বহু শিশুকে অন্ধত্বের হাত থেকে বাঁচাতে পারে সচেতনতা

রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচুরি বিষয়ক আলোচনায় বললেন বক্তারা

 

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ দেশের শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কেবলমাত্র সচেতনতা অপরিণত অবস্থায় জন্ম নেওয়া অসংখ্য শিশুকে রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচুরিটি অর্থাৎ আরওপিজনিত অন্ধত্বের হাত থেকে বাচাঁতে পারে।

রোববার ঢাকায় আয়োজিত এক আলোচনায় তারা বলেন, শুধু সাধারণ মানুষ কেন, বহু চিকিৎসক আরওপি সম্পর্কে জানেন না, যদিও এক-পঞ্চাংশ অপরিণত শিশু এ রোগে আক্রান্ত হয় এবং তাদের অনেকেই দৃষ্টিশক্তি হারায়।

প্রেস ইন্সটিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) সেমিনার কক্ষে ’বাংলাদেশে আরওপি প্রতিরোধ ও চিকিৎসা’ শীর্ষক এ আলোচনার আয়োজন করে পিআইবি ও অরবিস ইন্টারন্যাশনাল।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল ইউনিভার্সিটির (বিএসএমএমইউ) নবজাতক বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, বেশিরভাগ চিকিৎসক অপরিণত শিশুদের রেটিনা বিশেজ্ঞের কাছে পাঠান না। কারণ তারা জানেন না, জন্মের ৪ সপ্তাহের মধ্যে চোখের পরীক্ষা এবং চিকিৎসা না করালে এসব শিশুর অনেকে দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারে।

আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে অংশ নেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ, পিআইবির মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ, প্রসূতি ও গাইনি সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক সামিনা চৌধুরী, মহাসচিব অধ্যাপক সালেহা বেগম ও সাবেক সভাপতি অধ্যাপক রওশন আরা, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক এবং অরবিস ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক প্রোগাম্স মোহাম্মদ আলাউদ্দিন।

অনুষ্ঠানে দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সহযোগী অধ্যাপক নুজহাত চৌধুরী এবং অরবিস ইন্টারন্যাশনালের ঊর্ধ্বতন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ ডা. লুৎফুল হোসেন।

অধ্যাপক শহিদুল্লাহ বলেন, সরকার, উন্নয়ন অংশীদার ও পেশাজীবীদের সহযোগিতার কারণে বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশ স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে।

তিনি বলেন, এ খাতে আরো অগ্রগতির জন্য এখন সরকার, উন্নয়ন অংশীদার, পেশাজীবী ও সাংবাদিকদের মধ্যে একটি সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তোলা দরকার।

জাফর ওয়াজেদ বলেন, অনেক স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত বিষয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে সংবাদমাধ্যম বড় ভূমিকা রেখেছে এবং এখন আরওপি বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে তাদের আরও কাজ করতে হবে।
ডা. লুৎফুল হোসেন তার প্রবন্ধে জানান, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লাখেরও বেশি শিশু অন্ধত্বের ঝুঁকি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে এবং সময়মতো চক্ষু পরীক্ষা ও চিকিৎসা না করালে তারা সারাজীবনের জন্য দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারে।

জাতিসংঘের উপাত্তের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি জানান, বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ৩০ লাখ শিশু জন্মগ্রহণ করে। এদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ১২ শতাংশ বা ৪ লাখ শিশুর জন্ম হয় অপরিণত অবস্থায়। এসব অপরিণত শিশুদের মধ্যে আবার ২০ থেকে ২২ শতাংশ রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচুরিটির ঝুঁকির মধ্যে থাকে, বলেন তিনি।

অধ্যাপক সামিনা চৌধুরী বলেন, আরওপি মোকাবিলায় বিষয়টিকে স্বাস্থ্যবিষয়ক নীতিতে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে এবং যেসব ক্ষেত্রে সম্ভব সেসব ক্ষেত্রে অপরিণত শিশুর জন্ম বিলম্বিত করার চেষ্টা নিতে হবে।
অধ্যাপক রওশন আরা ও সাংবাদিক নাসিমুন আরা স্বাস্থ্যখাতে সরকারি বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং বরাদ্দকৃত অর্থের যথাযথ ব্যবহারের পরামর্শ দেন।

চক্ষু বিশেষজ্ঞদের মতে, আরওপি হলো এমন এক রোগ যেটি অপরিণত শিশু অর্থাৎ যারা ৩৪ সপ্তাহের আগে জন্মগ্রহণ করে তাদের আভাসকুলার রেটিনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তারা বলেন, কোনও শিশু আরওপিতে আক্রান্ত হলে জন্মের ৪ সপ্তাহের মধ্যে তা নির্ণয় এবং চিকিৎসা শুরু করতে হবে।

 

ছবি: প্রেস ইন্সটিটিউট বাংলাদেশে (পিআইবি) আয়োজিত ’বাংলাদেশে আরওপি প্রতিরোধ ও চিকিৎসা’ শীর্ষক আলোচনায় অতিথি ও আলোচকরা।

 

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts