জাহিদুল হক চন্দন, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: স্কুলছাত্রীকে চরিত্রহীনার অপবাদ দিয়ে গ্রাম্য শালিস বসানো হয়। গ্রাম্য শালিসে ওই স্কুলছাত্রী ও তার তিন বন্ধুকে লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়। জরিমানার টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় ওই স্কুলছাত্রী ও তার স্বজনদের মারপিট করেন গ্রাম্য শালিসের মাতাব্বরসহ এলাকার বখাটেরা।
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নে গত রোববার এ ঘটনা ঘটে। লজ্জা অপমানে ওই স্কুলছাত্রী আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়।একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে স্কুলছাত্রী।
এ ঘটনায় ওই স্কুলছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে হরিরামপুর থানায় ৯ জনকে আসামি করে মামলা করেন। পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করলেও আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন তারা। আর ধরাছোঁয়ার বাইরে কথিত মাতব্বরসহ গ্রাম্য শালিসের মূল হোতারা।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা জানান, স্থানীয় একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে লেখাপাড়া করে তার মেয়ে। প্রায়ই এলাকার রানা, হৃদয়, সজিম, কালাম, আসিফ ও রাকিবসহ কিছু বখাটে তার মেয়েকে উত্যক্ত করত।
গত রোববার সন্ধ্যায় তিন বন্ধু ওই স্কুলছাত্রীর বাড়িতে বেড়াতে আসে। পরে তার বন্ধুদেরকে ঘরে অপ্যায়ন করার সময় ওই বখাটেরা বাইরে থেকে ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এরপর এলাকার মাতব্বর ও আশপাশের লোকজনকে ডেকে এনে চরিত্রহীনার অপবাদ দিয়ে ওই দিন রাতেই গ্রাম্য শালিসের আয়োজন করা হয়।
গ্রাম্য শালিসে স্থানীয় ইউপি সদস্য মাহাব আলী, সাবেক সদস্য আয়নাল, জনাব আলী জনি, মাতব্বর কাঞ্চন মাস্টার লুৎফর খলীল কাজী ও আবুলসহ অর্ধশতাধিক এলাকার লোক উপস্থিতিতে শালিস বৈঠক শুরু হয়। রাত ১০ টা থেকে ভোর ৪ টা পর্যন্ত শালিস বৈঠকে ওই স্কুলছাত্রী ও তার বন্ধুদের কোনো মন্তব্য না শুনেই এ তরফা রায় দেয়া হয়। রায়ে ওই স্কুলছাত্রীকে ৪০ হাজার ও তিন বন্ধুকে ২০ হাজার করে ৬০ হাজার টাকা অর্থ জরিমানা করা হয়। তবে রায়ের এই টাকা দিয়ে কি করা হবে তা স্পষ্ট করেননি মাতব্বররা।
তিনদিন পরে ওই স্কুলছাত্রীর বাড়িতে রায়ের জরিমানার টাকা আদায় করতে যান মাতব্বর লুৎফরসহ কয়েকজন। কিন্তু ভুক্তভোগীর পরিবার টাকা দিতে রাজি না হওয়াতে স্কুলছাত্রীসহ তার স্বজনদের লোহার রড় ও বাঁশ দিয়ে মারধর করা হয়। এতে গুরুতর আহত অবস্থায় স্কুলছাত্রীসহ তার নানী খালা ও খালাতো বোনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই মারপিটের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে বিষয়টি জানাজানি হয়।
অপবাদ দিয়ে শালিসে জরিমানা ও মারপিটের বিষয়ে কথা বলতে স্থানীয় ইউপি সদস্য মাহাব আলীসহ মাতব্বরদের কাছে গেলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
রামকৃঞ্চপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন জানান, তিনি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অথচ গ্রাম্য শালিসের আয়োজন এবং জরিমানার বিষয়টি তাকে জানানো হয়নি। যারা মেয়েটিকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে শালিস বৈঠকের আয়োজন করেছে তাদের আগে শাস্তি হওয়া উচিত। কারণ শালিসে জরিমানা করা না হলে মারপিটের ঘটনাও ঘটতো না। আত্মহত্যার চেষ্টাও করত না মেয়েটি। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।
হরিরামপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশারফ হোসেন জানান, মারপিটের ঘটনায় ৯ জনকে আসামি করে মেয়েটির বাবা মামলা করেছেন। তিন জনকে গ্রেফতার করা হলেও তারাসহ সব আসামি আদালত থেকে জামিনে আছেন।
কথিত মাতব্বরসহ নেপথ্যের অনেকেই মামলার আসামি হননি এবং তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলায় আসামি করার এখতিয়ার বাদীর। তারা যাদের আসামি করেছেন তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তদন্তে যদি আর কারো সম্পৃক্ততা মেলে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।