জাহিদুল হক চন্দন: রাস্তার কাজ শেষ হয়েছে প্রায় একমাস হয়ে গেলেও এখনও চার সপ্তাহের বিল পায়নি অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচীর ৪৬ জন শ্রমিক। প্রথম চার সপ্তাহের কাজের বিল পেলেও আটকে গেছে বাকি বিল। ফলে দরিদ্র এসব শ্রমিকরা কাজের মজুরি পাবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে দিন পার করছে। অন্যদিকে ওই কর্মসূচীর আওতায়র রাস্তার নির্মাণ প্রকল্পের সভাপতিও পড়েছেন বিপাকে।
কাজের মজুরি প্রদানের জন্য সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) দরজায় কড়া নাড়ছেন প্রতিনিয়তই। কিন্তু তাতেও তেমন সুফল পাচ্ছেন না বলে জানান প্রকল্পের সভাপতি। এ দিকে প্রাপ্ত পারিশ্রমিকের টাকা পাওয়ার আশায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো শ্রমিক সকাল না হতেই হাজির ওই ইউপি সদস্যর বাড়িতে। কোনো কিছুই যেন কোনো সমাধান পাচ্ছেন না কর্মসূচীর শ্রমিকসহ খোদ মেম্বার নিজেই। তবে রাস্তাটি কাজ করার জন্য সয়ং চেয়ারম্যান নিজেই মহিলা ইউপি সদস্যকে প্রকল্পে সভাপতি হওয়ার কথা বলেন।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার আটিগ্রাম ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচিত মহিলা ইউপি সদস্য রহিমা বেগম। গেলো অর্থবছরে ওই ইউনিয়নের অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় মাটির রাস্তা নির্মাণের জন্য পাঁচটি প্রকল্পর নেয়া হয়। রাজনগর নতুন ব্রীজ হতে মোন্নাফের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পের কাজ নেন মহিলা ইউপি সদস্য। অনেক জল্পনা কল্পনার পরে ওই রাস্তাটি নির্মাণে কাজ শুরু করা হয়। স্থানীয় মোন্নাফ ও রাজিয়ার বাড়ির সীমানার মধ্যভাগ দিয়ে রাস্তা বের করতে অনেকটাই বেগ পেতে হয় প্রকল্পের সভাপতির। রাস্তার কাজ শুরু হওয়ার প্রথম চার সপ্তাহের কাজ শেষ হলে প্রকল্পের তালিকাভুক্ত শ্রমিকরা তাদের মুজুরি পান। বাকি চার সপ্তাহের কাজের মজুরি এখনও পায়নি ওই প্রকল্পের কাজের নিয়োজিত শ্রমিকেরা।
কেন শ্রমিকরা মজুরি পাচ্ছে না জানতে চাইলে ওই প্রকল্পের সভাপতি মহিলা ইউপি সদস্য জানান, রাস্তাটি নিয়ে প্রায় দুই বছরের বেশি মামলা চলেছে। আর মামলার আসামী চেয়ারম্যানসহ সব মেম্বরাও ছিলো। পরে মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। অনেকবার রাস্তাটি করার জন্য চেয়ারম্যান অনেক চেষ্টাও করেছে কিন্তু পারেন নাই। তবে ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় রাজনগর নতুন ব্রীজ থেকে মোন্নাফের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ প্রকল্প নেয়া হয়। এতে চেয়ারম্যান আমাকে প্রকল্পের সভাপতি হয়ে রাস্তার কাজর বাস্তবায়ন করতে বলেন।
তিনি আরো বলেন, প্রকল্পের শ্রমিকরা অনেক দরিদ্র ও গরীব। দিন আনে দিন খায়। খেটে খাওয়া এসব দিন মজুরের প্রাপ্ত মুজুরি না প্রদান করা হলে তারা বিপাকে পরবে। রাস্তাটির কাজ শেষ করতে আমাকে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। প্রথম চার সপ্তাহের কাজের মুজুরি শ্রমিকদের পরিশোধ করা হয়েছে। রাস্তার কাজ শেষ করার জন্য শ্রমিকদের দিয়ে এক সপ্তাহ বেশি কাজ করিয়েছি। কিন্তু পরের চার সপ্তাহের বিল আমাকে দেয়া হয়নি। আমি নিজের ব্যক্তিগত অর্থায়নে রাস্তার কাজ শেষ করেছি। এখন আমাকে বাকি চার সপ্তাহের বিল দেওয়া হচ্ছে না। অথচ অন্য চারটি প্রকল্পের বিল প্রদান করা হয়েছে। শুরুমাত্র আমার প্রকল্পের বিল সম্পূর্ণ প্রদান করা হয় নাই। বাকি বিল প্রদান না করা হলে শ্রমিকদের অপূরনীয় ক্ষতি হবে বলে জানান তিনি।
প্রকল্পে বিল না দেয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আটিগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান নুরে আলম সরকার বলেন, প্রথম চার সপ্তাহের কাজ শেষে শ্রমিকদের মুজুরি দেওয়া হয়েছে। শুনেছি পিআইও’র নিষেধের পরেও প্রকল্পের সভাপতি ওই রাস্তার কাজ করেছে। পরের চার সপ্তাহে রাস্তার কোনো কাজ করা হয়নি। এ জন্যই হয়তো বা বিল দেয়া হয়নি। তবে যদি শ্রমিকরা পরের চার সপ্তাহ কাজ করে থাকে তাহলে তাদের মুজুরি প্রদান করা উচিত বলেও জানান চেয়ারম্যান।
প্রথম চার সপ্তাহের মুজুরি শ্রমিকদের প্রদান করা হয়েছে। পরে রাস্তার কাজ না করাতে বাকি বিল প্রদান করা হয়নি। আর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন না করাতে প্রকল্পের অর্থ মাদার একাউন্টে ফেরত দেয়া হয়েছে বলে জানান মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তাবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আম্বিয়া শিল্পী।