বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে তিন জেলায় এক নারীসহ চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে পটুয়াখালী ও খুলনায় ঘর এবং গাছচাপা পড়ে নারীসহ তিন জন ও সাতক্ষীরায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে একজন মারা যান। শনিবার রাতে ও রবিবার সকালে পৃথক সময়ে এ ঘটনাগুলি ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, প্রমিলা মণ্ডল সাইক্লোন শেল্টার থেকে দক্ষিণ দাকোপ গ্রামের নিজ বাড়িতে প্রয়োজনীয় জিনিস নিতে আসেন। তিনি ঘরে ঢুকার পর শিরিষ ও নারকেল গাছ ঘরের ভেঙে পড়লে তিনি ঘর চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের চার ঘণ্টার তাণ্ডবে খুলনার উপকূলীয় উপজেলা দাকোপ ও কয়রার দুই সহস্রাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত এবং গাছপালা লণ্ড-ভণ্ড হয়ে গেছে।
খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, ঘূণিঝড়ে দাকোপ উপজেলায় প্রমিলা মণ্ডল নামে একজন নারী নিহত হয়েছেন। তবে জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি থাকায় বড়ো ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
এছাড়া দিঘলীয়া উপজেলার সেনহাটির কাতানী পাড়ার আলমগীর হোসেন (৩৫) নামে এক ব্যক্তি গাছচাপা পড়ে মারা যান। রবিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।আলমগীর হোসেন ওই গ্রামের সফিউদ্দীন মিস্ত্রির ছেলে।
পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জের উত্তর রামপুরা গ্রামের হামেদ ফকির (৬০) গাছচাপা পড়ে মারা যায়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মির্জাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত আনোয়ার।
সাতক্ষীরা জেলায় বুলবুলের তাণ্ডব দেখে দাবুড়া আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফেরার পথে আবুল কালাম নামে এক ব্যক্তি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। রবিবার সকাল ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
লণ্ডভণ্ড সুন্দরবন: প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। শনিবার রাত ৩ টার দিকে বুলবুলের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে সুন্দরবন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দুই লক্ষাধিক মানুষ।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ দুর্বল হয়ে এখন গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে বলে আবহাওয়া অধিদফতরের এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ আরও সামান্য উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে আজ সকাল ৬টায় বাগেরহাট, বরিশাল ও পটুয়াখালী অঞ্চলে গভীর নিম্নচাপ আকারে অবস্থান করছে।
আবহাওয়া অফিস জানায়, এটি আরও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমশঃ দুর্বল হতে পারে। গভীর নিম্নচাপটির প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বায়ুচপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে।
মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
গভীর নিম্নচাপটির প্রভাবে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা ফরিদপুর, মাদারীপুর, কুমিল্লা, ঢাকা, সিলেট ও ময়মনসিংহ জেলাসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত নিরাপদ থাকতে বলা হয়েছে।