বিশেষ প্রতিবেদক: আজ ২১ নভেম্বর সকালে মতলব-উত্তর উপজেলার সম্মেলন কক্ষে গ্রাম আদালত বিষয়ক নারীদের দিনব্যাপী এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর স্থানীয় সরকার উপপরিচালক মোহাম্মদ শওকত ওসমান, উপসচিব। এতে সভাপতিত্ব করেন মতলব-উত্তর উপজেলার মহিলা ভাইস-চেয়ার পারসন মোচ্ছাঃ শাহিনা আক্তার।
কর্মশালায় আরো উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকারের গ্রাম আদালত বিষয়ক প্রকল্পের ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর (ডিএফ) নিকোলাস বিশ্বাস, অত্র প্রকল্পের সহযোগী সংস্থা তথা ‘ব্লাস্ট’ -এর জেলা সমন্বয়কারী মোঃ আমিনুর রহমান ও উপজেলা সমন্বয়কারী মোঃ সগীর আহম্মেদ সরকার। দিনব্যাপী এ কর্মশালায় মতলব-উত্তর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ২৪ জন নির্বাচিত ইউপি মহিলা-সদস্য সহ মোট ৩৫ জন অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি উপসচিব মোহাম্মদ শওকত ওসমান বলেন, নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হলে গ্রাম আদালতে অবশ্যই নারী-বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। আদালতে শুনানীকালীন এমন কোন শব্দ ব্যবহার করা যাবে না যাতে আদালতে উপস্থিত মহিলাগণ অস্বস্থ্যিবোধ করেন। এ ব্যাপারে আদালতে উপস্থিত বিশেষতঃ পুরুষদের শব্দ চয়ন ও ব্যাবহারে সংবেদনশীল হতে হবে। নারীদের এমন কিছু বিষয় থাকে যা আদালতের প্রকাশ্য শুনানীতে উপস্থাপন করা সম্ভব হয় না। এ ক্ষেত্রে বিচারিক-প্যানেল সদস্যদের বিশেষ উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্যবৃন্দ, সচিব ও আদালত সহকারীকে আদালতের পরিবেশ সুশৃংখল ও নারী-বান্ধব করতে হবে। এর ব্যাত্যয় ঘটলে নারীদের পক্ষে গ্রাম আদালতে এসে বিচার চাওয়া ও পাওয়ার সংখ্যা কমে যাবে। এজন্য ইউনিয়ন পরিষদকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
উপসচিব মোহাম্মদ শওকত ওসমান আরো বলেন, বিভিন্ন সভা-সমাবেশের মাধ্যমে এলাকার নারীদের গ্রাম আদালতের বিষয়ে সচেতন করতে হবে। এ ব্যাপারে ইউনিয়নের নির্বাচিত নারী সদস্যদের বিশেষ ভূমিকা নিতে হবে। গ্রাম আদালত একটি সরকারী সেবা; তাই এর প্রচার-প্রসারে তথ্য আপাদেরও উদ্যোগ নিতে হবে। গ্রাম আদালতে শুধু বিচার চাওয়াই নয় বরং বিচারিক-প্যানেলেও নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। গ্রাম আদালত আইনে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, কোন মামলায় নারীর স্বার্থ জড়িত থাকলে গ্রাম আদালতের বিচারিক-প্যানেলে নারী সদস্যের মনোনয়ন বাধ্যতামূলক। এছাড়াও গ্রাম আদালতের যে কোন মামলার ক্ষেত্রে নারীদের বিচারিক-প্যানেলে অংশগ্রহণে কোন বাঁধা নেই। সুতরাং, গ্রাম আদালতে নারীরা যেমনি বিচার চাইতে ও নিতে পারবেন তেমনি আদালতে আইন অনুযায়ী বিচারকের আসনেও বসতে পারবেন।
কর্মশালার মূল আলোচক গ্রাম আদালতের ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর নিকোলাস বিশ্বাস বলেন, গ্রাম আদালতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হলে আমাদের নানামূখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ে বিচার-ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য বাংলাদেশ সরকার আইন করে দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে গ্রাম আদালত চালু করেছে। শুধু তাই নয়, গ্রাম আদালত আইন অনুযায়ী সঠিকভাবে পরিচালনায় দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ সহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এখন প্রয়োজন নিজের অবস্থান থেকে ভূমিকা পালন করার। এখানে নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। গ্রাম আদালত নারী-বান্ধব করতে পারলে বিচার চাওয়া ও পাওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাম আদালত নারীদের জন্য বড় আশ্রয়স্থল হয়ে উঠতে পারে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি’র (ইউএনডিপি) সহযোগীতায় স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত এই কর্মশালায় নারী-বিষয়ক বিশেষ উপস্থাপনা তুলে ধরেন জেলা সমন্বয়কারী মোঃ আমিনুর রহমান এবং কর্মসূচিটি সঞ্চালনা করেন সংশ্লিষ্ট উপজেলা সমন্বয়কারী মোঃ সগীর আহম্মেদ।।