বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজকে রাসেল আমাদের মাঝে নেই। আমি আমার রাসেলকে হারিয়েছি। কিন্তু লাখো রাসেলকে পেয়েছি। আজকের এই মেধাবী শিশুরাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
শেখ রাসেলের ৫৫তম জন্মদিনে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় নিজের ছোট ভাই শেখ রাসেল সম্পর্কে বলতে গিয়ে আবেগঘন কণ্ঠে এমন মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
নিজের ছোটভাই শেখ রাসেল সম্পর্কে বলতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন শেখ হাসিনা, আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। স্মৃতি রোমন্থনে ছোট্ট, চঞ্চল, সদা হাস্যোজ্জ্বল রাসেলকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিশু-কিশোরদের মানসপটে তুলে আনেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আর দরিদ্র থাকবে না। সব মানুষই উন্নত, সুন্দর ও নিরাপদ জীবন পাবে। আমরা মাতৃমৃত্যুর হার, শিশু মৃত্যুর হার কমিয়েছি। শিশুদের জন্য অধিকতর নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু দরিদ্র মানুষের সঙ্গে নিজের খাবার ভাগ করে খেতেন। তিনি সব সময় তা করতেন। ঠিক সেই গুণটি রাসেলের মধ্যেও ছিল। গ্রামে গেলে দরিদ্র শিশুদের যে কিছু দিতে হবে তা সে চিন্তা করতো। রাসেলের খুব শখ ছিল বড় হয়ে সে আর্মি অফিসার হবে। সে কাঠের বন্দুক বানাতো। সেটা নিয়ে খেলা করতো। শিশুদের প্রতি তার দরদ ছিলো। শিশুদেরকে সে কিছু না কিছু দিতো। বেঁচে থাকলে দেশের জন্য অনেক কিছু করতে পারতো রাসেল। কিন্তু ঘাতকরা একজন ছোট্ট শিশুকেও বাঁচতে দেয়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে ৫৪ বছর বয়স পূরণ করেছে রাসেল। আজ তাকে দেখতে কেমন লাগতো? আমার ভাইকে দেখতে কেমন লাগতো?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা শুধু বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকেই হত্যা করেনি। শিশু ও নারী হত্যা করেছে। তাদের বিচার করা হয়নি। আইন করে বিচারের হাত থেকে মুক্ত করে তাদেরকে পুরস্কৃত করা হয়েছিলো। ১৯৮১ সালে আমি যখন ফিরে এসে মামলা করার চেষ্টা করি তখন আমাকে বলা হলো, এই হত্যার মামলা করা যাবে না। অর্থাৎ আমি আমার মা, বাবা, ভাই হত্যার বিচার পাবো না। আমার প্রশ্ন ছিলো, আমি কি এই দেশের নাগরিক নই? সবাই যদি বিচার চাইতে পারে তাহলে আমি পারবো না কেন?
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো.রকিবুর রহমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্বে করেন। সংগঠনের সদস্য সচিব মাহমুদুস সামাদ এমপি, উপদেষ্টা তরফদার রুহুল আমিন এবং কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কেএম শহীদুল্লাহ ও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ আয়োজিত সারাদেশের শিশু-কিশোরদের মধ্যে অনুষ্ঠিত খেলাধূলা, চিত্রাংকন এবং সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।
মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আমন্ত্রিত অতিথি এবং সারাদেশ থেকে আগত শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের সদস্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশুরা যাতে ঝুঁকিপূর্ণ কোন কাজ না করে সেই ধরনের ব্যবস্থাও তাঁর সরকার নিয়েছে। এমনকি তাঁদেরকে শিক্ষা-দীক্ষা দিয়ে, এমনকি ঝরে পরা শিশু এবং যারা শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিল সেসব শিশুদেরও শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। আর যারা এতিম এবং প্রতিবন্ধী ও অটিজম আক্রান্ত শিশুদের জন্যও কর্মসূচি নিয়েছে।
তিনি অটিজম আক্রান্ত শিশুদের আপন করে নিয়ে সমাজের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করার জন্যও অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিশু কিশোরদের প্রতি আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আজকে এখানে যেসব শিশুরা উপস্থিত রয়েছে তাঁদেরকে একটা কথাই বলবো, তোমাদের আশেপাশে যথন কোন প্রতিবন্ধী, অটিস্টিক বা দরিদ্র শিশু দেখবে তাঁদেরকে কখনও অবহেলা করোনা। তাঁদেরকে আপন করে নিও। তাঁদের পাশে থেকো, তাঁদেরকে সহযোগিতা করো। কারণ তারাও তোমাদের মতই একজন। যেন কোনভাবেই তাঁরা অবহেলার শিকার না হয়।’
তিনি ছোটবেলার শিক্ষা ‘কানাকে কানা, খোঁড়াকে খোঁড়া বলিও না’র প্রসঙ্গও এ সময় উল্লেখ করে বলেন, ‘আসলে এটা করা নিষ্ঠুরতা, এটা বলা অমানবিকতা। আমাদের শিশুরা নিশ্চই তা করবে না।’
বক্তৃতা পর্ব শেষে প্রধানমন্ত্রী সংগঠনের শিশু-কিশোরদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন।
উল্লেখ্য, ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ সন্তান শেখ রাসেল জন্মগ্রহণ করেন। অমিত সম্ভাবনাময় রাসেলকে ১৯৭৫ এর ১৫ অগাস্ট কালরাতে জাতির পিতার পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ধানমন্ডী ৩২ নম্বরের বাড়িতে নির্মমভাবে হত্যা করে ঘাতক চক্র।