বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ৪৪ বছর আগের সেই ভয়ংকর, বিভৎস ১৫ আগস্টকে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশ থেকে যখন বাইরে যাই, তখন সবছিলো, ফিরে এসে দেখি আমার আর কেউ নেই। তার মাত্র পনের দিন আগে আমি আর ছোট বোন রেহানা পরিবার ছেড়ে বিদেশে চলে গিয়েছিলাম। তাই হয়তো বেঁচে গিয়েছিলাম। কিন্তু এই বাঁচা বাঁচা না, এ বাঁচা মৃত্যুর চেয়ে কঠিন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযুুদ্ধের সময় নদীর পানি লাল হয়ে গিয়েছিল মানুষের রক্তে, মুক্তিযুদ্ধের ওই বছরে দেশে এক ফোটা ফসল ফলেনি, এক টাকাও রিজার্ভ ছিলো না, অন্যদিকে লাখ লাখ শহীদ পরিবারের হাহাকার। এই ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে জাতির পিতা মাত্র তিন বছর সাত মাসের মধ্যে দেশকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে গেছেন। তবে তখনও নানা রকমের ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। ওই সময় নানা মানুষ নানা রকমের সমালোচনা করে গেছেন। যারা সমালোচনা করেছেন, তারা আমার মনে হয় এখনো বুঝেও ওঠতে পারে না।’
‘‘যখন বাবাকে প্রথমে হত্যা করে। আমার মা জানতেন ওরা বাবাকে হত্যা করেছে, তবুও আমার মা তাদের কাছে জীবন ভিক্ষা চাননি। আমার মা ওদেরকে বলেছিলো বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছো সুতরাং আমাকেও হত্যা করো। এভাবেই সবাইকে হত্যা করার পর সবশেষে হত্যা করা হয় নিষ্পাপ রাসেলকে।
এই হত্যা প্রথমে সবাই ভেবেছিলেন একটি পরিবারের হত্যা। কিন্তু না, পরে সবাই বুঝতে পেরেছে একটি রাষ্ট্র চেতনাকে হত্যা করা হয়েছে। ১৫ আগস্টের পর তারা এই দেশকে ইসলামিক রিপাবলিক করেছিল। পরে তারা আর রাখতে পারেননি।’’
হত্যাকারীরা তার পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান আমাদের পরিবারে ঘনঘন আসতো এবং আসার সময় খালেদা জিয়াকে সাথে নিয়ে আসতেন যাতে উপরে ওঠে মায়ের সাথে গল্প করতে পারেন। মেজর ডালিম, মোস্তাক আহমেদ ওরা সবসময় আমাদের বাসায় আসতো।
‘‘বহু বছর পর হাইকোর্ট রায় দিয়েছে, অবৈধ ক্ষমতা দখল করা জিয়া ও এরশাদের শাসনকালকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে তারা এখন আর রাষ্ট্রপতি নয় বরং তারা অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী।
জিয়ার শাসনকালে দেশকে উন্নত না করে বরং দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র পরিণত করতে চেয়েছিল যাতে সবার কাছে প্রমাণ করতে পারে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীন হওয়া আমাদের ভুল ছিল। এর পরে আবারও ২০০০ সালে উন্নয়ন থেমে যায়।’’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় আসার পর এই দেশকে উন্নত করতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখন আমরা সব দিক দিয়ে পাকিস্তানের চেয়ে অনেক ভালো অবস্থান রয়েছি। আমরা প্রমাণ করেছি আমরা স্বাধীন হয়ে আমরা এই উন্নত করতে পেরেছি।’
‘‘বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন তা বাস্তবায়ন করতে জনগণের জীবন যাত্রার মান উন্নত করতে নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আমি সকল কষ্ট ব্যর্থ রেখেও জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে বলেছিলেন রক্ত দিয়ে হলেও এই দেশকে স্বাধীন করবো, আজকের দিনে পিতা তোমায় কথা দিলাম তোমার রক্তের ঋণ তোমার সোনার বাংলা নির্মাণ করেই আমরা শোধ করবো।’’
এর আগে আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৪৮ সাল থেকে মুক্তিযুদ্ধের আগ পর্যন্ত তার জীবনের প্রায় ১৩টি মূল্যবান বছর কারাগারে কাটিয়েছেন। আমি তাকে কাছ দেখেছি বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত করতে কতটা নিরলসভাবে পরিশ্রম করেছেন। কতটা কষ্ট করেছেন।
সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, জর্জ ওয়াশিংটনের দেশ, মার্টিন লুথারের দেশ এবং বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু টুড্রোর পুত্র বর্তমানে কানাডায় ক্ষমতায় রয়েছে। অথচ আমরা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফেরত আনতে পারছি না।