বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ এবারের আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবম বারের মত দলের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।শেখ হাসিনা এক অনন্য রাজনীতিক। দেশে তো বটেই, বিশ্বের রাজনীতিতেও তাঁর মতো রেকর্ডের নজীর খুঁজে পাওয়া দুস্কর।
তিনি বাংলাদেশের চার বারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ৯ বার নির্বাচিত হন। এটা রেকর্ড। বিশ্বের কোনো দেশে কোনো নেত্রী চার বার প্রধানমন্ত্রী এবং ৯ বার দলের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন এমন নজীর নেই।
আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয় নেতা শেখ হাসিনা দেশ বিদেশে সমান জনপ্রিয়। উন্নয়নের মহাসড়কে দেশকে তুলে তিনি দেশকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সন্মানিত করে তুলেছেন; আবার মিয়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে মাদার অব হিউম্যানিটি সন্মানে ভুষিত হয়েছেন। জাতিসংঘ, কমনওয়েলথের সদস্য অনেক দেশে তার নাম ‘উদাহরণ’ হিসেবে আলোচিত হয়ে থাকে। প্রখর দূরদৃষ্টি এবং সুচিন্তিত সিদ্ধান্তই তাকে এই অবস্থায় নিয়ে এসেছে।
তাঁর বিভিন্ন চিন্তাশীল বক্তব্য-কথাবার্তা এখন বিশ্বের সেরা দার্শনিক, সমাজবিদ, ইতিহাসবিদ ও বিজ্ঞজনের ‘বাণীর’ মতোই উদ্বৃতি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অথচ রাজনীতিতে আসা এবং দীর্ঘ চলার পথ মোটেই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। ১৯৭৫ সালের সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খাদের কিনারে যাওয়া আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ’৮১ সালে এসে তিনি দলকে পূণর্জ্জীবিত করেন। এই ৩৮ বছরে তিনি আওয়ামী লীগকে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলে পরিণত করেন; পাশাপাশি জনগণের ভোটে ক্ষমতায় গিয়ে দেশের উন্নয়নে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেন।
১৯৮১ সাল থেকে এ পর্যন্ত টানা ৩৮ বছর উপমহাদেশের প্রচীন দল আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিতীয় বারের মত দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন ওবায়দুল কাদের।
গতকাল সকাল ১০টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ২১তম সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন। পুরো অনুষ্ঠান শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পরিচালনা করেন এবং বিভিন্ন মনোমুগ্ধ কথা বার্তার মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত করে রাখেন।
কাউন্সিল অধিবেশনের শেষ সময়ে কার্যনির্বাহি কমিটি বিলুপ্ত করে নির্বাচন কমিশনের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে নাম প্রস্তাব করতে বলেন কাউন্সিলরদের। এ সময় দলের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আবদুল মতিন খসরু। এতে সমর্থন দেন দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য। পরে নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন অন্য কাউন্সিলরদের তিনবার জিজ্ঞাসা করলে তারাও শেখ হাসিনার নাম বলেন। পরে শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান।
এরপর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদেরের নাম প্রস্তাব করেন দলের সদ্য বিলুপ্ত ঘোষিত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। এতে সমর্থন দেন সদ্য বিলুপ্ত ঘোষিত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান। পরে নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন ফের অন্য কাউন্সিলরদের জিজ্ঞাসা করলে তারাও ওবায়দুল কাদেরের নামই বলেন। এতে ওবায়দুল কাদেরকে দলের সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান।
আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি আওয়ামী লীগে আছি, এখানেই থাকবো। এটাই আমার পরিবার। ‘৭৫ সালে আমি মা-বাবা, ভাইবোন হারিয়ে বিশাল এক পরিবার পেয়েছি। সেটা হলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পরিবার।
শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের দায়িত্বে আছি। ৩৯ বছর চলছে। আমি কোনও পদে থাকি বা না থাকি আওয়ামী লীগে আছি, এখানেই থাকবো। এটাই আমার পরিবার। আমার আপনজন যাদের রেখে গেছিলাম তাদের কাউকে পাইনি। তবে আমি পেয়েছিলাম বিশাল একটা পরিবার, সেটা হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। নেতাকর্মীদের ভালোবাসই আমার চলার পথের শক্তি। আমার অর্থ সম্পদ নেই। নেতাকর্মীদের ভালোবাসাই আমার একমাত্র শক্তি। সেজন্য চেষ্টা করেছি সংগঠনকে গড়ে তুলতে। তবে সামনে আপনাদের ভাবতে হবে। আমার ৭৩ বছর বয়স হয়েছে। এটা ভুলে গেলে চলবে না। নতুন নেতা নিয়ে ভাবতে হবে। দলকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।