সাভার প্রতিনিধি: আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়ন বেরণ এলাকায় বসবাস সংখ্যালঘু মন্ডল পরিবারের। এখানের দিয়াখালী মৌজায় ৯০ নং খতিয়ানে ১৪৩ দাগে তাদের বসবাস।
১৯২৬ থেকে ১৯৮৭ সালের মধ্যে মোট ৫টি দলিলে সাভার সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে রেজিস্ট্রির মাধ্যমে ক্রয়সূত্রে এখানের প্রায় ১১ বিঘা জমির মালিক হন জয় নারায়ণ মন্ডল (পিতা- নন্দ কিশোর মন্ডল)। জমির মালিক থাকাকালিন তিনি মারা গেলে পৈত্রিক সূত্রে দুই ছেলে ধীরেন্দ্র চন্দ্র মন্ডল ও মনিন্দ্র চন্দ্র মন্ডল মালিক হন। এর মধ্যে মনিন্দ্র চন্দ্র মন্ডল মারা গেলে তার একমাত্র ছেলে গৌরঙ্গ চন্দ্র মন্ডল জমির একটি অংশের মালিকানা মূলে কিছু সম্পত্তি বিক্রি করেন। এর সুত্র ধরে এলাকার কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যু এই সম্পত্তিতে ঢুকে পড়েন। গৌরঙ্গের নাম ব্যবহার করে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে দলিল বানিয়ে একটি প্রভাবশালী চক্রের কাছে ধীরেন্দ্রর জমি বিক্রি করে দেন।
এভাবেই ঘুম হারাম হয়ে যায় সংখ্যালঘু পরিবারটির। পৈত্রিক সম্পত্তিতে বসবাস তাদের জন্য এখন জীবনের হুমকি হয়ে উঠেছে। জমি বেদখল ও উচ্ছেদের পায়তারায় সন্ত্রাসী চক্র তাদের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। খুন, গুম ও অপহরণের হুমকিতে সবসময়ই ভীত-সন্ত্রস্থ থাকতে হচ্ছে তাদের। চোখেমুখে এখন অন্ধকার দেখছে এই সংখ্যালঘু পরিবার। তার কার কাছে যাবে সাহয্যের জন্য, তারও ভরসা পাচ্ছেনা। তাদের ধারণা, যে কোন সময়ই ভূমিদস্যু চক্রের হাতে খুন হয়ে যেতে পারেন তারা।
এব্যাপারে ন্যায় বিচার চেয়ে থানা ও কোর্টে মামলা করলেও কোন প্রতিকার পায়নি এই সংখ্যালঘু পরিবার। সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে তাদের।
গৌরঙ্গ চন্দ্র মন্ডল বলেন, ‘আমার বাপ চাচারা দুই ভাই। আমার বাবা মারা যাওয়ার পর আমি ওয়ারিশ সূত্রে একটি অংশ বিক্রি করেছি। কিন্তু আমার চাচার এই সম্পত্তি থেকে কোন জমি বিক্রি করিনি। এগার বিঘার সাড়ে সাত বিঘা জমির মালিক চাচা ধীরেন্দ্র চন্দ্র মন্ডল। সে জমি থেকে এক শতাংশ জমিও কখনও তিনি বিক্রি করেননি। ধীরেন্দ্র চন্দ্র মন্ডলের নামে আর এস ও বিএস রেকর্ড ও করা আছে বলে তিনি দাবী করেন। কিন্তু এলাকার চিহ্নিত দুই ভূমিদস্যু জাল জালিয়াতির মাধ্যমে তাদের পরিবারে জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে বলে তিনি জানান।
সরেজমিনে গেলে স্থানীয় চিত্তরঞ্জন মন্ডল বলেন, প্রায় শত বছর ধরে এই জমি আমাদের দখলে ছিল। আমরা এসকল জমি চাষবাস করছি। ফলফলাদির গাছ লাগিয়ে ভোগ দখল করছি। বর্তমানে সোলেমান নামে এক ব্যাক্তি সাফা সুপার মাকেট সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছেন এবং হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। এর সাথে যোগ হয়েছে রূপায়ন নামে হাউজিং কোম্পানি। জোরপূর্বক বেদখল করার জন্য নানা ভাবে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে দলিল তৈরী করে একটি সংখ্যালঘু পরিবারকে উচ্ছেদের পায়তারা করছে। ঘটনাস্থলে একজন ফার্নিচার দোকানদার বলেন, আমি এখানে অনেক বছর থেকে আছি আমরা জানি এই সম্পত্তি ধীরেন্দ্র মন্ডলের। কিন্তু হঠাৎ সেলিম মন্ডল নামে একজন তার জমি দাবী করে দোকান তুলে ভাড়া চাইছে।
ধীরেন্দ্র চন্দ্র মন্ডল জানান, তিনি এখন আতঙ্কের মধ্যে জীবন-যাপন করছেন। সন্ত্রাসীরা যেভাবে তার পরিবারের প্রতি হুমকি দিয়ে আসছে এখন জীবন বাঁচার তাগিদে জমি উদ্ধারের জন্য আইনিভাবে লড়তেও পারছেন না তিনি। তবুও জাল জালিয়াতির বিরুদ্ধে দুইটি মামলা আদালতে দায়ের করেছেন একটি সি আর মামলা নং ৩৯২ /২০১৮, অপরটি মামলা দেওয়ানী মোকদ্দমা ৬৩৬/২০১৮। মামলার বিবাদীরা হলেন- ১. ফজলুল কবির ২. আলিমুদ্দিন ৩. মুসা মিয়া ৪. মোক্তার পলোয়ান ৫. আবু সাইদ খান ৬. সোনা মিয়া ৭. খন্দকার আনিসুর রহমান ৮. হানিফ মিয়া ৯. হাবিব উল্লাহ ১০. মঞ্জুর উদ্দিন ১১. সোলেমান মোল্লা ১২. মুনীর আহমেদ ১৩. আবুল হোসেন।
এই চক্রটি নানা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জমিটি দখলের পায়তারায় লিপ্ত রয়েছে। তাকে বিভিন্ন সময় মামলা তুলে নিতে সন্ত্রাসীরা নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে। এব্যাপারে থানায় অভিযোগ দিলে আমার সন্তানদের ক্ষতি করার হুমকি দেয়। যার কারণে আমরা স্থানীয় থানা পুলিশের কাছে ভয়ে যেতে পারেন না। অন্যদিকে জমি বেদখল দেওয়ার জন্য যারা উঠে পড়ে লেগেছে তারা বহু টাকার মালিক তাদের সাথে আর্থিকভাবে লড়ার মতো শক্তি সামর্থ্য তাদের নেই। তারা জমি বেদখল করতে গিয়ে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনী ও আনসার ব্যবহার করে তাদের পৈত্রিক জমি বেদখল করার পায়তারা করছে।
তিনি এসকল অবৈধ কর্মকান্ড ও ভূমিদস্যুতার বিরুদ্ধে আইনগত সহায়তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। তার পরিবারের নিরাপত্তার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও পুলিশ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ।
এব্যাপারে আশুলিয়া থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ শেখ রিজাউল হক দিপু বলেন, এঘটনা নিয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করা হয়েছে। অভিযোগ তদন্ত করে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসআলম/বিডিমেট্রোনিউজ