খান মাইনউদ্দিন, বরিশাল : বরিশাল সদর উপজেলার তালতলী বাজার থেকে অবৈধভাবে চলাচল করছে উচ্চগতির স্পিডবোট ।
এতে করে ভাঙ্গনের দেখা দিয়েছে বাজারের আশপাশ এলাকা। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছে স্পিডবোট চলাচল করায় যে ঢেউয়ের সৃষ্টি হয় তাতে সদর তালতলী থেকে পাতারহাট রুটের কয়েকটি খাল ও নদী পাড়ে ফাটল ধরে ভাঙ্গণের মৃখে পরেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে চরবাড়িয়া এলাকা।
জানা গেছে, বিগত কয়েক বছর ধরে চরবাড়িয়া ইউনিয়নের অনেক স্থান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদী ভাঙ্গণ প্রতিরোধে সরকার থেকে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করায় তা বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। কিন্তু এরমধ্যেই স্পিডবোট চলাচল বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে ভাঙ্গণ প্রবণতা দেখা দিয়েছে ওইসব এলাকায়।
বরিশাল নৌ-বন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা মিঠু জানিয়েছেন, রাতে বা দিনে-রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কোন স্পীডবোট চলাচলের অনুমতি নেই। স্থানীয় কতিপয় নেতা রয়েছেন যারা তাদের লাভের জন্য এভাবে বিভিন্ন স্থান থেকে স্পিডবোট চালানোর চেষ্টা করে থাকে। এতে নদী ভাঙ্গনসহ বিভিন্ন ক্ষতি হয়। তাছাড়া অবৈধ কোন স্পিডবোট নদীতে চলাচল করতে দেওয়া হবে না। অবৈধ এই রুটের বিরুদ্ধে দ্রতই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
জানা গেছে, এ নিয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এবং স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে একাধিকবার অভিযোগ করলেও কার্যত কোন উপকার হচ্ছে না। জানা গেছে, তালতলী বাজারের কয়েকজন প্রভাবশালী লোক মিলে রুটটি চালু করেছেন। তারসাথে যুক্ত হয়েছেন মেহেন্দীগঞ্জের বেশ কয়েকজন নেতা। নৌ-পরিবহন অধিদফতরের ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়া কোন স্পীডবোট চলাচলের বিধান না থাকলেও ‘নেতা পরিচয়ে’ আর অর্থিক লোভে পরে নতুন করে এই রুটটি চালু করা হয়েছে। এমনকি গঠন করা হয়েছে একটি সমিতিও। সেখানে প্রত্যেক ট্রিপে নির্ধারিত চাঁদাও দিতে হয় চালকদের।
তাছাড়া, তালতলী-পাতারহাট রুটে চলাচল করা স্পিডবোট যাত্রীরাও ভোগেন নিরাপত্তাহীনতায়। বেশ কয়েকজন যাত্রীর অভিযোগ পাওয়া গেছে, ওই রুটের স্পিডবোট চালকরা ঘাট ছেড়ে গেলে অনেক খারাপ ব্যবহার করেন। কখনো টাকা না থাকলে সাথে থাকা দ্রব্যাদিও রেখে দেন। তেমনি একজন ভুক্তভোগী দক্ষিণ আলেকান্দা এলাকার বাসিন্দা মাকসুদ।
তিনি জানান, নভেম্বর মাসের শেষ দিকে মেহেন্দীগঞ্জ থেকে বরিশালে আসছিলেন তিনি। আমার কাছে দুই শ’ টাকাই ছিল। ড্রাইভারকে বলে উঠছি-২০০ টাকা ভাড়া হলেও আমাকে যেন ৩০ টাকা ফেরৎ দেওয়া হয়। কারণ ভাড়া নেই। যেন তালতলী থেকে বরিশাল শহরে যেতে পারে। এই কথা শুনে ওই ড্রাইভার স্পিডবোটে উঠালেও তালতলীর কাছাকাছি একটি চরে বোট থামিয়ে বলে সবাই ভাড়া দেন। তখন আমি ৩০ টাকা ফেরত চাইলে-চালক বলেন এইখানে নেমে হেটে আসেন। এমন অভিযোগ শুধু মাকসুদের নয়। আরও কয়েকজন তাদের অভিজ্ঞতায় এমন অভিযোগ করেন। তছাড়া রোগী পরিবহনের নামে উচ্চ ভাড়া আদায় এবং বখশিসের নামেও আলাদা টাকা হাতিয়ে নেন এই রুটের চালকরা।
চালকরা জানিয়েছে, তালতলী-পাতারহাট রুটে ৩২টি স্পিডবোট নিয়মিত চলাচল করে। অথচ পুরো বরিশাল জেলায় মাত্র ৩১টি স্পিডবোটকে লাইসেন্স দিয়েছে নৌ-পরিবহন অধিদফতর। গতকাল সরেজমিনে সন্ধ্যা ৭টায় দেখা গেছে ১০জন করে যাত্রী নিয়ে দুটি স্পিডবোট এসে বাজারের ঘাটে ভেড়ে। আবার আধাঘন্টা অপেক্ষা করে যাত্রী নিয়ে স্পিডবোট দুটি ছেড়ে যায়। বরিশাল নৌ-পুলিশ ও নৌ-নিরাপত্তায় নিয়োজিত ট্রাফিক বিভাগের কড়া হুশিযারী রাতে স্পিডবোট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তার কোন পাত্তা না দিয়ে চরবাড়িয়ার বর্তমান চেয়ারম্যানের ভাইয়ের পরিচয় এবং মেহেন্দীগঞ্জের কয়েকজন নেতার নাম ব্যবহার করে চালানো হচ্ছে বেপরোয়াভাবে।
জানা গেছে, ৩২টি স্পিডবোট নিয়মিত পাতারহাটে গড়ে তোলা সমিতিতে প্রতিটি ট্রিপে ৫০টাকা করে কল্যান তহবিলে জমা দেন। আর তালতলী বাজার উন্নয়নের নামে মাসে সাড়ে ৭ হাজার টাকা জমা দেন। এই টাকা কোন উন্নয়নে ব্যবহার করা না হয়ে বরং সমিতির নেতাদের পকেটে।এই চক্রটি শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের বুখাইনগর বাজার থেকে চলাচল শুরু করলে সেখানে নদী ভাঙ্গন দেখা দেয়। এ নিয়ে স্থানীয় জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে সেখানের রুট বন্ধ করে এখন ঘাটি গেড়েছে তালতলী বাজারে।
যদিও বিষয়টি সর্ম্পকে জানেনা বলে দাবী করেছেন বরিশাল সদর নৌ-থানা পুলিশের ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি জানিয়েছেন, রাতে স্পিডবোট চলাচলের কোন বিধান নেই। তাছাড়া তালতলী থেকে পাতারহাট রুটে স্পিডবোট চলাচল কবে থেকে করছে তা আমি জানি না। আমি এই অবৈধ রুটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে পাতারহাট বন্দর ও তালতলী বাজারের স্পিডবোট পরিচালনায় সম্পৃক্ত একাধিক ব্যাক্তির সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেও তারা কথা বলতে রাজি হননি। মোবাইলে পাতারহাট বন্দরের নেতাদের কল করা হলে তারা রিসিভ করেননি। আর তালতলী বাজারের কমিটি বলেছেন-এর সাথে তারা জড়িত নন। চালকরা চালাচ্ছে।