ওসি মোয়াজ্জেমকে ৮ বছরের সাজা

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের আট বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় পৃথক দুই ধারায় আট বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬ ধারায় পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা এবং ২৯ ধারায় তিন বছর কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে তাকে আরো ৬ মাস কারাগারে থাকতে হবে। আর এ জরিমানার টাকা নুসরাতের পরিবারকে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন।

ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে সকাল পৌনে ১০টার দিকে কাশিমপুর কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় ঘোষণার সময় তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানি করেন ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। এ বিষয়ে রাফিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। জিজ্ঞাসাবাদকালে ধারণ করা ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগে মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

গত ২১ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ২৮ নভেম্বর রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করা হয়।

গত ১২ নভেম্বর মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। মামলাটিতে ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর ১৪ নভেম্বর নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন ওসি মোয়াজ্জেম।

গত ১৫ এপ্রিল মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ মেয়েটিকে তার কক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করেন বলে অভিযোগ উঠলে তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন অধ্যক্ষ এবং ছাত্রীকে থানায় নিয়ে যান। ওই সময় ওসি নিয়মবহির্ভূতভাবে জেরা করতে করতেই অনুমতি ছাড়াই রাফির বক্তব্য ভিডিও করেন। পরবর্তীকালে ওই ভিডিও ডিজিটাল ফেসবুক ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়।

প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, ওসি অত্যন্ত অপমানজনক এবং আপত্তিকর ভাষায় রাফিকে একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছেন। এমনকি ভিডিওর একপর্যায়ে দেখা যায়, রাফিকে বুকে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি করেছে কি না, সে কথা ওসি জিজ্ঞেস করেন, যা অত্যন্ত মানহানিকর।

তিনি অভিযোগ করেন, অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ ও মামলা তুলে নেয়ার জন্য গত ৬ এপ্রিল মুখোশ পরা চার-পাঁচজন ছাত্রী রাফিকে চাপ প্রয়োগ করলে রাফি মামলা তুলে নিতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর তার গায়ে আগুন দিয়ে মুখোশ পরা ছাত্রীরা পালিয়ে যায়। পাঁচ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে রাফি মারা যান।

ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন নিয়মবহির্ভূতভাবে অনুমতি ছাড়াই নুসরাত জাহান রাফির ভিডিও ধারণ করে ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচার করে এবং অপমানজনক ও আপত্তিকর ভাষা প্রয়োগ করে মানহানি করেছেন, যা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ শেষে মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। রীমা সুলতানা মামলাটি তদন্ত করে ২৩ মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

ওই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। পরোয়ানা জারির ২০ দিন পর ১৬ জুন মোয়াজ্জেম হোসেনকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

উল্লেখ্য, নুসরাত হত্যা মামলায় গত ২৪ অক্টোবর ১৬ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ফেনীর আদালত।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts