ওসি মোয়াজ্জেম কারাগারে

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির যৌনহয়রানি সংক্রান্ত জিজ্ঞাসাবাদের সময় আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবার অভিযোগে আইসিটি আইনে দায়ের করা মামলায় সোনাগাজীর সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

গতকাল রোববার বিকেলে ওসি মোয়াজ্জেমকে গ্রেপ্তারের পরে আজ সোমবার দুপুর পর্যন্ত তাকে শাহবাগ থানাতেই রাখা হয়েছিল। সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে সোনাগাজী থানা পুলিশের একটি প্রতিনিধি দলের কাছে ওসি মোয়াজ্জেমকে হস্তান্তর করে শাহবাগ থানা পুলিশ।

সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সোনাগাজী থানা পুলিশের কাছে ওসি মোয়াজ্জেমকে হস্তান্তর করা হলেও দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তাকে ওই থানাতেই রাখা হয়েছিল। থানার গেটে সকাল থেকেই ভিড় জমিয়েছিলেন গণমাধ্যম কর্মীরা। একই সঙ্গে যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে থানার ভেতরে ও বাইরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল।

গতকাল মোয়াজ্জেম হোসেন গ্রেপ্তার হলেও তার কোনো ছবি তুলতে পারেনি গনমাধ্যম কর্মীরা। তাই সবার ক্যামেরাই প্রস্তুত ছিল মোয়াজ্জেমের ছবি নিতে। সব কিছুর অবসান ঘটিয়ে বেলা ১২টার দিকে থানা শাহবাগ থানা থেকে কড়া নিরাপত্তা বলয়ে দ্রুত প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। এ সময় গণমাধ্যম কর্মীরা তার ছবি নিতে ছোটাছুটি করছিলেন। প্রিজন ভ্যানে তুলেই গাড়ি চলতে শুরু করে আদলতের পথে। আর পেছনে ছিল আইনশৃঙ্খলা ও গণমাধ্যম কর্মীদের গাড়ি।

সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ওসি মোয়াজ্জেমকে আদালত প্রাঙ্গণে হাজির করা হয়। তবে তাকে দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালতে হাজির করা হয়। এ  সময় পুলিশ কর্মকর্তার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর এ আদেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে আগামী ৩০ জুন এ মামলায় চার্জগঠনের শুনানির দিন ঠিক করেন এবং ওইদিন আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করতেও আদেশ দেন।

এর আগে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে প্রিজনভ্যানে করে মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনে হাজির করে পুলিশ। ওই সময় বিভিন্ন প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার ক্যামেরা উপস্থিতির জন্য তাকে প্রিজনভ্যান থেকে না নামিয়ে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে বেলা ২টার দিকে সিএমএম কোর্টের হাজতখানা থেকে আবার মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনে প্রিজনভ্যানে করে আনা হয়।

ফেনির মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার পর এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ উঠলে তাকে সোনাগাজী থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়।

নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার আগে গত ২৭ মার্চ নুসরাত যৌন হয়রানির অভিযোগ করলে পুলিশ নুসরাত ও আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ উদদ্দৌলাকে একসঙ্গে থানায় নিয়ে যায়। সেই সময় ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। যার ভিডিও ধারণ করা হয়। পরে তা প্রকাশ করা হয়।

প্রসঙ্গত, অধ্যক্ষ সিরাজ উদদ্দৌলার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা তুলে নেওয়ার জন্য গত ৬ এপ্রিল রাফিকে মুখোশ পরা চার থেকে পাঁচ জন চাপ প্রয়োগ করলে সে অস্বীকৃতি জানালে তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে গত ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯ টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে সে মারা যায়।

Print Friendly

Related Posts