জাবি প্রতিনিধি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) চলমান আন্দোলনে শিবিরের মদদ রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি দিনের বেলায় আন্দোলনকারীদের যেসব কর্মসূচী থাকে তাতে উপস্থিতি অনেক কম থাকে। কিন্তু মশাল মিছিলের মতো রাতের কর্মসূচীতে তাদের লোক সমাগম বেশি হয়। আমরা দীর্ঘদিন পযবেক্ষন করে বিষয়টি সিশ্চিত হয়েছি যে, আন্দোলনে বহিরাগত ও শিবির কর্মীদের অংশগ্রহণ রয়েছে।’
প্রক্টর জানান, মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌরঙ্গী এলাকা থেকে সাদ শরীফ ও নুরুল আমিন নামে সন্দেহভাজন দুইজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সাদ শরীফ শিবিরের উচ্চ পর্যায়ের নেতা বলেও তিনি নিশ্চত করেছেন। আটককৃত সাদ শরীফের ব্যবহুত মোবাইল ফোন থেকে পুলিশ প্রচুর তথ্য ও অডিও ক্লিপস উদ্ধার করেছে বলেও তিনি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।
তিনি আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন কর্মসূচীতে সাদ শরীফের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ রয়েছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষাঙ্গনকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে সে লিপ্ত রয়েছে বলেও জানা গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার মিসেস রহিমা কানিজ বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ে এখন ক্রান্তিকাল চলছে। বিশ^বিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পকে ঘিরে গড়ে ওঠা আন্দোলন শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করে তোলা নয়, দেশকে অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ২২ অক্টোবর আন্দোলনকারীদের মশাল মিছিলে যোগ দিতে এসে দু’জন শিবির নেতা ধরা পরায় উপাচার্যবিরোধী ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায়।’
আন্দোলনকারীরা মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরকে লিখিত অভিযোগ প্রেরণ করে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসার সময় না দিয়ে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি, অবাঞ্ছিত ঘোষণা ও উপাচার্যের কুশপুত্তলিকা দাহ করেছেন। এ ধরণের অগ্রহনযোগ্য ও নিন্দনীয় কর্মকান্ডের নেপথ্যে শিবিরের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে মশাল মিছিল করে আন্দোলনকারীরা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌরঙ্গী এলাকা থেকে শিবির সন্দেহে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক দুই শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার পরিদর্শক তসলিম উদ্দিন জানান, ‘আটককৃতদের মধ্যে সাদ শরীফ নামে একজনের বিরুদ্ধে ‘ফেইসবুক মেসেঞ্জারে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদিপ্ত শাহীন বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান আন্দোলনের সাথে শিবিরের সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে অধ্যাপক জামাল উদ্দিন (রুনু) বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের সাথে জামায়াত-শিবিরের কোনো সম্পর্ক নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও সাবেক শিক্ষার্থীকে হেলমট পরা অবস্থায় আটক করা হয়েছে। আর তারা আমাদের সাথেও ছিল না।’ এছাড়া ফৌজদারি মামলার কোনো আলামত রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের তদন্ত ছাড়া প্রচার করে প্রক্টর আইনের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন করেছেন বলেও তিনি জানান।
এ বিষয়ে অধ্যাপক মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের সাথে জামায়াত-শিবিরের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য কুটকৌশল। এমন অভিযোগ এনে আন্দোলনকে দমিয়ে দেয়া যাবে না।’