বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ঢাকার সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা নিউ ইয়র্কের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। ক্যান্সারে আক্রান্ত খোকা গত পাঁচ বছর ধরেই নিউ ইয়র্কে অবস্থান করছিলেন। গত ১৮ অক্টোবর থেকে তিনি ভর্তি ছিলেন ম্যানহাটনের মেমোরিয়াল স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টারে। তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর।
ছাত্র আন্দোলন থেকে গেরিলা যোদ্ধা; ওয়ার্ড কমিশনার থেকে মেয়র-মন্ত্রী; বাম থেকে মধ্য ডান দলের রাজনীতিক, আবার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যেও জনপ্রিয়তা- এমন অনেক বৈশিষ্ট্য যেখানে মিলেছে, সে হলেন সাদেক হোসেন খোকা।
দলের গণ্ডি ছাড়িয়ে অন্য দলেও যেমন জনপ্রিয় ছিলেন তিনি, এলাকার মানুষেরও ছিলেন কাছের মানুষ। তাকে বর্ণনা করতে গিয়ে এক সময়ের সহকর্মী আবুল হাসনাত বললেন, “হি ওয়াজ ম্যান অব দি পিপলস।”
খোকার দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য পুরান ঢাকার আবুল হাসনাত ঢাকার প্রথম মেয়র। ওই পুরান ঢাকা থেকেই জাতীয় রাজনীতিতে উঠে এসেছিলেন খোকা, ছিলেন ক্রীড়া সংগঠকও। উত্তাল বাহান্নোয় জন্ম নেওয়া খোকা ঘটনাবহুল রাজনৈতিক জীবন পেরিয়ে সোমবার চিরবিদায় নিয়েছেন ৬৭ বছর বয়সে।
পাঁচ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে সেখানেই ক্যান্সারের চিকিৎসা করাচ্ছিলেন বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান। সরকারবিরোধী বিএনপি তাদের এই নেতার দেশে ফেরার আকুতির কথা জানিয়েছিলেন সরকারকে; তাতে সাড়াও মিলেছিল। কিন্তু তার আগেই জীবনাবসান ঘটল তার। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খোকার লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।
সাদেক হোসেন খোকার জন্ম ১৯৫২ সালের ১২ মে মুন্সীগঞ্জে সৈয়দপুরে। তবে বাবা-মায়ের সঙ্গে পুরান ঢাকার গোপীবাগে তার বেড়ে ওঠা। তার বাবা এম এ করীম ছিলেন প্রকৌশলী ছিলেন। শিশুকাল থেকেই বন্ধু-বান্ধবদের নিয়েই ছিল খোকার জীবন। এই বন্ধুত্বের সূত্র ধরেই যাওয়া মুক্তিযুদ্ধে, এই বন্ধুদের সঙ্গে মিলেই গড়ে তোলেন ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব।
গোপীবাগ রামকৃষ্ণ মিশন স্কুল, কলতাবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জয়দেবপুর রানী বিলাস মনি উচ্চ বালক বিদ্যালয়, জগন্নাথ কলেজ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যান খোকা; মনোবিজ্ঞানে পড়াশোনা করেন তিনি।
ছাত্র আন্দোলনে নাম লিখিয়ে খোকা হয়ে উঠেছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের নেতা। পরে যোগ দেন বাম আন্দোলনে; রুশ-চীন দ্বন্দ্বে কমিউনিস্ট পার্টির ভাঙন দেখা দিলে তিনি নাম লেখান চিনপন্থি শিবিরে।
ছাত্র আন্দোলনের পর কাজী জাফর আহমেদ নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস লীগে (ইউপিপি) যোগ দিয়েছিলেন খোকা। পরে যোগ দেন ন্যাপ ভাসানীতে।জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পরে যখন দলের হাল ধরেন খালেদা জিয়া, চিনপন্থি অনেক বাম নেতাকে অনুসরণ করে তখন ১৯৮৪ সালে বিএনপিতে যোগ দেন খোকা।
শুরু হয় তার রাজনীতির আরেক অধ্যায়। প্রথমে ওয়ার্ড কমিশনার হন সিটি করপোরেশনে; ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে সূত্রাপুর-কোতোয়ালি আসনে শেখ হাসিনাকে হারিয়ে দিয়ে সারাদেশের নজরে আসেন তিনি। ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনে জয় ধরে রাখেন তিনি; এমনকি ১৯৯৬ সালে যখন ঢাকায় বিএনপি অন্য সব আসনে হেরেছিল, তখনও ধানের শীষকে জয়ী রেখেছিলেন খোকা।
১৯৯১ সালে সরকার গঠনের সময় ক্রীড়া সংগঠক খোকাকে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী করেন খালেদা জিয়া। তৃণমূল থেকে উঠে আসা খোকা সহ সাংগঠনিক পদ দিয়ে শুরু করে নানা পদ পেরিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত। এর আগে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক, সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন দীর্ঘদিন। জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতিও ছিলেন তিনি।