বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ ২৩ জুন। ১৯৪৯ সালের এই দিনে পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনে এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে জন্ম নেয় ভারত উপমহাদেশের অন্যতম প্রচীনতম এ রাজনৈতিক সংগঠনটি। দীর্ঘ ৭০ বছর পার করে ৭১ বছরে আজ পা দিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী আওয়ামী লীগ। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে বর্তমানে দলের কাণ্ডারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গৌরবোজ্জ্বল ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর আগে সূর্য উদয় ক্ষণে কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এ ছাড়া বেলা ১১টায় টুঙ্গীপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের প্রতিনিধিরা শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন।
এছাড়া আগামীকাল সোমবার বিকাল ৪টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এবার জমকালো আয়োজনে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ। এ উপলক্ষে আজ রবিবার থেকে শুরু হয়ে মাসব্যাপী কর্মসূচি চলবে। রাজধানী ঢাকাসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলোকসজ্জা করা হয়েছে।
১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে লিখেছেন- ‘কোথাও হল বা জায়গা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত হুমায়ুন সাহেবের রোজ গার্ডেনের বাড়িতে সম্মেলনের কাজ শুরু হয়েছিল।’ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা (তৎকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগ) প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু আরও লিখেছেন- ‘আমি মনে করেছিলাম, পাকিস্তান হয়ে গেছে। সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের দরকার নাই। একটা অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হবে, যার একটা সুষ্ঠু ম্যানিফেস্টো থাকবে।’
জন্মের সময় (১৯৪৯ সালের ২৩ জুন) রোজ গার্ডেনে দলটির নাম দেয়া হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকসহ তৎকালীন রাজনৈতিক নেতারা সেদিন রোজ গার্ডেনে উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৫৫ সালে মুসলিম শব্দ বাদ দিয়ে শুধু ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’ রাখা হয়।
রাজনীতি বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদের ‘আওয়ামী লীগ-উত্থানপর্ব ১৯৪৮-১৯৭০’ বই থেকে জানা যায়, আওয়ামী লীগ নামটি দিয়েছিলেন দলের প্রথম সভাপতি মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। এরপর স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাখা হয়।
১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠাকালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী আওয়ামী লীগের সভাপতি, শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমান যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। পরের বছর ঢাকার ‘মুুকুল’ প্রেক্ষাগৃহে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ১৩ বছর সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন বঙ্গবন্ধু।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাজনৈতিক সংগ্রাম, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিজয়সহ বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে ’৫০-এর দশকেই আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠে পূর্ব পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল তথা প্রধান রাজনৈতিক শক্তি।
১৯৭১ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব দেয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে। পাকিস্তানে কারাবন্দি বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যূদয় ঘটে বাংলাদেশের। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা এবং ৩ নভেম্বর কারাগারের অভ্যন্তরে চার জাতীয় নেতাকে হত্যার পর সামরিক শাসনের নির্যাতন আর নিপীড়নের মধ্যে পড়ে ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটি।
মহিউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন, আবদুল মালেক উকিল ও আবদুর রাজ্জাক আওয়ামী লীগের ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ সময়ের দুঃসাহসী কাণ্ডারী। কঠিন হাতে তারা দলের হাল ধরে রেখেছেন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দলীয় সভাপতি হিসেবে দেশে ফিরে কয়েকভাগে বিভক্ত আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করেন, আন্দোলন শুরু করেন সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। পরবর্তীতে ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে টানা ৩বার বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ।
সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক
প্রতিষ্ঠার পর ৭০ বছর অতিক্রম করেছে দলটি। এই দীর্ঘ সময়ে ২০টি জাতীয় সম্মেলন হয়েছে আওয়ামী লীগের। এখন পর্যন্ত সভাপতি হয়েছেন সাতজন। এর মধ্যে বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনা সর্বোচ্চ আটবার, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী তিনবার করে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ দুইবার এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও আবদুল মালেক উকিল একবার করে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। আর সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিন একবার নির্বাচিত হয়েছেন দলের আহ্বায়ক।
এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ১০ জন। সবচেয়ে বেশি চারবার করে সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিল্লুর রহমান। এছাড়া তাজউদ্দিন আহমেদ তিনবার, আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দুইবার করে, প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক এবং আবদুল জলিল একবার করে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বর্তমানে দলটির সাধারণ সম্পাদক রয়েছেন ওবায়দুল কাদের।