বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ প্রথমে একজন জুয়াড়িকে মোবাইলে টি-২১ ও পি-২৪ নামের দুটি অ্যাপস ডাউনলোড করতে হতো। পরে অ্যাপসগুলো থেকে তাঁর পছন্দমতো গেম বাছাই করতেন। এরপর শুরু হতো খেলা। জিতলে টাকা জমা হতো জুয়াড়ির নির্দিষ্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্টে, আর হারলে টাকা কাটা যেত ওই একই অ্যাকাউন্ট থেকে। এভাবেই অনলাইনে ক্যাসিনো ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন সেলিম প্রধান।
অনলাইনভিত্তিক ক্যাসিনোর মূল হোতা সেলিম প্রধান। ঢাকার অপরাধ জগতের ডন তিনি। পশুর খাটালে চাঁদাবাজি, হোটেল, স্পা, ক্যাসিনো পরিচালনাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অনলাইন জুয়ার কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার ব্যবসায়ী সেলিম প্রধানের বাসা ও অফিসে অভিযান চালিয়ে প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা সমমূল্যের বিদেশি মুদ্রা, বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৯ লাখ টাকা ও মদ উদ্ধার করেছে র্যাব।
মঙ্গলবার গুলশান-২ নম্বরে অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধানের বাড়ির নিচতলায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম।
তিনি বলেন, সেলিম বর্তমানে কারাগারে থাকা ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের কোজ ফ্রেন্ড (ঘনিষ্ঠ) ছিলেন। তিনি মামুনকে একটি বিএমডব্লিউ গাড়িও উপহার দিয়েছিলেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। এ ছাড়া সেলিম বিভিন্ন সময় লন্ডনে টাকা পাঠিয়েছেন বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। কয়েকটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগে আমরা তাকে গ্রেপ্তার করি।
লন্ডনে তিনি কাকে টাকা পাঠাতেন? সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে র্যাবের অধিনায়ক বলেন, ‘লন্ডনে কোথায় পাঠাতেন, সমীক্ষা করে জানাব। কি পরিমাণ টাকা লন্ডনে পাচার হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটা গেটওয়ে থেকে প্রতি মাসে ৯ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছি। এমন আরও কিছু গেটওয়ে রয়েছে, সেগুলো আমরা যাচাই করে দেখছি।
তারেক রহমানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে শোনা গেছে, লন্ডনে পাচারকৃত টাকা তারেক রহমানের কাছে যেত কিনা জানতে চাইলে সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখবো।
সোমবার শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে দেশ ছেড়ে পালানোর সময় বিমান থেকে তাকে নামিয়ে আনা হয়।
সেলিম প্রধানকে আটকের পর মঙ্গলবার দুপুরে তার আরেকটি বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। এ সময় সেলিমের সহযোগী আক্তারকে আটক করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ২১ লাখ ২০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। এ ছাড়াও বেশ কয়েকটি কম্পিউটার জব্দ করা হয়েছে। র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক সারোয়ার বিন কাসেম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। র্যাব সদস্যরা জানান, উদ্ধার হওয়া এসব কম্পিউটার দিয়েই অনলাইনে ক্যাসিনো চালাতেন সেলিম প্রধান।
এর আগে সোমবার রাতে গুলশান-২ এর ১১/এ রোডে সেলিম প্রধানের বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি মদ, নগদ টাকা ও বিদেশি মুদ্রা জব্দ করেছে র্যাব।
সেলিম প্রধান গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার অপরাধ সম্পর্কে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। থাইল্যান্ড থেকে বাংলাদেশের অনলাইনের মাধ্যমে ক্যাসিনো ব্যবসা চালাতেন সেলিম। অনলাইনে কয়েন বিক্রি করে এই ক্যাসিনো চালানো হতো। এসব করে কামিয়েছেন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা।
সেলিম প্রধান ঋণ খেলাপি। সূত্র বলছে, সেলিম প্রধান রূপালী ব্যাংক থেকে ১০০ কোটি টাকা লোন নিয়েছেন। তার বাবার নাম হান্নান প্রধান। ঢাকার মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডে তার বাসা। তার গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে।
সেলিম প্রধান অনলাইনে ক্যাসিনো পরিচালনাকারী এবং বাংলাদেশের কান্ট্রি প্রধান। তিনি ওয়ান্ডারার্স কাবের সহ সভাপতি। এ ছাড়া এর আগে গ্রেপ্তার হওয়া বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার ক্যাশিয়ারও। সেলিম প্রধানের ব্যাংককের পাতায়ায় বিলাসবহুল হোটেল, ডিসকো বারসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। থাইল্যান্ডের পাতায়াতেও রয়েছে তার ক্যাসিনো ব্যবসা।
সূত্র জানায়, রাজধানীর বিভিন্ন স্পা ও বিউটি পার্লার যেখানে ভিআইপিদের আসা-যাওয়া রয়েছে, সেগুলোতে নারী সরবরাহের কাজ করতেন সেলিম। সেই মেয়েরা ভিআইপিদের বিনোদন দেয়ার কাজ করতেন। সিলেট থেকে অবৈধভাবে পাথর নিষ্কাশনের কাজ করতেন তিনি।
সেলিমের প্রধানগ্রুপ ডট কম নামের একটি ওয়েবসাইট রয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়ছে, সেলিম প্রধানের লাইভ ক্যাসিনো মার্কেট পি২৪ লিমিটেড নামের গেমিং কোম্পানি ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠা করা হয়। ওয়েবসাইটে দেয়া ঠিকানায় দেখা যায়, গুলশান-২ এর ৯৯ নম্বর রোডের ১১/এ নম্বরে রয়েছে ‘পি২৪’ এর অফিস। করপোরেট অফিসের ঠিকানা দেয়া হয়েছে, ডি-১ মমতাজ ভিশন, গুলশান-২ এর ৯৯ নম্বর রোডে ১১/এ। বিদেশের অফিসের ঠিকানা হচ্ছে, ১৬৫/৯৬ মো ১০, সুরাসাক, শ্রী রাখা, চনবুন, থাইল্যান্ড, ২০১১০।