সাভার-ধামরাইর মহাসড়কে অনুপযোগী গাড়ির ছড়াছড়ি, ঘটছে দুর্ঘটনা

রাসেল হোসেন, সাভার: ঢাকার সাভার ধামরাইয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চলছে চার্জের ব্যাটারিচালিত রিকশা, হ্যালো বাইক, ইজি বাইক নামে বিভিন্ন নামে অটোরিকশা। দূর পাল্লার বাস, ট্রাক, লেগুনার সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে এসব যানবাহন। আর ঘটছে দুর্ঘটনা।

এছাড়াও চলছে হাজারো ফিটনেসবিহীন গাড়ী। বিভিন্ন কলকারখানায় শ্রমিকদের আনা নেওয়ার জন্য এই সব ফিটনেসবিহীন গাড়ি ব্যবহার করা হয়। এই যানবাহনগুলো শুধু কারখানার শ্রমিকদের যাতায়াতের কাজেই ব্যবহার করা হয় না , তারা যাত্রী নামিয়ে আসার সময় আবার অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের জন্য যাত্রী আনা-নেওয়া করে থাকে। এতেও রাস্থায় যানজট লেগে যায় এবং দুর্ঘটনার স্বীকার হয় সাধারণ যাত্রীরা। দেখা যায়, অটো রিকশা, ইজি বাইক, হ্যালো বাইক, ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলার কারণে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে।

সরেজমিনে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, সাভারের আমিন বাজার, হেমায়েতপুর সাভার থানা রোড, রেডিও কলোনি, নবীনগর, পল্লী বিদ্যুৎ, বাইপাইল, ভলিভদ্র এলাকায় বিভিন্ন সময়ে যে সব দুর্ঘটনা ঘটে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার শিকার হয় ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক আর ফিটনেস বিহীন বাস ট্রাক। আর ধামরাইয়ের বাটা গেইট সংলগ্ন মোড়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে এসব ছোট যানবাহন।

এছাড়াও ধামরাই থানা রোড, ঢুলিভিটা, জয়পুরা, কালামপুর, শ্রীরামপুর বাসষ্ট্যান্ড, বাথুলি, বারবাড়িয়াতে দেখা যাচ্ছে এসব দৃশ্য। ফলে মাঝে মাঝেই ঘটছে দুর্ঘটনা। অটোরিকশার চালকরা মানছে না কোন নিয়ম, করছে না জীবনের মায়া। ভয়-ভীতি ত্যাগ করে মহাসড়কে চালিয়ে যাচ্ছে এসব যানবাহন। অটো রিকশা, হ্যালো বাইক, ইজি বাইক আর ফিটনেসবিহীন গাড়ী যদি মহাসড়কে না চলত, যদি মহাসড়কে না উঠতে পারতো, তবে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া অনেকাংশেই সম্ভব হতো।

ধামরাই থানা রোডে প্রেস ক্লাবের সামনে চায়ের দোকানদার কবীর হোসেন বলেন, সৌখিন পরিবহনের সাথে একটি অটো রিকশার ধাক্কায় যাত্রীবাহী বাসের প্রায় ১৫ জনের মত যাত্রী আহত হয়েছিল। এছাড়াও ধামরাই বাটা গেট সংলগ্ন এলাকায় তিন চাক্কার অটো রিকশা ছয়বাড়িয়া থেকে মহাসড়কে উঠার সময় যাত্রীবাহী বাসের সাথে ধাক্কায় রিকশাটি ভেঙে যায় এবং চালক মারাত্মকভাবে আহত হয়। অটোরিকশা চালকের একটি পা ভেঙে যায়। এর কিছুদিন পূর্বে ধামরাই আমতলী আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক সোহেল হোসেনসহ তার সহযোগী বাটা গেট এলাকায় ইজি বাইকের সাথে সংঘর্ষে মারাত্মকভাবে আহত হন এবং তার সাথে থাকা ব্যক্তির একটি পা ভেঙে যায়। শ্রীরামপুর এলাকায় ইজি বাইকের সাথে মানিকগঞ্জ থেকে একটি পিকনিকের বাসের সাথে ধাক্কা খেয়ে বাসের ৩২ জন শিক্ষার্থীই আহত হয়েছিল।

