খান মাইনউদ্দিন, বরিশাল: শাকুর ম্যানসন। বরিশাল ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক (সদর রোড) ঘেঁষে প্রায় শতবর্ষী বহুতল এই ভনটির দাঁড়িয়ে আছে।
২০১৩ সালে বরিশাল সিটি করপোরেশন ঘোষিত নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ ৩৫ টি ভবনের ৬ নম্বর তালিকায় স্থান পেয়েছিল এই ভবনটি। ভবনটি ভেঙে ফেলতে ভবন মালিককে একাধিক বার নোটিশও প্রদান করা হয়েছে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে। কিন্তু বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে ভবন মালিক ভবনটি ভাঙার জন্য যখন সিটি করপোরেশনে আবেদন করলেন তখন আর ভাঙার অনুমতি মিলছে না।
আরো বিস্ময়কর খবর হচ্ছে, সিটি করপোরেশন থেকে সর্বশেষ ঝুঁকিপূর্ণ যে ভবনগুলোর তালিকা প্রস্তুত করেছে তাতে অলৌকিক ভাবে নাম আসেনি ঝুঁকিপূর্ণ’র ৬ নম্বরে থাকা শাকুর ম্যানসনের।
তবে এ বিষয়ে তেমন কোন সুদুত্তর মেলেনি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগে কর্মরত কারো কাছ থেকে। অনেকে আবার এ বিষয়ে কথা বলতেই রাজি নন।
খবর নিয়ে জানা গেছে, ওই ভবনের নিচতলায় ভাড়াটিয়া তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে একটি বর্তমান সিটি মেয়রের আপন মামা কাজী কামালের। তিনি কোন ভাবেই ভবনটি হাতছাড়া করতে চান না। যে কারণে তিনি করপোরেশনকেও ভবনটি ভাঙার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে দিচ্ছেন না। এমনকি প্রভাব খাটিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা থেকে শাকুর ম্যানসনের নামটি বাদ দিতে সমর্থ হয়েছেন তারা।
জানা গেছে, ২০১৩ সালে দীর্ঘ জরিপের মাধ্যমে নগরীর ৩৫ টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে ঘোষনা করে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ। যার মধ্যে ৬ নম্বরে উঠে আসে ডা. কে এম আলাউদ্দিন এর শাকুর ম্যানসন। যে কারনে ২০১৩ সালের ৮ জুলাই ভবন মালিককে ৭ দিনের মধ্যে ভবনটি ভেঙে ফেলতে চিঠি দেয় সিটি করপোরেশনের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। এর পরের মাসে ৪ তারিখে আবার ৩ দিনের মধ্যে মালিককে ভবনটি ভাঙার নির্দেশ দিয়ে চিঠি প্রদান করা হয়। ভবন মালিকও ভবনটি ভাঙতে প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। কিন্তু দেখা মিললো না করপোরেশন কর্তৃপক্ষের।
এলাকাবাসীর অভিযোগ-অনুরোধে ভবন মালিক ভবনটি ভাঙার প্রস্তুতি নিয়ে নিচ তলার ওই ৩ ভাড়াটিয়াকে বিষয়টি অবহিত করেন এবং ভবন ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু ভবন মালিকের এ সিদ্ধান্তে নারাজ ওই ব্যবসায়ীরা। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় নেপথ্যে থেকে ভবনটি না ভাঙতে করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগসহ কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করতে সক্ষম হন। এমনকি ভবন মালিকও যেন ভাঙার অনুমতি না পায় সে বিষয়েও করপোরেশনকে প্রভাবিত করে সফল হয় তারা।
এ ব্যাপারে ভবন মালিকের ছেলে ডা. আহমেদ সাইদ খান বলেন,ভবনটি এখন আমাদের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভবন খসে পড়ে প্রায়ই পথচারীরা আহত হচ্ছে। পার্শবর্তী বাসিন্দারাও আতংকে রয়েছে। করপোরেনে ভবনটি ভেঙে ফেলতে বার বার অনুমতি চেয়েও পাচ্ছি না। এমনকি ভবন ভাঙার সকল খরচ বহন করব বলে প্রস্তাব দিয়েছি তাতেও কোন পদক্ষেপ গ্রহন করছে না। এবিষয়ে জানতে করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগে যোগাযোগ করা হলে কেউ কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি।