বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ রাজধানী ঢাকায় আজ মঙ্গলবার টানা দুই ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরীর সড়কগুলো পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়ে নগরবাসী।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস জানিয়েছেন, দুপুর ১২টা থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। ৪৫.২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
রামপুরা, বাড্ডা, খিলগাঁও, মৌচাক, মালিবাগ, শান্তিনগর, মগবাজার, মোহাম্মাদপুর, মতিঝিল, কাজীপাড়া, গেন্ডারিয়া, টিকাটুলি, বিজয় সরণি, রোকেয়া সরণি ও আরামবাগসহ অনেক এলাকায় হাঁটু পর্যন্ত পানি জমে। এতে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়ে নগরবাসী। জলজট ও পরিবহন সংকটের কারণে নগরবাসী বিশেষ করে স্কুলের শিক্ষার্থীরা তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে মারাত্মক ভোগান্তির সম্মুখীন হয়েছে।
সচিবালয় জল থৈ থৈ:
প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়। সেই সচিবালয়ে জল থৈ থৈ অবস্থা। আশ্বিনের দুপুরে অবিরাম বৃষ্টির পর সচিবালয়জুড়ে ঢেউ খেলছে বৃষ্টির পানি। পানিবন্দি সবাই, মন্ত্রী-সচিব থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সাধারণ দর্শনার্থীও। বিপাকে পড়েছেন সচিবালয়ের অভ্যন্তরের সবাই। প্রায় দুই ঘণ্টার বৃষ্টিতে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম চারদিক। সচিবালয়েও যেন পানির তোড়ে ভেসে যায়।
সচিবালয় গেটগুলো, ভবনের চার পাশ, এমনকি কোনো ভবনের লিফটেও পানি উঠেছে। যারা সচিবালয়ে ঢুকছেন বা বের হচ্ছেন তারা সবাই পায়ের জুতো হাতে নিতে হয়েছে। ৭ নম্বর ভবনের দুটি লিফটে পানি উঠে। পানির কারণে পূর্ব দিকের লিফট প্রথমে বন্ধ রাখা হয়। পরে দেিণর লিফটও বন্ধ হয়ে যায় বলে জানান দেিণর লিফটম্যান রাজু। তিনি বলেন, দুই বছর আগে একবার লিফটে পানি উঠেছিল। তবে এবার পানির পরিমাণ বেশি। নির্দিষ্ট পথ ছেড়ে দেিণর এই লিফটের পাশ দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জুতোর সোল ডুবানো পানির মধ্যে হেঁটে গাড়িতে উঠেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সামনে ছাড়াও সবগুলো ভবনের চারদিকে পানি থৈ থৈ। সচিবালয়ের গাড়িগুলো প্রায় অর্ধেকটা পানিতে ডুবে যায়।
৭ নম্বর ভবনের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কর্মী মিজানুর রহমান বলেন, সচিবালয়ে এমন পানি দেখিনি কোনো দিন। এদিকে সচিবালয়ে থৈ থৈ পানির এই অবস্থা মোবাইল ক্যামেরায় বন্দি করছেন অনেকে। সেলফি নিচ্ছেন কেউ কেউ। এরই মাঝে কাউকে কাউকে বলতেও শোনা যায়, সচিবালয়ের এই অবস্থা হলে সারা দেশের কী অবস্থা হয়?
সচিবালয় থেকে বের হতে গিয়ে সবাই খুঁজছেন পানিবিহীন পথ! কিন্তু সেই পথের দেখা পাচ্ছেন না কেউ-ই। বাধ্য হয়ে জুতা খুলে হাতে নিয়ে বের হন অনেকে। আর যাদের গাড়ি আছে তারা ৭ নম্বর ভবনের মাঝের লিফট এবং পাশের সিড়ি দিয়ে নেমে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এতে সেখানে জটলার সৃষ্টি হয়। পানির কারণে সচিবালয়ের সামনের রাস্তাতেও প্রচণ্ড যানজট তৈরি হয়। ফলে সচিবালয়ের ভেতরেও বিকাল নাগাদ যানজটের রেশ পড়ে যায়।
সড়কে হাঁটুপানি, দুর্ভোগে ঘরমুখো মানুষ:
শরতের অবিরাম বৃষ্টিতে দুর্ভোগে পড়ে অফিস থেকে ঘরে ফেরা মানুষেরা। মঙ্গলবার দুপুরে দুই ঘণ্টার বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক। সন্ধ্যা পর্যন্তও রেশ কাটেনি সেই বৃষ্টির। সড়কে পানি জমে থাকায় যেমন তীব্র জ্যাম লেগেছে, তেমনি গণপরিবহনেরও সংকট দেখা দিয়েছে। সবমিলিয়ে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষ।
ভারী এই বৃষ্টিতে রাজধানীর ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়ক, কারওয়ান বাজারের কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, মিরপুরের বিভিন্ন এলাকা, গ্রিন রোড, প্রগতি সরণি, কালশীসহ বিভিন্ন রাস্তায় হাঁটুপানি জমে। এমনকি মগবাজারসহ বিভিন্ন ফাইওভারেও হাঁটুপানি জমে। এতে স্কুলফেরত শিার্থীসহ অফিস থেকে ঘরমুখো মানুষ পর্যন্ত বিপাকে পড়েন সবাই।
অন্যদিকে পানিতে ডুবে যানবাহন বিকল হয়ে যাওয়ায় রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, ইসিবি চত্বর, কালশী, প্রগতি সরণি ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় অনেক গাড়ি বিকল হয়। ফলে মানুষকে বাড়তি ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
রাজধানীর ছোলমাইদ এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হক বলেন, বৃষ্টির পানিতে পুরো সড়ক তলিয়ে গেছে। বাসা-বাড়িতেও পানি ঢুকেছে। ধানমন্ডির বাসিন্দা শফিউল্লাহ বলেন, ২৭ নম্বর সড়ক পানিতে ডুবে আছে। তীব্র যানজট তৈরি হওয়ায় হাঁটুপানি মাড়িয়ে বাসায় যেতে হয়েছে।
জলাবদ্ধ হাইকোর্ট এলাকা:
কয়েক ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর হাইকোর্টের সামনের সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এর প্রভাবে আবার দীর্ঘ যানজটেরও সৃষ্টি হয়। ফলে তীব্র ভোগান্তিতে পড়েন এ এলাকায় চলাচলকারী যাত্রী সাধারণরা। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বৃষ্টি থামার ঘণ্টা পরেও এই সড়কে এমন চিত্র দেখা যায়। এসময় প্রেসক্লাবের কদম ফোয়ারা মোড় থেকে শুরু করে মৎস্য ভবন পর্যন্ত জলাবদ্ধতায় পূর্ণ ছিল। শুধু হাইকোর্ট সড়ক নয়, শাহবাগ থেকে ফার্মগেট এবং অ্যালিফ্যান্ট রোডের দিকে যাওয়ার সড়কেও এসময় যানবাহনগুলোকে থমকে থাকতে দেখা যায়।