প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তিনবারের নির্দেশেও উদ্ধার হচ্ছে না ভোলার ওয়াকফ সম্পত্তি

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ভোলার হাজী আব্দুল করিম তালুকদার ওয়াকফ এস্টেট এর সম্পত্তি উদ্ধার, ক্ষতিপূরণ এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে তিন দফা নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানোর পরও কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করেনি জেলা প্রশাসন।

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের চিঠি পেয়ে ওয়াকফ প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বেহাত হওয়া আংশিক সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য ভোলা জেলা প্রশাসককে একাধিকবার অনুরোধ জানায়। কিন্তু ভোলা জেলা প্রশাসক সম্পত্তি উদ্ধারে আইনগত কোন বাধা আছে কিনা জানতে চেয়ে বিভিন্ন কর্মকর্তার মতামত চান। সর্বশেষ মতামতের জন্য ভোলা সরকারী আইনজীবী নুরুল আমিন (নুরুনবী) তার মতামতে সম্পূর্ণ ভুল তথ্য দিয়ে জেলা প্রশাসককে বিভ্রান্ত করেন। তিনি জানিয়েছেন যে- জেলা জজ আদালত মোতাওয়াল্লী নিয়োগ আদেশের স্থিতিবস্থা ও মোতাওয়াল্লী নিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এস্টেটের সকল কার্যক্রম স্থিতিবস্থা বজায় রাখার আদেশ প্রদান করেন। প্রকৃত সত্য হলো আদালত সকল কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেননি।

আদালত গত ২৪-০৮-২০১৭ তারিখে একটি আদেশে বলেন, “ইতিমধ্যে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত মোতাওয়াল্লী নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে স্থিতিবস্থা বজায় রাখার জন্য নিদের্শ দেয়া হলো।” অথচ সরকারি আইনজীবী আদেশের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশ ও ওয়াকফ প্রশাসকের অনুরোধকে বন্ধ রাখার মতামত দিয়েছেন। বিষয়টি জানিয়েছেন ভূক্তভোগী শামীম আহম্মেদ।

জানা গেছে, ভোলা ইসি-১৪১৬ হাজী আব্দুল করিম তালুকদার ওয়াকফ এস্টেট এর স্বত্বভোগের অধিকারী ভোলার জামিরালতা মিয়াবাড়ির শামীম আহম্মেদ এই এস্টেট এর সম্পত্তি রক্ষা ও নিজের অধিকার আদায়ের জন্য দীর্ঘদিন ধরে সরকারের বিভিন্ন মহলে ধরনা দিচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে একাধিক মামলাও দায়ের করেন। তার অভিযোগ, ভোলায় হাজী আব্দুল করিম তালুকদার ওয়াকফ এস্টেট এর প্রায় সবটুকু সম্পত্তি বিক্রি হয়ে গেছে। ওয়াকফ প্রশাসন ও তাদের একতরফা নিয়োগ করা মোতাওয়াল্লি মিলেমিশে ২৮৪ একর সম্পত্তির মধ্যে ৪ পয়েন্ট ৪৫ একর জমি ছাড়া সব জমি বিক্রি করে দিয়েছে।

ওয়াকফ প্রশাসনের কৃপায় ওয়াকফ সম্পদ বেহাতকারীরাই বারবার মোতাওয়াল্লির দায়িত্ব পেয়ে প্রতিনিয়ত ওয়াকফ সম্পত্তি বিক্রি করছে। এই এস্টেটের স্বত্বভোগের অধিকারীদের বৃহৎ অংশই এখন সুবিধা বঞ্চিত হয়ে সব হারিয়ে পথে নেমেছে’। ওয়াকফ স্টেটের সম্পত্তি উদ্ধার করতে গিয়ে শামীম আহম্মেদও আজ সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন বলেও জানিয়েছেন। তার দাবি ওয়াকফ সম্পত্তি উদ্ধারকারী বিগত দিনের ওয়াকফ দলিলে শর্ত মোতাবেক ক্ষতিপূরণ পাওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেয়া নেয়া হোক। যা নিয়ে বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে বিভিন্ন সময় একাধিক প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়।

শামীম আহমেদের দাখিলিয় কাগজপত্রে দেখা যায় যে, ২০১৫ সালে জেলা প্রশাসকসহ তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটির দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়- এস্টেটের বেনিফিশিয়ারী সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মৃত মোশাররফ হোসেন শাহজাহান ও তার দুই ভাই, মা, চাচা, মামা ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের নামে নামকরণ করে পরবর্তীতে জমিগুলো বিক্রি করা হয়।

বর্তমানে মোশাররফ হোসেনের মেজ ভাই গোলাম নবী আলমগীর বিশাল আকারে ওয়াক্ফ সম্পত্তির আয় ও ওয়াক্ফ সম্পত্তি বিক্রি করে ধনাঢ্য ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত ও রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না বলে বঞ্চিতদের অভিযোগ। এমনকি সরকারি খাস সম্পত্তি নিজেদের নামে করে অন্যদের মাঝে বিক্রি করেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এ বিষয়ে শামীম আহমেদ গত ৮ আগস্ট ২০১৯ইং তারিখে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি আবেদন করলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এস্টেটের বর্তমান অবস্থা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশ অমান্যসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শামীম আহমেদ পুনরায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ও ওয়াকফ প্রশাসকের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। যাতে করে তিনিসহ ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার পেতে পারেন।

 

ছবি:  ভোলার জামিরালতা মিয়াবাড়ির শামীম আহম্মেদ

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts