেন আবার ঐ একই লঞ্চে করে ঢাকায় চলে যান। এছাড়া ঢাকা কিংবা বরিশাল থেকে ভোলা হয়ে তজুমুদ্দিন সি-ট্রাক ঘাট থেকে মনপুরা যাওয়া যায়।