গত দুদিন আগেও অটোরিকশার চাপায় ফাতেমা নামে এক মেয়ের মৃত্যু হয়। অক্টোবর মাসের ২৩ তারিখে জয়পুরা এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় অতশী ফ্যাশন লিমিটেড কারখানার শ্রমিক তাকিয়া আক্তার নামে ৬ মাসের গর্ভবতী এক নারী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। একটি কারখানার যাত্রীবাহী বাস ঘুরানোর সময় এ দুর্ঘটনার স্বীকার হন এই গার্মেন্টস কর্মী। এ রকম দৃশ্য প্রায়ই চোখে পড়ে।

স্থানীয়দের দাবি, যাতে এই হ্যালো বাইক, ইজি বাইক, ও বিভিন্ন কারখানার ফিটনেসবিহীন গাড়ী ঢাকা আরিচা মহাসড়কে না উঠতে পারে সেদিকে প্রশাসনের নজর থাকতে হবে। এই সব যানবাহনের জন্য রাস্থায় গাড়ীর দীর্ঘ যানজট লেগে যায়। অপরদিকে, দুর্ঘটনার কারণও হয়ে থাকে এই সব যানবাহনের কারণে।আবার বেশিরভাগ যানবাহনের চালকদের নেই কোন লাইসেন্স। লাইসেন্সবিহীন এই সব যানবাহন মহাসড়কের উপর দিয়ে অনায়াসে চলছে।

এ ব্যাপারে প্রাইভেটকার চালক আলমগীর হোসেন বলেন, আমরা ড্রাইভাররা বড়ই অসহায়। এর কারণ রাস্তায় যদি আমরা কোন দুর্ঘটনা ঘটাই তাহলে আমাদের শাস্তির শেষ নেই, সেটা মৃত্যুদন্ড পর্যন্ত গড়ায়। আর ব্যাটারি চালিত রিকশা, ইজিবাইক বা থ্রি হুইলার গাড়ি যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটায় তাদের কোন শাস্তি হয় না। আর এসব ছোট যানবাহন মহাসড়কে ওঠার কারণে এখন দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। এর কারণ এরা রাস্তা পারাপারের সময় হঠাৎ শুধুমাত্র হাতের সিগনাল দিয়ে রাস্তা পার হয়ে যায়। এসময় এদের রক্ষা করতে গিয়ে আমাদের শিকার হতে হয় বড় ধরনের দুর্ঘটনার।এরা মহাসড়কে বেপরোয়া গতিতে চালায়। আর এদের কারণে মহাসড়ের বাসস্ট্যান্ডগুলোতে সব সময় যানজট লেগে থাকে। তাই এদের যদি আমাদের মত লাইসেন্সের আওয়ায় আনা যায় এবং এদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় তাহলে এদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।অন্যথায় এদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।

এ বিষয়ে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (সাভার সার্কেল) ফরিদ হোসেন বলেন, আমার জনশক্তি কম থাকায় ধামরাই থানা পুলিশ এ বিষয়টি অনেকটা দেখে থাকে। এসব ছোট যানবাহন যাতে মহাসড়কে না উঠতে পারে সেদিকে সবসময় খেয়াল রাখার চেষ্টা করি।

এ বিষয়ে গোলড়া হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) লুৎফর রহমান বলেন, আমরা সব সময়ই চেষ্টা করি হ্যালো বাইক, ইজি বাইক, তিন চাকার অটো রিকশা যেন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে না উঠতে পারে। আমাদের সামনে পড়লে আমরা তা ধরে এনে এক মাস আটকে রাখি। এরপর ৪৭০০ টাকা জরিমানা দিয়ে তা ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। তবে মহাসড়কে ছোট যান যদি না চলে তবে দুর্ঘটনা অনেকটাই কমে যাবে এবং এর জন্য মানুষের সচেতনা বাড়াতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts