বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বিএনপি চায় না যে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফেরত যাক। তারা সেটি চায় না, কারণ রোহিঙ্গারা থাকলে তাদের সুবিধা। তারা রোহিঙ্গাদের নিয়ে রাজনীতি করতে পারে।’
সোমবার বিকেলে ঢাকায় সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ‘ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর দেশের নীতিবিরোধী’-বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন মন্তব্যের দিকে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘ভাসানচরে অত্যন্ত সুন্দরভাবে তাদের (রোহিঙ্গাদের) বাসস্থান নির্মাণ করা হয়েছে। এবং সমস্ত ‘সেফটি মেজার’ নিয়ে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নৌ-বাহিনীর সহায়তায় সেখানে এই কাজগুলো করা হয়েছে। সেখানে যাওয়ার ক্ষেত্রে কারা বিরোধিতা করে আপনারা জানেন। কিছু এনজিও নিজের সুবিধার্থে এর বিরোধিতা করেছিল, সেই এনজিওগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আসলে ভাসানচরে নেওয়ার বিরোধিতা নয়, রোহিঙ্গারা মায়ানমারে ফেরত যাক সেটিরই বিরোধিতা করছেন। কারণ তারা গেলে তো তাদের রাজনীতি করার সুযোগটা থাকে না।’
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবের কাছে আমার প্রশ্ন, যে রোহিঙ্গারা এখন যেখানে আছে, ভাসানচরে তার চেয়ে অনেক ভালো ব্যবস্থাপনা হচ্ছে। তারপরও তারা সেটির বিরোধিতা কেন করেন, এটি আমার বোধগম্য নয়।’
সোমবার মন্ত্রিপরিষদে ‘কিশোর আলো’র অনুষ্ঠানে কিশোর ছাত্র নাইমুল আবরার রাহাত নিহত হবার ঘটনা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজে কিশোর আলো পত্রিকার অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একজন ছাত্রের অসহায়ভাবে মৃত্যুর ঘটনা মন্ত্রিপরিষদে অনির্ধারিত আলোচনায় কয়েকজন উপস্থাপন করলে সবাই এ বিষয়ে উদ্বেগ ও হতাশা ব্যক্ত করেন। যে প্রসঙ্গগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সেগুলো হল, স্কুলে যখন কিশোরদের নিয়ে এ ধরনের অনুষ্ঠান হয়, তখন সেখানে যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে সেজন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল কি না। কারণ, রেসিডেন্সিয়াল মডেলের ছাত্র আবরার অনুষ্ঠানের জন্য টানানো বিদ্যুতের তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। এখানে কি গাফিলতি ছিল, সেটি একটি বিষয়। দ্বিতীয়ত, একজন ছাত্র মারা গেছে তবুও অনুষ্ঠানটা চালিয়ে যাওয়া হয়েছে। তৃতীয়ত, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট রাহাতকে কাছের হাসপাতালে না নিয়ে দূরবর্তী হাসপাতালে নেওয়া হল কেন! চতুর্থত, সেই ছাত্র মারা যাওয়ার পর স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়নি। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানতে পেরেছে হাসপাতাল থেকে। হাসপাতালে যখন তার লাশ নিয়ে যাওয়া হয়, তখন তার পকেটে যখন রেসিডেন্সিয়াল মডেলের মনোগ্রাম দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্কুল বা কলেজের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আর আপনারা জানেন, কারো যদি এভাবে অপমৃত্যু হয়, তাহলে সেই লাশের অবশ্যই পোস্টমর্টেম করতে হয়। পোস্টমর্টেম না হলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের লিখিত অনুমোদন লাগে। সেটি না নিয়ে পোস্টমর্টেম ছাড়াই লাশটি দাফন করা হয়েছিল। এই বিষয়গুলো সেখানে আলোচনা হয়েছে।’
সাংবাদিকরা এ বিষয়ে কি পদক্ষেপ গৃহীত হবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত হবে, তদন্ত হয়ে কাদের গাফিলতি ছিল, কিভাবে এই ঘটনা ঘটেছে এবং কেন একজন ছাত্র মৃত্যুবরণ করার পরও অনুষ্ঠান চালিয়ে যাওয়া হল, সেই বিষয়গুলো নিশ্চয়ই বেরিয়ে আসবে। যেহেতু বিষয়টি তদন্তাধীন এজন্য আমি এ বিষয়ে কিছুই বলতে চাইনা।’
এ সময় ঢাকার সাবেক মেয়র ও সাবেক সংসদ সদস্য সাদেক হোসেন খোকার মৃত্যুর সংবাদ পৌঁছালে, মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ তার গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি তার বিদেহী আত্মার শান্তিকামনা করছি। তিনি ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন বিধায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাকে আনার জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছিল। ইতোমধ্যেই তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তার শোকসন্তপ্ত পরিবার যেন এই শোক সইতে পারে।’
এরপরই তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন সভাপতি আবু জাফর সূর্য ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরীর নেতৃত্বে তাদের নির্বাহী কমিটির সদস্যরা এক সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হয়। তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, তথ্যসচিব আবদুল মালেক, প্রধান তথ্য অফিসার সুরথ কুমার সরকার, প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন সভাপতি মোল্লা জালাল ও মহাসচিব শাবান মাহমুদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।