শিরোপা নিয়ে গেল তেরেঙ্গানু

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ক্লাবের বয়স ৬৩ বছর। এত লম্বা সময়ের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলতে এসেছিল মালয়েশিয়ার ক্লাব তেরেঙ্গানু এফসি। এসেই গড়ল ইতিহাস। গ্যালারিভর্তি চট্টগ্রাম আবাহনীর দর্শকদের উল্লাস থামিয়ে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের শিরোপা নিয়ে দেশে ফিরছে ক্লাবটি, ফাইনালে ২-১ গোলে জিতে।

তেরেঙ্গানুর প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা উল্লাসের রাতে হতাশায় মলিন টুর্নামেন্টের প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়ন স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনী। ম্যাচের আগেরদিন সংবাদ সম্মেলনে দলটির কোচ মারুফুল হক বলেছিলেন, তারাই ফাইনালের ফেভারিট।

সেই ‘ফেভারিট’ হওয়ার চাপটাই বুঝি চেপে বসল স্বাগতিকদের। প্রথমার্ধের পাঁচ মিনিটের মধ্যে দুই গোল হজম করে ছন্দ গেল এলোমেলো হয়ে। সেই যে গেল, মাঝে কিছুটা সময় ফিরে আনা গেলেও মূলত ম্যাচটা চট্টগ্রামের জন্য লেখা থাকবে নিজেদের কৌশল নিজেরাই কাজে না লাগাতে পারার আক্ষেপ হিসেবে।

অথচ এই ম্যাচ দেখতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই চট্টগ্রামে সাজ সাজ রব! যতই বিকেল গড়িয়েছে, এমএ আজিজ স্টেডিয়াম মুখী দর্শকের ঢল বেড়েছে। একটা সময় পুরো স্টেডিয়ামই ভরে গেল কানায় কানায়। টিকিট হাতে মাঠের বাইরে হাজার হাজার দর্শকদের দাঁড়িয়ে থাকার ঘটনাও ঘটল এদিন!

নিজেদের দর্শকদের মাতিয়ে রাখার দায়িত্ব নিজেরা বেশ মেটাচ্ছিল চট্টগ্রাম আবাহনী। বল পায়ে ছন্দ তুলে একটু একটু আক্রমণের চেষ্টা ছিল স্বাগতিকদের। তাতে ১৩ মিনিটে একবার সুযোগ এলো, মাঝমাঠ থেকে চিনেদু ম্যাথিউয়ের পাসে পায়ে বল পেলেন রতকোভিচ লুকা, কিন্তু কাজে লাগাতে পারলেন না সুযোগ। গোলরক্ষককে একা পেয়েও বল তুলে দিলেন তার হাতেই।

চট্টগ্রাম ভুল করলেও ১৫ মিনিটে তেরেঙ্গানু নিজেদের সুযোগ কাজা লাগাতে বিন্দুমাত্র ভুল করেনি। বামপ্রান্ত দিয়ে কর্নার নিয়েছিলেন অধিনায়ক লি টাক। তার শট ঠিকমত মাথায় পেলেন হাকিম বিন মামাত। তার বুলেটগতির হেড ঠেকানোর সাধ্য ছিল না স্বাগতিক গোলরক্ষক মোহাম্মদ নেহালের।

প্রথম গোলের ধাক্কা ভোলার আগেই পাঁচ মিনিট বাদে দ্বিতীয় ধাক্কায় টালমাটাল চট্টগ্রাম আবাহনী। এবার আঘাত হানলেন মোহাম্মদ আলিয়াস। ৩০ গজ দূর থেকে ক্রস পেলেন সতীর্থের থেকে, বল পেয়েই ছুটলেন বামপ্রান্ত দিয়ে। তার পথ আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন দুই ডিফেন্ডার, দারুণ ড্রিবলিং করে তাদেরও বোকা বানালেন আলিয়াস। দুরূহ কোনা দিয়ে নিলেন শট, নেহালকে ফাঁকি দিয়ে তা ঠিকই জড়িয়ে গেল জালে।

পাঁচ মিনিটের মধ্যে দুই গোল হজম করে নিজেদের স্বাভাবিক খেলার ধারটাই যেন কমে গেল চট্টগ্রামের। মাঝমাঠ হয়ে গেল এলোমেলো। ডি-বক্সে যাও দু-একবার বল পেলেন ফরোয়ার্ড লুকা, সেটাতেও ভুলে যাওয়ার মতো ফিনিশিং। মূলত এই মন্টেনেগ্রিয়ান ফরোয়ার্ডের ব্যর্থতায় প্রথমার্ধে নিষ্প্রভ থাকল চট্টগ্রাম।

দুই গোলে পিছিয়ে দল, দ্বিতীয়ার্ধে তাই ফর্মেশন বদলে ফেললেন চট্টগ্রাম আবাহনী কোচ। ধরন বদল হওয়ায় খেলায় বাড়ল ধার, তাতেই বাজিমাত। ৪৮ মিনিটে বামপ্রান্ত দিয়ে বল উড়িয়ে বাড়ান জামাল, বল পেয়ে সেটি ডি-বক্সে পাঠান দিদিয়ের চার্লস। সেখান বল পায়ে না রেখে লুকাকে কাটব্যাক করেন ম্যাথিউ। গোলখরায় ভুগতে থাকা লুকা এবার আর ভুল করেননি, বাম পায়ের শটে ঠিকই শোধ দেন এক গোল। প্রথমার্ধে ঝিমিয়ে যাওয়া ম্যাচ পরের অর্ধে জমজমাট লড়াইয়ের অপেক্ষায় তখন।

লড়াই ঠিকই জমে গেল, তবে সেটা ডাগআউটে। মেজাজ হারালেন তেরেঙ্গানুর হাস্যোজ্জ্বল কোচ নাফুজি ও টিম ম্যানেজার। দুজনেই রেফারির সঙ্গে কথার লড়াই জড়িয়ে দেখলেন হলুদ কার্ড।

পরে ৭০ মিনিটে নায়ক হওয়ার সুযোগ লুকার সামনে। ডানপ্রান্ত দিয়ে আরিফুল বল পাস করেছিলেন এ ফরোয়ার্ডের দিকে। কিন্তু তিনি যে শট নিলেন তাতে হতাশই হতে হয় গ্যালারিভর্তি চট্টগ্রাম সমর্থকদের।

সেমিফাইনালে গোকুলমের বিপক্ষে একদম শেষ সময়ে গোল করে দলকে অতিরিক্ত সময়ের খেলায় নিয়ে গিয়েছিলেন আইভরি কোস্টের মিডফিল্ডার দিদিয়ের চার্লস। এদিন দ্বিতীয়ার্ধেই চোটের কারণে তাকে তুলে নিতে বাধ্য হন কোচ মারুফুল। আর প্রথমার্ধে মাঠ ছাড়েন অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার রহমত মিয়া।

মাঝমাঠে দিদিয়েরের অভাবটা ঠিকই টের পেয়েছে স্বাগতিকরা। এদিন তাই হয়নি কোনো রূপকথা। উল্টো শেষদিকে অল্পের জন্য আরেকটি গোল হজম করা থেকে বেঁচে গেছে স্বাগতিকরা। নিজেদের সুযোগ কাজে লাগাতে না পারার ব্যর্থতায় ম্যাচটা তখন হাতছাড়া, মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়েন হাজার হাজার চট্টগ্রাম সমর্থকেরা। তৃতীয় আসরের ফাইনালে প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়নদের হাতে শিরোপা না দেখতে পাওয়ার আক্ষেপ সঙ্গী হল তাদের।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts