জাহিদুল হক চন্দন, মানিকগঞ্জ: সাটুরিয়ার মা ছেলের জোড়া খুনের রহস্য ২৪ ঘন্টার মধ্যে উম্মোচন করেছে পুলিশ। হত্যাকান্ডের শিকার পারভীন আক্তার বিয়ে চাপ দিয়েছিল দেবর সোলাইমান হোসেনকে। ভাবীর এই আচরন সহ্য করতে না পেরে ধারালো ছুড়ি দিয়ে হত্যা করে ভাবী পারভীন আক্তার ও ভাতিজা আব্দুল নূরকে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় মানিকগঞ্জ সিনিয়ন জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালত ৯ এর বিচারক জান্নাতুল রাফিন সুলতান কাছে মামলার এক মাত্র আসামী সোলাইমান হোসেন ১৬৪ ধারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আসামীকে সোলাইমানকে রাতেই আদালত থেকে জেলা হাজতে পাঠানো হয়।
মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীম এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান ১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে আসামী সোলাইমান হোসেন স্বীকারোক্তি করেছেন। স্বীকারোক্তি অনুয়ায়ী আসামী সোলাইমান হোসেনের সাথে তার মেঝ ভাই মজনুর স্ত্রী পারভীনের পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
গত তিন মাস আগে সোলাইমান মালয়েশিয়া থেকে পড়াশুনা করে দেশে আসে। এর পর ভাবী পারভীনের সাথে পরকীয়া সম্পর্ক আরো গাঢ় হয়ে পড়ে। ভাবী পারভীন সোলাইমানকে বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছিল। ঘটনার দিন ৮ জানুয়ারী রাত ১০ টার দিকে সোলাইমান হোসেন ভাবী পারভীনের ঘরে ঢুকে। তাদের মধ্যে দৈহিক সম্পর্কের এক পর্যায়ে পারভীন আক্তার সোলাইমানকে বিয়ে জন্য চাপ প্রয়োগ করে। সোলাইমান দুই ভাতিজা আব্দুল করিম (১০) ও আব্দুল নুর (৬) এর কথা চিন্তা করে বিয়ের জন্য রাজি হয়নি। বিয়েতে রাজি না হওয়াতে পারভীন আক্তার হুমকি দেন তার নিজের দুই ছেলে, স্বামী ও সোলাইমানকে হত্যা করা হবে। এই নিয়ে দুই জনের মধ্যে কথাকাটি ও উত্তেজনার সৃস্টি হয়। এসময় সোলাইমান ঘরে থাকার ধারালো চাকু দিয়ে ভাবী পারভীনের গলায় পাড় দিয়ে হত্যা করে। ওই সময় ভাতিজা আব্দুর নুর জেগে উঠলে তাকে চাকু দিয়ে হত্যা করে। দুই জনের হত্য নিশ্চিত করে রক্তমাখা চাকু ও তার পরিহিত কাপড় চোপড় ধুয়ে ফেলে। এর পর নিজ ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন।
নিহত নুরের দাদা ক্বারী আব্দুল রহমান জানান, ছেলে সোলাইমানের মতো এ গ্রামে একটি ছেলে নেই। সে কোন নেশা করে না। পুলিশ তাকে ফাঁসানোর জন্য ধরে নিয়ে গেছে। তার সাথে আমার পরিবারের কাউকে দেখা করতে দেয় না। সে আরো জানায়, তার ছেলে মালয়েশিয়া থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারে লেখাপড়া করে। কিছুদিন ধরে সে ছুটি নিয়ে বাড়ি এসেছে। আপনার বাড়িতে বহিরাগত কেউ আসে কি না জানতে চাইলে সে জানায়, মাঝে মধ্যে অপরিচিত একাধিক ছেলে আসত বৌমার কাছে। কিন্তু তাদের আমি চিনি না।
ক্বারী আব্দুল রহমানের স্ত্রী রোমেনা বেগম জানায়, আমার ছেলের বৌ সে পর্দা করে থাকত। সে হাত পায়ে মোজা পরে বাহিরে বের হতো। আত্মীয় স্বজন ছাড়া আমার বাড়িতে কেউ আসত না। কে তার নাতী ও ছেলের বৌকে হত্যা করেছে জানতে চাইলে সে বলে আমি জানি না।
সাটুরিয়ার উত্তর কাউন্নারা গ্রামের সৌদি প্রবাসি মজনুর স্ত্রী পারভীন আক্তার ও তার ছয় বছরের ছেলে নুর হোসেন তাদের দুতলা ফাট বাসায় বুধবার রাতের খাবার খেয়ে ঘুমায়। বৃহস্পতিবার সকালে নুর মাদ্রাসায় মকতব পরতে না যাওয়ায় আশেপাশের সহপাঠিরা তাকে ডাকতে এলে নুরের দাদী রোমেনা বেগম নাতিকে ডাকতে যায়। ডাকতে গিয়ে দেখেন ঘরের দরজা খোলা। ভিতরে প্রবেশ করে দেখেন খাটের উপর তার নাতি নুর ও তার ছেলের স্ত্রী পারভীনে নিথর দেহ বিছানায় রক্তাক্ত অবস্থায় পরে আছে। তার আর্তচিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসে পরে পুলিশকে খবর দিলে ঘটনাস্থলে আসে। পরে পুলিশ মা ও ছেলে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি তদন্ত আবুল কালাম (পিপিএম) জানান, সাটুরিয়াতে মা ছেলে জোড়া খুনের ২৪ ঘন্টার মধ্যেই বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় হত্যাকান্ডে সাথে সোলাইমান জড়িত। তাকে বৃহস্পতিবার রাতেই গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসবাদের সোলাইমান হত্যাকান্ডের সাথে সে জড়িত বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেন। শুক্রবার দুপুরে আসামী সোলাইমানকে আদালতে তোলা হয়। মানিকগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালত ৯ এর বিচারক জান্নাতুল রাফিন সুলতানএর কাছে আসামী সোলাইমান হোসেন ১৬৪ ধারা স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এই ঘটনায় নিহত পারভীনের মা মজিরন বেগম বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এদিকে সাটুরিয়া থানা পুলিশ জোড়া খুনের আলামত সংগ্রহ করছে। ময়না তদন্তে রিপোর্টে ধর্ষণের কোন আলামত পাওয়া গেছে কিনা জানতে চাইলে পুলিশ জানায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। তবে ময়না তদন্ত রির্পোট হাতে পেলে বুঝা যাবে সে ধর্ষিত হয়েছে কি না। বৃহস্পতিবার রাতে মা ও ছেলেকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।