গাইবান্ধা সংবাদদাতা: শীতের তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে কনকনে ঠান্ডা ও হিমেল হাওয়া। তীব্র শীতে গাইবান্ধার তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর ১৬৩ টি চরাঞ্চলের দরিদ্র মানুষের অবস্থা কাহিল।
ত্রাণ অফিস জানায়, গাইবান্ধার চরাঞ্চলের শীতার্ত মানুষের জন্য ৩০ হাজার কম্বল চেয়ে জরুরী তারবার্তা পাঠানো হয়েছে।
কামারজানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বলেন, ‘শীতের কারণে কষ্ট পাচ্ছে তার ইউনিয়নের অন্তত ৫৬ হাজার মানুষ । এদের শীতবস্ত্র কেনার কোন ক্ষমতা নাই। প্রতিবছর শীতে কষ্টের সীমা থাকেনা । গত দুদিন ধরে শীতের তীব্রতার সাথে বেড়েছে ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়া । এই এলাকার লোকজন দিনের বেলা ১২ টা পর্যন্ত ঘর থেকে বের হতে পারেন না । শীতের কারণে তারা জমিতে কাজ করতে পারছেনা । দিনভর খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করে। রাতেও একই অবস্থা। শীত বস্ত্র না থাকায় এক সাথে কাথা মুড়ি দিয়ে শ শ পরিবারের লোকজন শুয়ে বসে রাত কাটায়।’
চর কুন্দেরপাড়ার বছিরন বেওয়া জানান, শীতের কারণে বিছানার নিচে খড় দিয়ে তোষক তৈরি করেছেন । উপরে চটের বস্তা আর ভেতরে খড় দিয়ে এই তোষক। এতে নিচে গরম হলেও একটা কাথা আর একটা কম্বলে তার শীত যায়না। তিনি এলাকার সালাম চেয়ারম্যানের বাড়িতে গিয়েছিলেন কম্বলের জন্য। চেয়ারম্যান বলেছেন কম্বল আইলে পাবেন। বাধ্য হয়ে বড় নাতি সাহিদকে নিয়ে এক সাথে এক বিছানায় কোকড়া হয়ে শুয়ে থাকেন।
কছিম উদ্দিন থাকেন নদীর কাছেই। নতুন চর জাগছে তাতে ঢেড়া তুলে ১১টি পরিবার থাকেন। তাদের নিজের কোন জমিজমা নাই। অন্যের জমিতে ভর বছর কাজ করেন। যেদিন কাজ থাকে সেদিন কছিম উদ্দিনের মতো ১১টি দিন মজুর পরিবারের মুখে খাবার জোটে। তীব্র শীতের কারণে গত দুই দিন ধরে কোন কাজে যেতে পারেননি। সুর্য্য’র মুখ দেখা যায়না। রোদ ওঠেনা। তার মধ্যে শিরশির বাতাস। ঘর থেকে বের হওয়া কষ্টকর। ছেলে মেয়েদের নিয়ে বাড়ির মধ্যে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারন করছেন দুদিন ধরেই।
কছিম উদ্দিন বলেন, ‘শীত কমলে ঘরের ছাগল বেচিয়া শীতের কাপড় কিনমো। আগামী শনিবার ফুলছড়ি হাটে নিয়ে বিক্রি করে বাড়ির সকলের শীতের কাপড় কিনমো। রাতে ঘুমানোর জন্য যা আছে তাতে চলে যায়। কম্বল কাথা আর খড়ের বিছানায় গরম ভালোই হয়। খুব বেশি কষ্ট হয় না। জড়াজড়ি করে এক সাথে থাকি। তাই রাত কাটে ভালো । কিন্তু জমিতে কাজ করা কঠিন।’
একই অবস্থা চরাঞ্চলের দরিদ্র মানুষের । যারা ভালো আছেন তাদের কথা নাই । আর যারা দিনমান কাজ করে পেট বাঁচায় তারা বিপাকে পড়েছেন শীতের কারণে। শীত কমলে কাজে যায় আর শীত বাড়লে বসে থাকা ।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জাকির জানান, শীতে আর বন্যায় কষ্ট পায় তার ইউনিয়নের মানুষ। সরকার থেকে এবার শীতার্ত মানুষের মধ্যে বিতরনের জন্য ৬৩১টি কম্বল পেয়েছেন। বলেন, ‘তাই নিয়ে হইচই । কাকে দেই আর কাকে বাদ রাখি এই অবস্থা।’
গাইবান্ধা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ইদ্রিস আলী জানান, শীতার্ত মানুষের মধ্যে বিতরণের জন্য জেলায় ৫১ হাজার ৮ শ কম্বল দেয়া হয়েছে ইতোমধ্যে । তাতে ইউনিয়ন প্রতি মাত্র ৬৩১ জন মানুষ এই কম্বল পেতে পারেন । প্রয়োজনের তুলনায় কম হলেও আমরা কিছু করতে পারিনা । তবে শীতের তীব্রতার মধ্যে মানুষকে রক্ষা করতে জরুরীভাবে ৩০ হাজার কম্বলের চাহিদা জানিয়ে তারবার্তা পাঠানো হয়েছে।