বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ পবিত্র ঈদুল আজহার প্রধান জামাতের জন্য সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে জাতীয় ঈদগাহ ময়দান এখন পুরোপুরি প্রস্তুত। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী সোমবার এখানে সকাল ৮টায় পবিত্র ঈদুল আজহার প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তত্ত্বাবধানে ঈদগাহ ময়দানের প্যান্ডেল নির্মাণ, বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য ত্রিপল ও সামিয়ানা টাঙানো, অন্যান্য সাজ সজ্জাসহ সার্বিক প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে।
ডিএসসিসি’র অঞ্চল-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ শফিউল্লাহ শনিবার জানান, ঈদগাহে গতবারের মতো এবারও ৯০ হাজার থেকে এক লাখ মুসল্লির জন্য নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরমধ্যে পাঁচ থেকে ছয় হাজার নারী মুসল্লির জন্য আলাদাভাবে পর্দা দিয়ে নামাজ আদায়ের বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। তাঁদের জন্য আলাদা প্রবেশ পথেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যাবস্থাপক মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ২৫ জুলাই থেকে তারা ঈদগাহ ময়দান প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছেন। প্রথম দিন থেকে শনিবার পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ১শ’ থেকে ১শ’২০ জন শ্রমিক দিনরাত কাজ করেছেন। ৪৩ হাজার বাঁশ এবং প্রায় ৩শ’ মন রশি দিয়ে ঈদগাহ ময়দানে প্যান্ডেল নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শফিউল্লাহ বলেন, অজুর পানি ছাড়াও খাওয়ার পানির জন্য ওয়াসাকে বলা হয়েছে। এছাড়া কাকরাইল, মৎস্য ভবন, জাতীয় প্রেস ক্লাব, দোয়েল চত্বর ও এর আশপাশের র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সদস্যরা নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত থাকবে। ভিআইপি’র নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। সিটি কর্পোরেশন ছাড়াও আলাদা ক্যামেরা ও কন্ট্রোল রুম স্থাপন করবে ডিএমপি। নিরাপত্তা দেবে র্যাবের বোমা ডিসপোজাল ইউনিট এবং ডগ স্কোয়াড। ঈদগাহের চারপাশে সাদা পোশাকে গোয়েন্দারাও থাকবেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, জাতীয় ঈদগাহ ময়দানকে ঘিরে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের লোকজন কাজ করছেন। রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপের কারণে সুপ্রিম কোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের অজুখানা ও আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি মশা মারার ওষুধ ছিটানোসহ সব প্রস্তুতি এগিয়ে নিয়েছে ডিএসসিসি।
জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, বিদেশি কূটনৈতিক, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিসহ সাধারণ মুসল্লিরা ঈদের নামাজ আদায় করেন। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও ঈদুল ফিতরে লাখো মুসল্লি জাতীয় ঈদগাহে নামাজ আদায় করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে ঈদ জামাতকে ঘিরে জাতীয় ঈদগাহ ও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া। আজ শনিবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি একথা জানান। এসময় ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম, মো. আবদুল বাতেনসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ঈদের জামাতের জন্য জাতীয় ঈদগাহ ময়দান সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ঈদের দিন জাতীয় ঈদগাহে আগত মুসল্লিরা জায়নামাজ ও বৃষ্টি হলে ছাতা সঙ্গে নিয়ে ঈদগাহে আসতে পারবেন। এর বাইরে কোনো কিছু সঙ্গে নিয়ে আসা যাবে না। নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ মুসল্লিদের জায়নামাজ ও ছাতা তল্লাশির পর সেগুলো নিয়ে ঈদগাহে প্রবেশের অনুমতি দেবে ।
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ঈদ জামাতে দাহ্য পদার্থ থেকে শুরু করে ব্যাগ, ছুরি ও দিয়াশলাই নিয়েও আসা যাবে না। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আব্দুল গণি রোড, মৎস্য ভবন ও আশপাশের রাস্তা বন্ধ (বেরিকেড) থাকবে। মুসল্লিদের এখান দিয়ে পায়ে হেঁটে আসতে হবে। এই বেরিকেডের ভেতর ভিভিআইপি ছাড়া কোনো গাড়ি চলাচল করতে দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন কমিশনার।
তিনি বলেন, সড়কে তল্লাশির পরও ঈদগাহের প্রধান গেটে মুসল্লিদের দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে তল্লাশি করা হতে পারে। পুরো এলাকায় ইতোমধ্যেই সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। পুলিশের কন্ট্রোল রুম থেকে এসব ক্যামেরার ফুটেজ রিয়েল টাইম নজরদারি করা হবে।