পর্দা উঠল বইমেলার

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনের কারণে এবছর একদিন পর পর্দা উঠল বইমেলার।

এবছর বইমেলা ‘বঙ্গবন্ধু জন্মশতবর্ষ‘ পালন উপলক্ষে তার প্রতি উৎসর্গ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার বিকেলে রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অমর একুশে বইমেলা উদ্বোধন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতি-সাহিত্যের মান আরও উন্নত করে সারা বিশ্বে তা ছড়িয়ে দিতে চায়। তিনি আরও বলেন, অমর একুশে বইমেলার মধ্য দিয়ে আমাদের শিল্প-সংস্কৃতিকে কেবল বাংলাদেশের মধ্যেই নয়, বিশ্ব দরবারে পৌঁছাতে চাই।

সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান।

এছাড়া সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশনা ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে দাড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

অনুষ্ঠানে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া, মন্ত্রীবর্গ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্ঠাগন, সংসদ সদস্যগণ, বিদেশী ক’টনৈতিকগন, বাংলা একাডেমীর সদস্যগণ, সিনিয়র সাংবাদিকগন, লেখক, কবি, প্রকাশকগন এবং সিনিয়র সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বিগত ২০১৯ সালের বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরষ্কার দশ কবি ও সাহিত্যিকের নিকট হস্তান্তর করেন।

পুরষ্কারপ্রাপ্তগন হলেন, কবিতায় মাকিদ হায়দার, উপন্যাসে ওয়াসি আহমদ, প্রবন্ধ ও গবেষনায় স্বরচিস সরকার, অনুবাদে খায়রুল আলম সবুজ, নাটকে রতন সিদ্দিকী, কিশোর সাহিত্যে রহিম শাহ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাহিত্যে রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, বিজ্ঞান উপন্যাসে নাদিরা মজুমদার, ভ্রমন সাহিত্যে ফারুক মইনউদ্দিন এবং লোকসাহিত্যে সাইমন জাকারিয়া।

অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু কর্তৃক রচিত ৩য় বই ‘আমার দেখা নয়া চীন‘ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।

বইমেলা উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী মেলার বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বইমেলা এখন কেবল বই কেনা- বেচার কেন্দ্র নয়,এটি বাঙালির প্রাণের মেলাও। তিনি বলেন, ‘বই মেলা উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসরত বাঙালিরা দেশে আসেন। বিদেশী নাগরিকরাও বইয়ের প্রতি বাঙালির নজিরবীহিন ভালবাসা প্রত্যক্ষ করতে বাংলাদেশ সফর আসেন।’

শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, তিনি ছাত্রজীবনে বইমেলায় ঘণ্টার পর ঘন্টা কাটিয়েছিলেন। তিনি আরো বলেন, ‘তবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকায় এখন আমার সেই স্বাধীনতা নেই।’

প্রধানমন্ত্রী বইমেলা উপলক্ষে এখানে আসার সুযোগ দেয়ার জন্য বাংলা একাডেমিকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি উল্লেখ করেন যে, ১৯৫৬ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘শহীদ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে এবং বাংলাকে সরকারি ভাষার মর্যাদা দেওয়ার পাশাপাশি আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনার নির্মাণ করে।

শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলন, বাংলার ক্ষুধার্ত মানুষের খাদ্যের দাবির আন্দোলন এবং ভাষা আন্দোলনে অংশ নেয়ায় বঙ্গবন্ধুকে কারাভোগ করতে হয়েছিল। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু, তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, আতাউর রহমান, খন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস প্রমুখ পাকিস্তানের একটি প্রতিনিধি দল ১৯৫২ সালে এক শান্তি সম্মেলনে অংশ নিতে চীন সফর করেছিলেন।

‘আমার দেখা নয়া চীন’ শিরোনামের বঙ্গবন্ধুর বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই সম্মেলনে জাতির পিতা প্রথমবারের মতো বাংলায় ভাষণ দিয়েছেন।

বইটিতে জাতির পিতা, নতুন চীনের কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষার্থী এমনকি শিশুসহ জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার কথাও বর্ণনা করেছেন।

বঙ্গবন্ধু শুধু চীনে পর্যটক হিসেবেই সফর করেন নি বরং তিনি বিভিন্ন বিষয় প্রত্যক্ষ করেছিলেন। বইটিতে আমরা তাঁকে পর্যটক, পর্যবেক্ষক এবং একজন সমালোচক হিসেবে পেয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানি শাসকরা বঙ্গবন্ধুকে আড়াই বছর কারান্তরীণে রাখার পরে তিনি চীন সফরে গিয়েছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ভাষা আন্দোলনের পথ অনুসরণ করে ১৯৫৫ সালে ৩ রা ডিসেম্বর বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়। একুশে গ্রন্থমেলাটি ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বহনকারী ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।

বাংলা একাডেমি সূত্র জানায়, এ বছর মেলার জন্য নির্ধারিত জমিটি ৮,০০,০০০ বর্গফুটে সম্প্রসারিত করা হয়েছে। মোট ৮৭৩ টি ইউনিট ৫৬০ সংস্থাকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ ১২৬ টি প্রতিষ্ঠানকে বাংলা একাডেমি মাঠে ১৭৯টি ইউনিট এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৬৯৪ টি ইউনিট ৪৩৪ সংস্থাকে বরাদ্দ এবং মোট ৩৪ টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ করা হয়েছে।

মেলা রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার বিকাল ৩ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত খোলা থাকবে; এবং শুক্র ও শনিবার সকাল ১১ টা থেকে ৯ টা পর্যন্ত। ২১ ফেব্রুয়ারি, মেলা সকাল ৮ টা থেকে ৮ টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।

Print Friendly

Related Posts