জাবি প্রতিনিধি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সরকার ও রাজনীতি বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে একই বিভাগের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিভাগে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেও প্রতিকার না পেয়ে ওই ছাত্রী ‘আত্মহত্যার’ চেষ্টা করেছেন বলে জানা গেছে।
ভূক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী সরকার ও রাজনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণীর ছাত্রী এবং বাংলাদেশ সাধারণ শিক্ষার্থী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ জাবি শাখার যুগ্ম আহবায়ক।
ভুক্তভোগী ছাত্রী গত ১৯ সেপ্টেম্বর সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সানওয়ার সিরাজের বিরুদ্ধে বিভাগীয় সভাপতি বরাবর যৌন হয়রানির লিখিত অভিযোগ দেন।
জানা যায়, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তিনি গত এক বছর ধরে যৌন হয়রানির অভিযোগ করে লড়ে আসছিলেন। দীর্ঘদিন অভিযোগ করেও কোনো বিচার না পেয়ে তিনি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। অবশেষে গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে ২৬টি ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে ‘আত্মহত্যার’ চেষ্টা করেন তিনি। গুরুতর অবস্থায় তাকে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকীৎসা শেষে বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ছাড়পত্র দিলে তাকে গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়।
লিখিত অভিযোগে ওই ছাত্রী জানান, ২০১৮ সালে তিনি তার তৃতীয় পর্বের একটি কোর্সের মানোন্নয়ন পরীক্ষা দেয়ার জন্য তিনি কোর্স শিক্ষক সানওয়ার সিরাজের শরনাপন্ন হন। সেসময় অভিযুক্ত সানওয়ার সিরাজ ওই ছাত্রীর মোবাইল নাম্বার নেন এবং তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। পরদিন শিক্ষক নিজেই ওই ছাত্রীকে ফোন করে পরীক্ষা কেমন হলো তা জানতে চান। সেদিন রাতে শিক্ষক সানওয়ার সিরাজ ছাত্রীর ফেসবুক মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করে তার সঙ্গে ঘোরাফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
ছাত্রী আরও বলেন, ‘ওই শিক্ষক আমার প্রতি তার শারীরিক আকর্ষণের কথা জানান। তিনি আমাকে তার সঙ্গে সময় কাটানো ও ঘোরাঘুরির প্রস্তাব দেন। তার এমন ধারাবাহিক আচরণে আমি খুব বিব্রত বোধ করি। ফলে বারবার ফেসবুক আইডি ডিঅ্যাক্টিভ করি। কিন্তু, তিনি অব্যাহতভাবে আমাকে উত্যক্ত করতে থাকেন।’
ওই ছাত্রী বলেন, ‘পরীক্ষা চলাকালে ওই শিক্ষক আমাকে জামা উপহার, রেস্টুরেন্টে খাওয়া, রাতে একসঙ্গে ঘুরতে যাওয়া ও স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে তার বাসায় রাত যাপনের প্রস্তাব দেন। তিনি চরম আপত্তিকর কথাবার্তা ও কুপ্রস্তাব দেন। ব্যর্থ হয়ে তিনি তার কোর্সে আমাকে কম নম্বর দেন। আমি তার ধারাবাহিক অত্যাচারে মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরনাপন্ন হই।’
পরবর্তীতে বিভাগে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত এক সেমিনারে নিজের যৌন হয়রানির বিষয়টি উত্থাপন করায় বিভাগের তৎকালীন সভাপতি অধ্যাপক সামসুন্নাহার খানম তার ওপর ক্ষিপ্ত হন বলে অভিযোগ করেন ওই ছাত্রী। ছাত্রীর অভিযোগ, তৎকালীন সভাপতি ওই সেমিনারে তার বক্তব্যে বলেছেন, ‘এটি পাবলিক ফোরাম। একজন ছাত্রীর যে অভিযোগ, তা বিভাগের মানসম্মানের সঙ্গে জড়িত। তথ্যপ্রমাণসহ তাকে লিখিত অভিযোগ করতে হবে। অন্যথায় আমি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবো।’
ওই ছাত্রী বলেন, ‘আমি যৌন হয়রানির তথ্যপ্রমাণ বিভাগের তৎকালীন সভাপতির কাছে হস্তান্তর করি। তিনি আমাকে সহানুভূতি জানিয়ে এসব ভুলে গিয়ে ক্যারিয়ারের দিকে নজর দিতে বলেন। আর অভিযোগের গোপনীয়তা রক্ষা না করে তিনি বিষয়টি শিক্ষকদের মাঝে ছড়ান।’
এ বিষয়ে বিভাগের সদ্য সাবেক সভাপতি অধ্যাপক সামসুন্নাহার খানম বলেন, ‘আমাকে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়নি। আমার কাছে নিয়মমাফিক অভিযোগপত্র দিলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করতাম।’
অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষক সানওয়ার সিরাজ বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মিথ্যা। একটা অভিযোগ উঠলেই আমি অপরাধী নই। অভিযোগের সত্যতা যাছাই করা উচিত।’
বিভাগের বর্তমান সভাপতি নাসরিন সুলতানা বলেন, ‘আমি ১৯ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্রটি হাতে পেয়েছি। পরবর্তীতে ২৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্রটি আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলে হস্তান্তর করেছি।’
এ বিষয়ে যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলের প্রধান নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আখতার বলেন, ‘অভিযোগপত্রটি পেয়েছি। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বিচার-বিশ্লেষণ করা হবে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন থাকায় এ বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে না।’