বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি নেওয়ার পরও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর দ্বিতীয় চেষ্টাও ঝুলে থাকল অনিশ্চয়তায়। তাদের দাবি, প্রত্যাবাসনের জন্য আগে তাদের নাগরিকত্ব দিতে হবে। জমি-জমা ও ভিটেমাটির দখল ফেরত দিতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। রাখাইনে তাদের সঙ্গে যা হয়েছে, সেজন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে মোমেন রোহিঙ্গাদের এই অনাগ্রহকে ‘দুঃখজনক’ বলেছেন। আর জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলেছে, রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছ্বায় ফেরা নিশ্চিত করতে হলে তাদের মধ্যে আস্থা তৈরির বিকল্প নেই।
রাখাইনের অধিবাসী হিসাবে ১০৩৭টি রোহিঙ্গা পরিবারের যে তালিকা মিয়ানমার পাঠিয়েছিল, সেটি ধরে প্রত্যাবাসনের জন্য গত কয়েকদিন ধরে তাদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন ইউএনএইচসিআর ও বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরা। ওই রোহিঙ্গাদের মধ্যে স্বেচ্ছায় যেতে আগ্রহীদের প্রথম দলকে বৃহস্পতিবার মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর কথা ছিল।
তালিকার ওই ১০৩৭টি পরিবারের ৩৫৪০ জন শরণার্থী থাকেন টেকনাফের ২৪, ২৬ ও ২৭ নম্বর ক্যাম্পে। সেখান থেকে তাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য শালবাগান এলাকার ক্যাম্পে রাখা ছিল তিনটি বাস, চারটি মাইক্রোবাস ও দুটি ট্রাক।
ফিরে যেতে আগ্রহী পরিবারগুলোকে প্রথমে নেওয়ার কথা ছিল ঘুমধুম কিংবা টেকনাফের ট্রানজিট ক্যাম্পে। সেখানে প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সেরে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করার কথা ছিল তাদের। সার্বিক নিরপত্তার জন্য পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের রাখা হয়েছিল সতর্ক অবস্থায়।
কিন্তু বিকাল ৪টায় দিনের সাক্ষাৎকার শেষ হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের কেউ মিয়ানমারে ফেরার জন্য গাড়িতে ওঠেননি। এমনকি জোর করে পাঠিয়ে দেওয়ার শঙ্কায় তাদের কেউ কেউ ক্যাম্পের ঘরে তালা দিয়ে দূরে সরে ছিলেন সারাদিন।
এই পরিস্থিতির মধ্যে দুপুরে টেকনাফের শালবাগান এলাকার ২৬ নম্বর ক্যাম্পে আসেন শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মধ্যস্থতায় থাকা চীন দূতাবাসের দুজন এবং মিয়ানমারের একজন প্রতিনিধি এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।
রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রত্যাবাসন কমিশনার কালাম বলেন, “বাংলাদেশের পক্ষে সব ধরনের প্রস্তুত সম্পন্ন হওয়ার পরও রোহিঙ্গাদের অনাগ্রহের কারণে তাদের মিয়ানমারে পাঠানো শুরু হয়নি। সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গারা বলেছে- তারা দেশে ফিরে যাবেন না।।”
প্রত্যাবাসনের জন্য তালিকায় থাকা ১০৩৭টি পরিবারের মধ্যে ৩৩৯টির একজন করে প্রতিনিধির সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত। তাদের সবাই বলেছেন, শর্ত পূরণ না হলে তারা মিয়ানমারে ফিরতে চান না।
এর আগে গতবছর ১৫ নভেম্বর একইভাবে প্রত্যাবাসন শুরুর সব প্রস্তুতি নিয়ে দিনভর অপেক্ষা করার পরও মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে রোহিঙ্গাদের মনে আস্থা তৈরি না হওয়ায় সেই চেষ্টা ভেস্তে যায়।
এবার চীন ও মিয়ানমারের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে তাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা হলেও দুই বছর ধরে চলা এ সঙ্কট সমাধানের দ্বিতীয় দফা চেষ্টাও দৃশত ব্যর্থ হল। তবে প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম এখনই একে ‘ব্যর্থ’ বলতে চান না। তিনি বলছেন, তাদের চেষ্টা চলবে।
“সব পরিবারের সাক্ষাৎকার চলবে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। আমাদের বাস-ট্রাকও রেডি থাকবে। কেউ যেতে চাইলে পাঠানো হবে। যতদিন পর্যন্ত সবার সাক্ষাৎকার নেওয়া শেষ হবে না, ততদিন পর্যন্ত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ব্যর্থ কিংবা অনিশ্চিত বলা যাবে না।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে মোমেনও হাল ছাড়তে রাজি নন। দুপুরে ঢাকায় নিজের কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা আশায় বুক বেঁধে আছি। সমস্যা মিয়ানমারের, সমাধানও তাদেরই করতে হবে। আমরা জোর করে কিছু করব না।”
নিজেদের দেশে ফিরে যেতে রোহিঙ্গাদের অনাগ্রহের বিষয়টিকে দুঃখজনক হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, “আমরা চেয়েছি আজ থেকে প্রক্রিয়াটা শুরু হোক। এরপরও আমরা প্রক্রিয়াটা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করব।”