বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ চলতি ১৪২৬ বঙ্গাব্দে প্রথমবারের মতো আশ্বিন মাসের গণনা শুরু হয় ৩১ দিন হিসাবে। বাংলা একাডেমি দীর্ঘদিনের চেষ্টায় বাংলা বর্ষপঞ্জির এই সংস্কার করেছে। জাতির ইতিহাসের গৌরবময় দিনগুলো বাংলা ও গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জিতে অভিন্ন তারিখে সমন্বয় করতেই বাংলা বর্ষপঞ্জিতে এই সংস্কার আনা হয়েছে। সে হিসেবেই আজ শনিবার পয়লা অগ্রহায়ণ।
কৃষি প্রথা যখন চালু হয়েছিল, নবান্ন উৎসবও তখন থেকেই। উৎসবটি মূলত ধানকে কেন্দ্র করেই। ধান আমাদের সংস্কৃতি ও জীবনধারার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাংলাদেশে চাষ হয় আমন, আউশ ও বোরো ধানের। বর্তমানে প্রযুক্তির সাহচর্যে উচ্চফলনশীল আরও কিছু ধানের ফলনও হচ্ছে।
গ্রামে যাদের শিকড় কেবল তারাই নবান্ন উৎসবের মর্মার্থ অনুধাবনে সক্ষম। নতুন ফসল ঘরে তোলার আনন্দই আলাদা। এ সময় কৃষকদের চোখে ভাসে হাসির ঝিলিক।
নবান্ন উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি। হেমন্ত এলে গোলা ভরা ধানে ঘর ভরে তোলার যে আনন্দে ভাসতে থাকে কৃষকের মন, তার অবসান হয় অগ্রহায়ণে। নতুন ধানের ম-ম গন্ধে ভরে ওঠে কৃষক বাড়ির আঙিনা । এ সময় নতুন ধানের চাল দিয়ে রান্না উপলক্ষে গ্রামবাংলার বাড়িতে বাড়িতে উৎসবের আমেজ বহমান থাকে। থাকে পিঠে-পুলিরও আয়োজন। আপনজনদের আসা-যাওয়া বেড়ানোর এটাই যেন সঠিক মৌসুম।
‘আজ নতুন ধানে হবে রে নবান্ন সবার ঘরে ঘরে’- কৃষকের মাঠে এখন সোনারঙা ধানের ছড়াছড়ি। সারা দেশেই আমন ধান কাটার উৎসব শুরু হয়ে গেছে। নতুন ধানের ভাত মুখে দেওয়ার আগে মিলাদ পড়ানো হয়। মসজিদে শিন্নি দেওয়ার রেওয়াজও আছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের কৃষকের ঘরে পূজার আয়োজনও চলে। এসব এখন যে একেবারেই হারিয়ে গেছে তা কিন্তু নয়।
বাংলাদেশ উৎসবের দেশ। বাংলাদেশে এখনো নতুন ধানের চাল দিয়ে রান্না উপলক্ষে নবান্ন উৎসব হয়। কোনো কোনো অঞ্চলে ফসল কাটার আগে বিজোড় সংখ্যক ধানের ছড়া কেটে নিয়ে ঘরের চালে বেঁধে রাখে এবং বাকি অংশ চাল করে নতুন চালের পায়েস করে নবান্ন করে থাকে।
একসময়ে নবান্ন উৎসবে কাকবলি হতো। একটি কলার ডোগায় নতুন চাল, কলা, নারকেল নাড়ু কাককে খাওয়াতে হয়। প্রচলিত বিশ্বাস হচ্ছে, কাকের মাধ্যমে ওই খাদ্য মৃতের আত্মার কাছে পৌঁছে যায়। এই নিয়ে ছড়া আছে। ছোট ছেলে-মেয়েরা ছড়া কেটে দাঁড় কাককে নিমন্ত্রণ করত। ছড়াটি এরকম: ‘কো কো কো,/ আমাগো বাড়ি শুভ নবান্ন।/ শুভ নবান্ন খাবা, কাকবলি লবা,/ পাতি কাউয়া লাঠি খায়,/দাঁড় কাউয়া কলা খায়,/কো কো কো,/ মোর গো বাড়ি শুভ নবান্ন।’
কাকবলির পর সবাই একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া করত। এখানেই উৎসব শেষ হতো না, উৎসব উপলক্ষে কুড়ি থেকে চল্লিশ পদের রান্না হতো। এখন সেসব নেই। থাকলেও ছিটেফোঁটা মাত্র। আধুনিকতার ঝড়ে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাণের উচ্ছল আবেগ। ক্রমেই মাটির স্পর্শ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে মানুষ।