মার্চ থেকে জুন ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ রুক্ষ রুদ্র বিরূপ হয়ে উঠেছে আবহাওয়া-জলবায়ু। খরার দহনে পুড়ছে মাঠ-ঘাট খাল-বিল-বাওর চরাচর। চারদিকে পানির অভাব প্রকট। মাটির নিচে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। নদ-নদীগুলো শীর্ণ ক্ষীণ। ন্যুনতম স্বাভাবিক প্রবাহ হারিয়ে নদীর পানি তলায় গিয়ে ঠেকেছে।

আবহাওয়া-জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক আবহাওয়া নেটওয়ার্ক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ এবং আশপাশ অঞ্চলে চলতি বছর টানা দুর্যোগের ঘনঘটার আলামত দেখা দিয়েছে। ভয়াবহ খরা, অসহনীয় তাপপ্রবাহ, অতিমাত্রায় বজ্রপাত, হঠাৎ অতিবৃষ্টির কারণে এলাকাওয়ারি বন্যা ও সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে চলতি মার্চ মাস থেকে আগামী জুন পর্যন্ত।

আবহাওয়ায় এবার নতুন করে ‘এল নিনো’ অবস্থা তৈরি রয়েছে। এরফলে বৈরী আবহাওয়ার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলজুড়ে। এরআগে পর্যন্ত আবহাওয়া একটা ‘নিরপেক্ষ’ অর্থাৎ চরম ভাবাপন্ন নয় এমন অবস্থা বিরাজ করছিল। ‘এল নিনো’ হচ্ছে বৃষ্টিপাতের আবহ রোধকারী আবহাওয়া-জলবায়ুর বিশেষ অবস্থা।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) আবহাওয়া-জলবায়ু ও পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. রিয়াজ আখতার মলি­ক বলেন, একটি ‘এল নিনো’ অবস্থা শুরু হয়েছে। এটি দুর্বল প্রকৃতির। যা আগামী জুন মাস পর্যন্ত বিরাজমান থাকতে পারে। আবহাওয়ায় এর সম্ভাব্য প্রভাব হতে পারে সীমিত। তিনি বলেন, ‘এল নিনো’ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কয়েকটি বিষয়ে পূর্বাভাস প্রদান করতে পারে। যেমন- গত বছরের চেয়ে চলতি বছর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। বন্যার আশঙ্কা কম অথবা বন্যা নাও হতে পারে। প্রাক-বর্ষা (বর্ষার মৌসুমী বায়ু আগমনের পূর্বে) সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় উপক‚লে আঘাত হানতে পারে।
রিয়াজ আখতার বলেন, চলতি বছরে বৃষ্টিপাত কেমন হবে তা এ মুহূর্তে সঠিক পূর্বাভাস প্রদান করা সম্ভব নয়। তবে ‘এল নিনো’ অবস্থা যদি বজায় থাকে তাহলে স্বাভাবিক গড় বৃষ্টিপাতের চেয়ে দেশে এবার বর্ষণ হতে পারে কম। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান তথা উপমহাদেশ এবং এর সংলগ্ন মিয়ানমার, চীন, ইন্দোনেশিয়া অবধি ‘এল নিনো’ অবস্থা তৈরি হয়েছে। এ কারণে খরা, ঝড়, বন্যা, বজ্রঝড়-বজ্রপাত ও তাপপ্রবাহের পদধ্বনি জোরালো হচ্ছে। ‘এল নিনো’ অবস্থার কারণে প্রশান্ত মহসাগরের উপরতলে বইছে উতপ্ত স্রোতধারা ও বায়ুপ্রবাহ। অস্ট্রেলিয়ার ব্যুরো অব মেটেরোলজি, যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাইমেট প্রেডিকশন সেন্টার, জাপানের মেটেরোলজিকাল এজেন্সিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আহাওয়া-জলবায়ু পর্যবেক্ষণ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান ‘এল নিনো’ অবস্থা তৈরি হওয়ার আলামত পেয়েছে।

এদিকে আবহাওয়া বিভাগের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানা গেছে, আগামী এপ্রিল (চৈত্র-বৈশাখ) মাসে বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ২টি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এরমধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এ মাসে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত ২ থেকে ৩দিন বজ্রপাতের সাথে মাঝারি থেকে প্রবল আকারে কালবৈশাখী ঝড় বা বজ্রঝড় এবং দেশের অন্যত্র ৪ থেকে ৫ দিন হালকা থেকে মাঝারি আকারে কালবৈশাখী ঝড় বা বজ্রঝড়, বজ্রপাত হতে পারে। এপ্রিলে দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি তীব্র ধরনের তাপপ্রবাহ (৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঊর্ধ্বে) এবং অন্যত্র ১ থেকে ২টি মৃদু (৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সে.) থেকে মাঝারি ধরনের (৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সে.) তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

আগামী মে মাসে বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ২টি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এরমধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। মে মাসে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ২ থেকে ৩ দিন মাঝারি থেকে তীব্র আকারে কালবৈশাখী ঝড় বা বজ্রঝড় ও দেশের অন্যত্র ৩ থেকে ৪ দিন হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কালবৈশাখী ঝড় বা বজ্রঝড় সংঘটিত হতে পারে। মে মাসে দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ১ থেকে ২টি তীব্র ধরনের তাপপ্রবাহ (৪০ ডিগ্রির ঊর্ধ্বে) এবং দেশের অন্যত্র ২ থেকে ৩টি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

 

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts