দুই ওষুধে করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসা

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রতিদিনই বেড়ে চলছে করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্তের সংখ্যা।

করোনায় আক্রান্তদের রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এসব রোগীকে চিকিৎসায় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ও অ্যাজিথ্রোমাইসিন নামে দুটি ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল, ঠাণ্ড-সর্দিতে ফেক্সোফেনাডিন এবং শ্বাসকষ্টে অক্সিজেন ও নির্ধারিত ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে।

এ ছাড়া করোনায় আক্রান্ত রোগীর অন্য কোনো ক্রনিক ডিজিজ থাকলে সেসব রোগের জন্য নির্ধারিত ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে।

এদিকে করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় ভারত ও শ্রীলংকায় আরও চারটি ওষুধ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ট্রায়ালে রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের চিকিৎসকের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

দেশে ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে করোনা ভাইরাস শনাক্তে পরীক্ষা শুরু করে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় এখনো কোনো ওষুধ বা ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি। এ কারণে করোনার রোগীর যেসব উপসর্গ রয়েছে সে অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়। যেমন যার জ্বর আছে তাকে জ্বরের ওষুধ, সর্দি থাকলে সর্দির ওষুধ, শ্বাসকষ্ট থাকলে শ্বাসকষ্টের ওষুধ দেওয়া হয়।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছেন, হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ও অ্যাজিথ্রোমাইসিন ওষুধ দুটি করোনা ভাইরাসের চিকিৎসার জন্য তৈরি হয়নি। অনেক ওষুধ আছে যেগুলো যে রোগের জন্য তৈরি করা হয়েছে তার পাশাপাশি অফ লেভেল অন্য রোগের ক্ষেত্রেও কাজ করে থাকে। হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন হচ্ছে তেমনই একটি ওষুধ। এটি মূলত ম্যালেরিয়ার ওষুধ হলেও যুক্তরাষ্ট্র ইরান, চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ওপর হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন এবং অ্যাজিথ্রোমাইসিন প্রয়োগ করে ভালো ফল পাওয়া গেছে।

কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শিহাব আহমেদ জানান, এখানে অনেক রোগী ভর্তি আছেন, তাদের লক্ষণ-উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার রোগীদের সুস্থ করতে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ও অ্যাজিথ্রোমাইসিন নামের দুটি ওষুধ কাজ করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী ওই ওষুধ দুটি আমাদের এখানেও প্রয়োগ করা হচ্ছে। এখানে যারা চিকিৎসা নিতে আসেন তাদের মধ্যে অনেকের ক্রনিক ডিজিজ রয়েছে। এই রোগীদের জন্য নির্ধারিত ওষুধও প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।

তিনি বলেন, করোনার চিকিৎসায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন ওষুধ ব্যবহার হয়ে থাকতে পারে। ওষুধ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া প্রয়োগের সুযোগ নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেসব ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দেবে তার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে সম্প্রতি জানানো হয়, বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের দেহে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ও অ্যাজিথ্রোমাইসিন গ্রুপের ওষুধ প্রয়োগ করে ভালো ফল পাওয়া গেছে।

প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার এক গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, দেশে করোনায় আক্রান্তদের ওপর ওই গ্রুপের ওষুধ প্রয়োগ করে ভালো ফল পাওয়া গেছে। বর্তমানে দেশে ২০ হাজার রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার মতো ওষুধ তাদের কাছে মজুদ আছে। যেগুলো করোনার চিকিৎসায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সিএমএইচে সরবরাহ করা হবে। তবে কেউ এটি বাজারজাত করতে পারবে না। হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন যে কেউ যত্রতত্র ব্যবহারের দরকার নেই। করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এ ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ও অ্যাজিথ্রোমাইসিন ওষুধ দুটি করোনা ভাইরাসের রোগীর চিকিৎসায় ব্যবহার করা যাবে তা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়। তবে করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে এটি কাজ করছে বলে আমাদের দেশে ব্যবহার করা যেতে পারে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বক্ষব্যাধি মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. আতিকুর রহমান বলেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ৮২ শতাংশেরই লক্ষণ মৃদু। তাদের হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না, তারা বাসায় থেকে চিকিৎসা নিলেই হয়। বাকি ১৮ শতাংশ রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হয়। যাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাদের হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ও অ্যাজিথ্রোমাইসিন দেওয়া হয়। বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভারত ও শ্রীলংকায় আরও চারটি ওষুধ ট্রায়ালে রেখেছে। এর মধ্যে জাপান ও চীনের দুটি ওষুধ আছে। ট্রায়ালে থাকা এসব ওষুধের কার্যকারিতার ওপর ভিত্তি করে প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts