লাল-সবুজদের ১৯ স্বর্ণ পদক জয়
বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ সাউথ এশিয়ান গেমসে ছেলেদের ক্রিকেট থেকে সোনা এনেছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কাকে ৭ উইকেটে হারিয়ে স্বর্ণালী হাসিতে মাতে সৌম্য-শান্তদের অনূর্ধ্ব-২৩ দল। সোমবার লাল-সবুজদের পঞ্চম সেরার পদক এটি। বাকি চারটি এসেছে আর্চারির ইভেন্টে। যার মধ্য দিয়ে নিজেদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ পদক অর্জনের রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ।
নেপালের কাঠমান্ডু ও পোখারায় চলছে এসএ গেমসের ১৩তম আসর। নবম দিনে ছেলেদের ক্রিকেটের স্বর্ণ পদক আনা পর্যন্ত মোট ১৯টি সোনার হাসি বাংলাদেশের নামের পাশে। লাল-সবুজদের এসএ গেমস ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ সংখ্যক স্বর্ণ পদক জয়ের কীর্তি। আগের সেরা ছিল ১৮ সোনার।
দেশের বাইরে বসা গেমসে বাংলাদেশের আগের সেরা সোনার সাফল্য ছিল ১৯৯৫ সালের মাদ্রাজ আসরে, সেবার অর্জনে ছিল ৭ সোনা। দেশের মাটিতে হওয়া গেমসে অবশ্য তারচেয়ে বেশি স্বর্ণ এসেছিল ১৯৮৫ আসরেই, সেবার বাংলাদেশ জিতেছিল ৯টি সোনা।
পরে ১৯৯৩ সালে আবারও ঘরের মাটিতে আসর বসিয়ে ১১টি সোনা জিতে নিজেদের ইতিহাসের নতুন অধ্যায় লেখে লাল-সবুজরা। বাংলাদেশ সেটিও ছাপিয়ে যায় ২০১০ সালে, ঘরের মাটিতে ১৮টি সোনার পদক জিতে। ২০১৯-এ এসে তো দেশে-বিদেশে মিলিয়ে সব রেকর্ডই নতুন করে লিখলেন অ্যাথলেটরা।
সোনাঝরা যাত্রার শুরুটা করেছিলেন দিপু চাকমা, তায়কোয়ান্দোতে। সবশেষটি এলো ছেলেদের ক্রিকেটে। মেয়েদের ক্রিকেটেও স্বর্ণ এনেছেন সালমা-জাহানারা।
এক নজরে বাংলাদেশের সব সোনার গল্প-
ছেলেদের ক্রিকেট: শ্রীলঙ্কাকে ৭ উইকেটে হারিয়ে সেরা সাফল্য এনেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ দল। লঙ্কানরা শুরুতে ব্যাট করে ১২২ রান তোলে। জবাবে টাইগাররা জয়ে নোঙর করে ১১ বল আর ৭ উইকেট হাতে রেখেই।
মেয়েদের ক্রিকেট: শ্রীলঙ্কাকে রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে ২ রানে হারিয়ে গেমসের অষ্টম দিনে সোনা এনেছে টিম টাইগ্রেস। শুরুতে ব্যাট করে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ দলে সবে ৯১ রানই জমাতে পেরেছিল। জবাবে শেষ বলে গড়ানো ম্যাচে দুই রান আগে আটকে লঙ্কানরা।
আর্চারি: এই ইভেন্টে ১০টি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সবকটিতেই সোনার হাসিতে মেতেছে বাংলাদেশ। সোমবার এসেছে যার ৪টি সাফল্য। সকালে কম্পাউন্ড নারী এককের ফাইনালে লঙ্কান প্রতিপক্ষকে ১৪২-১৩৪ স্কোরে পেছনে ফেলে দিনের প্রথম সোনা উপহার দেন সুমা বিশ্বাস।
পরে কম্পাউন্ডে পুরুষ এককের ফাইনালে ভুটানের প্রতিপক্ষকে ১৩৭-১৩৬ ব্যবধানে হারিয়ে স্বর্ণ আনেন লাল-সবুজদের আর্চার সোহেল রানা।
কম্পাউন্ডের শেষে রিকার্ভেও উচ্ছ্বাস। মেয়েদের রিকার্ভ এককে ভুটানের সোনমকে ৭-৩ সেট পয়েন্টে উড়িয়ে সোনা আনেন ইতি খাতুন। তিনি সেমিফাইনালে হারিয়েছিলেন ভুটানের প্রতিযোগী কারমাকে, যিনি ভুটান থেকে সরাসরি অলিম্পিকে জায়গা করে নেয়া অ্যাথলেট।
ছেলেদের রিকার্ভ এককে সোনা এনে আর্চারে ১০ সোনার চক্র পূর্ণ করেন রোমান সানা। ফাইনালে তিনি ভুটানের কিনলে শেরিংয়ের বিপক্ষে ৭-১ সেট পয়েন্টে জিতেছেন। তাতে আর্চারিতে ১০ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সবকটিতে সোনা জয়ের বৃত্ত পূর্ণ হয় বাংলাদেশের।
যার শুরুটা হয়েছিল রোববার। প্রথমে কম্পাউন্ডে পুরুষ ও নারী দলগত ইভেন্টে স্বর্ণ আসে। পরে দিনের শেষ ইভেন্ট কম্পাউন্ড মিশ্র দ্বৈতেও মেলে সেরা সাফল্য। সোনায় মোড়ানো দিনে কম্পাউন্ডে ছেলেদের দলগততে সোনা আনেন সোহেল রানা, অসীম কুমার দাস ও মোহাম্মদ আশিকুজ্জামান। তারা ভুটানকে হারান ২২৫-২১৪ স্কোরে।
কম্পাউন্ডে মেয়েদের দলগততে সোনা এনেছেন সুস্মিতা বণিক, সুমা বিশ্বাস ও শ্যামলী রায়। তারা শ্রীলঙ্কাকে হারান ২২৬-২১৫ স্কোরে। কম্পাউন্ডে মিশ্র দ্বৈতে সাফল্য আনেন জুয়েল রানা ও রোকসানা আক্তার। নেপালকে তার হারান ১৪৮-১৪০ স্কোরে।
পোখারায় আর্চারিতে ছেলেদের রিকার্ভ দলগত ইভেন্টে আসে পরের সাফল্য। সোনা এনে দেন রোমান সানা, তামিমুল ইসলাম ও হাকিম মোহাম্মদ রুবেল। ফাইনালে তারা শ্রীলঙ্কাকে হারান ৩-২ সেট পয়েন্টে।
সেই হাসির রেশ থাকতে থাকতেই মেয়েদের রিকার্ভ দলগত ইভেন্টে সোনা আনে বাংলাদেশ। ইতি খাতুন, মেহনাজ আক্তার ও বিউটি রায় ফাইনালে হারান ভুটানকে, ৬-০ সেট পয়েন্টে। দিনের তৃতীয় সোনার হাসি এসেছিল রিকার্ভ মিশ্র ইভেন্টে। রোমান সানা ও ইতি খাতুন জয় তুলে নেন ভুটানের বিপক্ষেই, ৬-২ সেট পয়েন্টে।
১৩তম এসএ গেমসে প্রথম ৭দিন মিলিয়ে সাতটি সোনার পদক জিতেছিল বাংলাদেশ। পরে অষ্টম দিনেই মেলে সাত সোনা। নবম দিনে আরও পাঁচটি।
তায়কোয়ান্দো: আসরে সোনাযাত্রার শুরুটা করেছিলেন দিপু চাকমা, তায়কোয়ান্দোর ২৯(প্লাস) বয়স শ্রেণির ইভেন্ট পুমসে সোনা জেতেন তিনি। ৮.২৮ ও ৭.৯৬ স্কোর গড়ে।
কারাতে: এই বিভাগে তিন সাফল্য। ছেলেদের একক কুমিতের অনূর্ধ্ব-৬০ কেজির ইভেন্টে সোনা আনেন আল আমিন। মেয়েদের কুমিতে অনূর্ধ্ব-৫৫ কেজির ইভেন্টে সোনার হাসি অর্জন মারজান আক্তার প্রিয়ার। আর হোমায়রা আক্তার অন্তরা কুমি ইভেন্টের অনূর্ধ্ব-৬১ কেজিতে সেরার সাফল্য ছুঁয়েছেন।
ভারোত্তোলন: এসেছে দুটি সোনা। মাবিয়া আক্তার সীমান্ত টানা দুই গেমসে সোনা জয়ের রেকর্ড গড়েছেন। মেয়েদের ৭৬ কেজি ওজন শ্রেণিতে স্ন্যাচ ও ক্লিন অ্যান্ড জার্ক মিলিয়ে ১৮৫ কেজি তুলে সোনারকন্যা হয়ে যান তিনি। ছেলেদের ৯৬ কেজি ওজন শ্রেণিতে স্ন্যাচ ও ক্লিন অ্যান্ড জার্ক মিলিয়ে ২৬২ কেজি তুলে জিয়ারুল ইসলাম এনেছেন ভারোত্তোলনের দ্বিতীয় সোনা।
ফেন্সিং: সোনার বাকি হাসি ফেন্সিংয়ে। ফাতেমা মুজিব মেয়েদের ইভেন্ট সেইবার এককে স্বর্ণকন্যা হয়েছেন।