টাঙ্গাইলে লবণ সংকটের গুজব

আরিফুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: লবণের সংকট পড়বে এমন গুজব ছড়িয়ে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলায় ইতোমধ্যেই লবণ অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। লবণ সংকট পড়বে এমন গুজব বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সোমবার (১৮ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকে ক্রেতারা লবণ কিনতে দোকানে গিয়ে ভির জমাচ্ছে। কোনো কোনো ক্রেতা ৫ প্যাকেট থেকে এক বস্তা পর্যন্ত লবণ ক্রয় করছেন।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সকাল থেকেও জেলার বিভিন্ন এলাকায় একই চিত্রের খবর পাওয়া যাচ্ছে।

জানা যায়, টাঙ্গাইল সদর, বাসাইল, ভুঞাপুর, দেলদুয়ার, সখীপুর, গোপালপুরসহ বিভিন্ন উপজেলায় এমন গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। আর এ গুজবে কান দিয়ে শহর থেকে শুরু করে  এলাকার সাধারণ মানুষ লবণ কিনতে দোকানে দোকানে ভির করছে। ফলে অস্থির হয়ে উঠছে স্থানীয় বাজারগুলো। আর কোনো কোনো অসাধু ব্যবসায়ীরা এ গুজরেব সুযোগ নিয়ে ৩০ টাকা প্যাকেটের লবণ ৫০ থেকে ৭৫ পর্যন্ত টাকা দরে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আবার কেউ কেউ লবণ মজুদ থাকতেও আরও বেশি দামের আশায় লবণ নেই বলে ক্রেতাদের ফিরিয়ে দিচ্ছে।

এদিকে স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সকালে জেলা পর্যায়ের মহাজনদের কাছে লবণ ক্রয়ের জন্য চাহিদা পাঠিয়ে বলেও জানান গেছে।

ভুঞাপুরের রফিকুল ইসলাম, রতন মিয়া, জিয়া, মাজেদুলসহ অনেক লবণ ক্রেতা জানান, শুনেছি পেঁয়াজের সাথে লবনের দাম বেড়েছে। তাই বাজার থেকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি প্যাকেট লবণ কিনে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি। যাতে পরবর্তীতে বেশি দামে লবণ কিনতে না হয়।

এদিকে, বাসাইল বাজারে প্রতি পেকেট ৫০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রির খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামছুন নাহার স্বপ্না বণিক সমিতির কর্মকর্তাদের নিয়ে কৃত্রিম সংকট নিরশনে বৈঠক করেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামছুন নাহার স্বপ্না বলেন, ‘বণিক সমিতির নেতাদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। বৈঠকে লবণের কোনো সংকট নেই বলে সঠিক দামে লবণ বিক্রির  নির্দেশনা প্রদান করা হয়। সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে স্ব-স্ব স্থানীয় বাজারে ব্যবসায়ীদেরকে সতর্ক করার নির্দেশ দেয়া হয়। এ সিদ্ধান্তের পর যদি কোনো ব্যবসায়ী অতিরিক্ত দামে লবণ বিক্রি করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এদিকে, সখীপুরে অতিরিক্ত মূল্যে লবণ বিক্রির অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাবাস খান নামের এক মুদির দোকানদারকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) আয়শা জান্নাত তাহেরা এ অভিযান পরিচালনা করেন।
শাবাস খান সখীপুর পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড এলাকার হাজী আবদুর রহমানের ছেলে। তিনি পৌর শহরের রেনাজ সিনেমা হল রোডের মুদির দোকানদার।

ভুঞাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা নাসরীন পারভীন বলেন, ‘লবণ বিক্রি বেড়েছে এমন খবর পেয়ে বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এতে ব্যবসায়ীদের একজন ক্রেতার কাছে দুই কেজির বেশি লবণ বিক্রি না করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’

লবণের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টাঙ্গাইল ছয়আনী ও পার্ক বাজারের লবণ বিক্রেতাদের দোকানে অভিযান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রোকুনুজ্জামান।

রোকুনুজ্জামান বলেন, ‘লবণের দাম বাড়ার মত কোন কারন নেই। লবণের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি সম্পুর্ণ গুজব। একটি সিন্ডিকেট সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য অপপ্রচার চালাচ্ছে। এ ব্যাপারে আমরা তৎপর রয়েছি।’

 

Print Friendly

Related Posts