জাহাঙ্গীরনগরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ত্রিমুখী কর্মসূচী

জাবি প্রতিনিধি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনের নেতাকে মারধরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। রোববার বেলা সাড়ে বারোটায় ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও পথ নাটক করেন তারা।

চলমান এ আন্দোলনকে সমর্থন করে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচী হিসেবে কর্মবিরতি, পদযাত্রা ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ। এদিকে মারধরের অভিযোগে শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অভিষেক মন্ডলের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলা করলে তার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শাখা ছাত্রলীগ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যান পূনর্বিন্যাস, অর্থ কেলেঙ্কারীরর বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ চলমান তিনদফা আন্দোলনকে সমর্থন করে কর্মসূচী ঘোষণা করে শিক্ষকদের একাংশ। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচী হিসেবে শিক্ষকরা রোববার বেলা সাড়ে এগারোটা থেকে কর্মবিরতি পালনসহ নতুন কলা ভবন থেকে পদযাত্রা শুরু করে পুরাতন প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে শেষ করেন। পদযাত্রা শেষে পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।

এদিকে বেলা সাড়ে বারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবনে পথনাটক করে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। পথনাটক শেষে সমাজবিজ্ঞান অনুষদ থেকে শিক্ষার্থীদের একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দেয়।

সমাবেশে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘মহাপরিকল্পনার দুর্নীতির সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে সন্ত্রাস। সন্ত্রাসী এবং আধিপত্য যদি অব্যাহত থাকে তাহলে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান হবে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ঘটনাগুলো ঘটছে এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং চ্যান্সেলর কার্যালয়ের অবহিত থাকার কথা। এসব নিয়ে সারাদেশে এখন আলোচনা হচ্ছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় জনগণের টাকায় চলে; এখানে কি হচ্ছে সেটা জানার অধিকার দেশের সাধারণ মানুষের আছে।’

সমাবেশে অধ্যাপক খবির উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের তিনটা দাবির মধ্যে অন্যতম দাবি হলো উপাচার্যের বিরুদ্ধে উত্থাপিত দুর্নীতির অভিযোগের বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে। আমরা এই অভিযোগ থেকে মুক্ত হতে চাই। আর উপাচার্যকে বলতে চাই যদি অভিযোগ মিথ্যা হয়ে থাকে তবে যারা অভিযোগ তুলছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করুন।’

প্রতিবাদ সমাবেশে শিক্ষকরা মাস্টারপ্ল্যান অপরিকল্পিত-অস্বচ্ছ বলে উল্লেখ করেন। এছাড়া মেগা প্রকল্পের টাকা দুর্নীতি ও টেন্ডার ছিনতাইয়ের বিচার বিভাগীয় তদন্ত, প্রকল্প পুনর্বিন্যাসসহ অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি জানান।

ju-2

প্রতিবাদ সমাবেশে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ আন্দোলনের মুখপাত্র ও জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আশিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনের দুইজন সংগঠককে সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন কর্তৃক নির্যাতন করা হয়েছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছি। যদি তাদের বিরুদ্ধে সঠিক ব্যবস্থা না নেয়া হয় তাহলে আমরা আরো কঠিন আন্দোলনের দিকে যাব।’

সমাবেশে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম তালুকদারের সঞ্চালনায় অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক কামরুল আহসান, অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ ভুঁইয়া, অধ্যাপক নূরুল ইসলাম, অধ্যাপক সাদিয়াা আহমদ, অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, অধ্যাপক রায়হান রাইন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

এদিকে বেলা তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্ত্বর থেকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানার নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল শেষে প্রতিবাদ সমাবেশে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানা বলেন, ‘আমার সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক অভিষেক মন্ডলের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দেয়া হয়েছে তা পূর্ব পরিকল্পিত। গুটি কয়েক শিক্ষার্থীর চাপের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাদী হয়ে একজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে। যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে , তাদের দুইজনকে ডেকে তদন্ত করা হোক।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা থাকতে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।’

প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত ১৪৪৫ কেটি ৩৬ লক্ষ টাকার উন্নয়ন প্রকল্পে আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্ত, মাস্টারপ্ল্যান পুনর্বিন্যাস সহ তিনদফা দাবিতে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। গত ২৭ আগস্ট চলমান আন্দোলনের কর্মসূচি মশাল মিছিলে অংশগ্রহণ করায় ছাত্রফ্রন্ট নেতা সোহায়েব বিন মাসুদকে মারধর ও ৭ সেপ্টেম্বর সকালে আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম সাইমুমকে মারধর শাখা ছাত্রলীগের মারধরে আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে।

Print Friendly

Related Posts