বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ হঠাৎ বিদায় নিলেন হুমায়ূন সাধু । তার মৃত্যুতে কাঁদছে হেমন্তের আকাশ। সকাল থেকেই থেমে থেমে জল ঝরছে আকাশ থেকে। তার শোকে কাঁদছে হাজারো শুভানুধ্যায়ি ও ভক্তকূল। অকাল প্রয়াণ সত্যি সত্যিই কাঁদিয়েছে সব শ্রেণির মানুষকে।
প্রকৃতির খেয়ালে তাঁর শরীরে স্বাভাবিক গড়ন ছিল না। তুলনামূলকভাবে খর্বাকার ছিলেন। এতে অবশ্য থেমে থাকেনি জয়যাত্রা। কোনো বাধাবিপত্তি তিনি আমলে নেননি কখনো। জীবনের টানে বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় কিছুদিন কাটান রেলস্টেশনে, বাসস্টেশনে। ঠিকানাবিহীন জীবনে এক সময় ঠিক ঠিক নিজের জায়গা করেন নেন, নির্মাতা ও অভিনেতা হয়ে, লেখালেখি করে।
২ অক্টোবর তাঁর পরিবারের মানুষজন জানতে পারেন, হুমায়ূন সাধু অসুস্থ। ঢাকায় যেখানে তিনি শুটিং করছিলেন, সেখানেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর বড় বোন চট্টগ্রামে থাকেন। তিনি ভাইকে সেখানে নিয়ে যান। ৫ অক্টোবর হুমায়ূন সাধুকে চট্টগ্রাম শহরের পার্ক ভিউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তখন চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর রক্তে ইনফেকশন ধরা পড়েছে।
শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ১৩ অক্টোবর হুমায়ূন সাধুকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। তাঁকে রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, তাঁর মস্তিষ্কে স্ট্রোক হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে তাঁর মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করতে হবে। কিন্তু পরিবারের লোকজন চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে সম্প্রতি তাঁকে বাসায় নিয়ে যান।
পরে গত রোববার রাতে শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় হুমায়ূন সাধুকে দ্রুত রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করেন। সেখানে নেওয়ার পর জানা যায়, হুমায়ূন সাধুর মস্তিষ্কে আবারও স্ট্রোক হয়েছে। তাঁকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। সেখান থেকে আর ফেরা হয়নি তাঁর। গতকাল দিবাগত রাত দেড়টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে হুমায়ূন সাধু শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।
শুক্রবার আসর নামাজের বিকাল পৌনে ৫টার দিকে দ্বিতীয় দফায় জানাজা শেষে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকার মেটাল রহিম মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে চিরনিদ্রায় দাফন হয় তার।
তার মৃত্যুতে দিনব্যাপী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানাভাবে স্মৃতিচারণ করেন নাটক, চলচ্চিত্র ও সাহিত্যের মানুষেরা।
নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর হাত ধরেই অভিনয় ও নির্মাণে এসেছিলেন সাধু। ফারুকীকে গুরু মানতেন। তার মৃত্যুতে শোকার্ত ফারুকী। ফেসবুকে একাধিকবার স্মৃতিচারণ করেন তিনি। একবার এক পোস্টে সাধুকে নিয়ে ফারুকী লিখেন: তুই সময় দিছিলি আমাদের তৈরি হওয়ার। আমরা হয়তো তৈরিও হইছিলাম। কিন্তু মানুষ বোধ হয় কখনোই প্রিয়জনের বিদায়ের জন্য তৈরি হইতে পারে না রে, সাধু!
