বৃহস্পতিবার মধ্য রাত থেকে ঢাকায় বিশেষ অভিযান

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ঢাকা শহরে বৃহস্পতিবার মধ্য রাত থেকে বিশেষ অভিযানে নামছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পয়লা ফেব্রুয়ারি ভোটের দিন পর্যন্ত এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

রাজধানীতে এরই মধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে হত্যা মামলার আসামি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িতসহ বিভিন্ন মামলার দাগি শতাধিক আসামির অবস্থান । নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা হিসেবে বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রও রয়েছে তাদের সঙ্গে। এসব অস্ত্রধারী বহিরাগতদের গ্রেফতার করা হবে।

একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, দুর্বৃত্ত সন্ত্রাসীরা সিটি নির্বাচন ঘিরে নাশকতার ছক কষছে। নির্বাচনের দিন যত কাছে আসছে ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পরিস্থিতি।

ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম জানান, ভোটের সময় অপরাধীসহ কোনো বহিরাগতরা ঢাকায় থাকতে পারবে না। বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হবে। অপরাধী যেই হোক এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

এই নির্বাচনে জামায়াত-শিবিরের ভূমিকা রহস্যজনক বলে মনে করে গোয়েন্দা সংস্থা। নির্বাচন ঘিরে বেড়ে গেছে ভাড়া করা সন্ত্রাসী, জঙ্গিদের আনাগোনা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি—দুই দলের প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন জমে ওঠায় বিতর্কিত নির্দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে উত্তেজনার তাপ বাড়ছে।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে মনোনয়ন পায়নি এমন নির্দলীয় বিতর্কিত প্রার্থীদের পক্ষে সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ার তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারা ঢাকায় কোথায় অবস্থান করছেন সেটাও গোয়েন্দাদের কাছে অনেকে বলে দিয়েছেন।

মতিঝিল, খিলগাঁও, ঢাকা দক্ষিণের কয়েকটি ওয়ার্ড থেকে শুরু করে বিভিন্ন ওয়ার্ডগুলোতে বহিরাগতকরা মিছিলে ঢুকছে। যশোর, সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা ও গাজীপুর থেকে অনেক ক্যাডার ঢাকায় ঢুকেছে। গুলবাগ, খিলগাঁও, মধুবাগসহ বিভিন্নস্থানে বহিরাগত মাস্তানদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। বিদ্রোহী প্রার্থী ও ঢাকার আশপাশের জেলা থেকে বহিরাগতদের নিয়ে আসছে। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বিদেশি অস্ত্রের চালান ঢুকেছে রাজধানীতে। অস্ত্র ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে এসব অস্ত্র এখন পাড়া-মহল্লার সন্ত্রাসীদের হাতে।

শতাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী আছেন যারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মাঠে নেমেছেন। দুই দলের বাইরের নির্দলীয় প্রার্থীরা নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার লড়াইয়ে এরই মধ্যেই কালো টাকা ছড়াচ্ছেন তারা। শতাধিক বিতর্কিত কাউন্সিলর প্রার্থীকে ঘিরে নির্বাচন সামনে রেখে সন্ত্রাসী ও নাশকতা কর্মকাণ্ডের আশঙ্কা করা হচ্ছে বেশি। বিতর্কিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে মাদক, চাঁদাবাজি ও দখলসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত সন্ত্রাসীদের সখ্য আছে এমন অভিযোগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। কাউন্সিলর প্রার্থীদের কারো কারো সঙ্গে বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীদেরও যোগাযোগ থাকার অভিযোগ রয়েছে।

তবে দুই সিটির মেয়র নির্বাচন ঘিরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের আশঙ্কা তুলনামূলকভাবে কম। নির্দলীয় বিতর্কিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের সামনে রেখে সন্ত্রাস, নাশকতার সুযোগ নিতে পারে তৃতীয় পক্ষ। সন্ত্রাসী, জঙ্গি, ওয়ারেন্টের আসামি ও অপরাধ জগতের সঙ্গে সম্পৃক্ত অপরাধীদের গতিবিধির ওপর নজরদারি শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, এ ধরনের অপরাধীদের তথ্য আমাদের কাছে আছে।

গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই নির্বাচনী প্রচারাভিযান জমে ওঠায় উত্তেজনাও বাড়ছে। প্রায় প্রতিদিনই কারও না কারও বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলা হচ্ছে। এই ধরনের অভিযোগ থেকেই সন্ত্রাস, নাশকতার আশঙ্কার সৃষ্টি হচ্ছে। তবে নির্বাচন বিতর্কিত করার জন্য তৃতীয় পক্ষ থেকে এরই মধ্যেই নানা ধরনের কর্মকাণ্ডের ইঙ্গিত স্পষ্ট হচ্ছে বলে মনে করেন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। নির্বাচনী প্রচার ঘিরে যাতে আইনশৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটাতে না পারে সে জন্য এরই মধ্যেই পদক্ষেপ নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

গত এক সপ্তাহে রাজধানীতে বেশ কিছু ছোটো অস্ত্র কেনা-বেচা হয়েছে এমনই তথ্য দিয়েছে অবৈধ অস্ত্র কারবারি আশিকুর রহমান। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) দক্ষিণ বিভাগের একটি টিম শনিবার সন্ধ্যায় তাকে লালবাগ এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। এ সময় তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় তিন রাউন্ড গুলিসহ একটি দেশীয় পিস্তল এবং চার রাউন্ড গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল। এ ঘটনায় লালবাগ থানায় একটি নিয়মিত মামলা হয়েছে।

ডিবি পুলিশ তাকে রবিবার তিন দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। অভিযান পরিচালনাকারী গোয়েন্দা দক্ষিণ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুর রহমান আজাদ জানান, আশিকুর রহমান আজাদের গ্রামের বাড়ি যশোর জেলায়। সে একজন একজন পেশাদার অপরাধী। তার বিরুদ্ধে ঢাকা ও সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন থানায় অস্ত্র, দ্রুত বিচার, মাদকদ্রব্য এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একাধিক অভিযোগে ঢাকা ও সীমান্ত এলাকায় একাধিক মামলা রয়েছে। একাধিকার সে জেল খেটেছে। আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশন উপলক্ষ্যে সন্ত্রাসীদের কাছে বিক্রির জন্য সীমান্ত এলাকা থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে ঢাকায় আসে।

Print Friendly

Related Posts