খান মাইনউদ্দিন, বরিশাল: সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই বরিশালে ব্যক্তিগত ব্যবহারের রেজিস্ট্রেশন করা প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস ভাড়ায় পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ধরনের কর্মকান্ড প্রকাশ্যে হলেও নেই আইন প্রয়োগকারীদের কঠোর হস্তক্ষেপ। ফলে দিনে দিনে আকার বড় হচ্ছে ব্যক্তিগত গাড়ি অবৈধভাবে ভাড়া দেওয়া। এ বিষয়ে দ্রুতই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
এদিকে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যক্তিগত ও ভাড়ায় চালানোর জন্য মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহনের রেজিস্ট্রেশনের আলাদা নিয়ম রয়েছে। আর ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য রেজিস্ট্রেশন করা মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহন ভাড়ায় চালানোর বৈধতা আইনে নেই। এটা দন্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু বরিশালের চিত্র উল্লেখিত নিয়মের পুরো উল্টো। ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য রেজিস্ট্রেশন করা প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস নিয়মিতই ভাড়ায় পরিচালনা করা হচ্ছে। আবার ছোট ছোট কার্যালয় খুলে সাইনবোর্ড লাগিয়ে এ ব্যবসা করা হলেও তাদের অনুকূলে তেমনভাবে নেই কোনো পার্কিং ব্যবস্থা। তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নগরের সড়ক দখল করে এ সব গাড়ি ভাড়ার জন্য সাজিয়ে রাখা হচ্ছে। এর ফলে অন্য যান চলাচলেও প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরিশাল নগরের বান্দ রোডের কে বি হেমায়েত উদ্দিন ঈদগাহ ময়দান এলাকা, সার্কিট হাউজ ও শহীদ মিনার এলাকা, রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড, নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডসহ নগরের বেশকিছু এলাকায় কার্যালয় ভাড়া নিয়ে চলছে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য রেজিস্ট্রেশন করা গাড়ি ভাড়া দেওয়া। আবার এসব গাড়ির শ্রমিকদের নিয়ে খোলা হয়েছে সংগঠনও, যেখানে প্রতিনিয়ত প্রভাবশালীদের সংযুক্ত হবার চেষ্টা চলে। প্রভাবশালীদের সংযুক্তি ছাড়াও পুলিশ প্রশাসনকে রিকুইজিশনে গাড়ি দেওয়ায় বাড়তি কোনো ঝামেলা নেই বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। তাই এ ব্যবসায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঝুকছেন অনেকেই।
বিআরটিএ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মোটরযানের ব্যবহার ও ধরনের ওপর ভিত্তি করে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়। এমনকি কোন গাড়ি কোন ক্যাটাগরির তা নম্বর প্লেটেই স্পষ্ট করা হয়। যেমন, ব্যক্তি ব্যবহারের জন্য মাইক্রোবাসের নম্বর ‘চ’ সিরিজের সরকার অনুমোদিত। বাণিজ্যিক বা ভাড়ায় চালানোর জন্য মাইক্রোবাসের নম্বর ‘ছ’ সিরিজের সরকার অনুমোদিত। অর্থাৎ ‘চ’ সিরিজের নম্বর রেজিস্ট্রেশন নিয়ে ‘ছ’ সিরিজের কাজে (ভাড়ায়) ব্যবহার করা যাবে না। আবার মোটরযান আইনে বর্ণিত আছে সরকার বা কর্তৃপক্ষে অনুমোদন ব্যতীত পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এরূপ কোনো ধরনের ভ্রাম্যমাণ বাণিজ্যিক কার্যক্রম মোটরযানে পরিচালনা করা যাবে না। আর যদি ভ্রাম্যমাণ বাণিজ্যিক কার্যক্রমে ব্যবহার করা হয় তাহলে তিন মাসের কারাদন্ড অথবা অনধিক ২৫ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসেবে দোষ সূচক ১ (এক) পয়েন্ট কাটা যাবে। তবে ‘ম্যানেজ’ শব্দের ওপর ভরসা করেই এ সব সমস্যার সমাধান হয়ে থাকে বলে জানান গাড়ির মালিক ও চালকরা।
এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) খাইরুল আলম বলেন, বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকার আওতাধীন পরিবহন সেক্টরের সব অভিযোগ নিরসনে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। আর রিকুইজিশনের বিষয়ে আমরা চেষ্টা করছি গাড়িগুলোকে ভাড়ায় নেওয়ার জন্য। তাহলে আর কেউ প্রশাসনের নাম ব্যবহার করে তাদের স্বার্থ সিদ্ধি করতে পারবে না।
বিআরটিএ বরিশাল সার্কেলের সহকারী পরিচালক আতিকুল আলম বলেন, নিয়মিতই আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করে থাকি। ব্যক্তিগত ব্যবহারের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে ভাড়ায় যে মাইক্রোবাস চালায় তা আমার জানা ছিল না। আশা করি অল্প সময়ের মধ্যে রেজিস্ট্রেশনবিহীন ও সরকারকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে যারা ব্যবসা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলেও জানান আতিকুল।