সাধুর মৃত্যুতে শোকার্ত অভিনেত্রী জয়া আহসান লিখেন: যখন জীবন আর সিনেমা এক হয়ে য়ায়…সাধু …। বিউটির ওই হৃদয় নিংড়ানো কান্না যে সত্যি হয়ে উঠবে এটা তো ভাবিনি ভাই… কতো কতো স্মৃতি আর দীর্ঘশ্বাস ঘুরে ঘুরে আসছে…।
অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী লিখেন: সাধুর সাথে একটা নাটকেই অভিনয় করেছিলাম…। বয়স আর উচ্চতা দুটোতেই আমার চেয়ে ছোট…। অন্তত ওর জীবনটা বড় হতে পারতো…! বিধাতার বিচার টা যেন কেমন! প্রথম দেখাতেই জড়িয়ে ধরে বলেছিলাম, কেমন আছিস ভাই? উত্তরে যা বলেছিল, এখনো কানে বাজছে…! আর কখনোই দেখা হবে না সাধুর সাথে…। ভালো থাকিস ভাই…।
সাধু অভিনীত ‘ঊন মানুষ’ ও ‘চিকন পিনের চার্জার’ নাটক দুটো শেয়ার করে নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী লিখেন, মানুষ চিরকাল বেঁচে থাকে কাজে।
নির্মাতা আকরাম খান সাধুকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে লিখেন: ব্যক্তিগত ভাবে আমি হুমায়ূন সাধুকে চিনতাম না। মাঝেমধ্যে যখন দেখা হতো ও আমার দিকে তাকিয়ে একটা লাজুক সৌজন্যের হাসি দিত আমিও হাসি দিয়ে সম্ভাষণ জানাতাম। ওর জন্য গর্ব হতো আর একধরণের অনুপ্রেরণাও পেতাম । কিভাবে এত প্রতিকূলতা নিয়ে মানুষটা একটার পর একটা দেয়াল ভেঙে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে । চিত্রগ্রাহক রিপনকে ফারুকির হাতে আমিই তুলে দিয়েছিলাম। রিপন ছিল আমার পরিবারেরই একজন । ক্যানসারে ও মারা যাবার পর গভীর বেদনা বোধ করেছিলাম । হুমায়ুন সাধুর অকাল মৃত্যুর পর আবার সেই পুরানো ক্ষত থেকে রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে। এই মেধাবী মানুষটির পরিবারকে জানাই সমবেদনা আর সারোয়ার ফারুকিকে জানাই ভালোবাসা। এই তথাকথিত অস্তিত্বহীন মানুষটাকে কাছে টেনে তার সামনের আলোকিত জীবনের দরজা খুলে দেবার জন্য।
নির্মাতা অনিমেষ আইচ লিখেন: সাধুর আত্মা শান্তি পাক। ভালোবাসা নিও ভাই।
নির্মাতা মাহমুদ দিদার লিখেন: সাধুর জন্যে পরাণ পুড়ছে। ফেরেশতার সুরত নিয়ে আমাদের লোকালয়ে এসেছিলো সাধু । আহা মায়া! নায়ক হে! বিদায়।
সহকর্মী ও নির্মাতা আশুতোষ সুজন লিখেন, সাধু। তোমার জন্মের সময় কারা হেসেছিল,আর কারা কেদেঁছিল,আমি জানি না।কিন্তু তোমার এই অকাল চলে যাওয়ায়,আমি কাঁদছি …পুরো ছবিয়াল কাদঁছে…শুনতে কি পাও তুমি অদ্ভুত সেই বেসুরো সুর…।
মোস্তফা কামাল রাজের সঙ্গে ছিলো বেশ সখ্যতা। সাধুর মৃত্যুতে রাজ লিখেন: তোমার সাথে আর চ্যাটিং হবে না রাতে। ভালো থাকো তুমি! তোমার সাথে আর কাজটা হলো না!
এ প্রজন্মের নির্মাতা মাবরুর রশিদ বান্নাহ লিখেন: ভাই, আমি বিশ্বাস করি আপনি অনেক অনেক ভালো থাকবেন । একজন ভালো মানুষ আল্লাহ’র কাছে অবশ্যই উত্তম পুরস্কার পাবেন । নিশ্চিত পাবেন। উইল মিট সুন । উই আর কামিং টু, টিল দ্যান ভালো থাইকেন বড় ভাই।