পাঠাগার হলো জনগণের বিশ্ববিদ্যালয়-আরিফ চৌধুরী শুভ
নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গ্রন্থাগার সম্পর্কে বলেছেন, ‘এখানে ভাষা চুপ করিয়া আছে, মানবাত্মার অমর আলোক কালো অক্ষরের শৃঙ্খলে বাঁধা পড়িয়া আছে। বই হচ্ছে অতীত আর বর্তমানের মধ্যে বেঁধে দেয়া সাঁকো।’ সেই সাঁকো তৈরিতে সারাদেশে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে জাতীয় পাঠাগার আন্দোলন (জাপাআ)।
‘মুজিব বর্ষের অঙ্গিকার ঘরে ঘরে পাঠাগার’ এই পতিপাদ্যকে সামনে রেখে জাতীয় পাঠাগার আন্দোলন(জাপাআ) শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় জাদুঘর কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ৪০টি নতুন পাঠাগার উদ্বোধন করেছেন। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পাঠাগারগুলো উদ্বোধন করেন এবং পাঠাগার প্রতিনিধিদের হাতে জাপাআ এর সদস্য সনদ ও ৪০টি করে বই তুলে দেন।
আরিফ চৌধুরী শুভ এর সঞ্চালনায় এবং জাপাআ এর উপদেষ্টা প্রফেসর এমিরেটাস ড. এম ফিরোজ আহমেদের সভাপতিত্বে এ আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসেব উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক(প্রতিষ্ঠান)সৈয়দ মো. নুরুল বাসির, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এম এন জামান, অবসরপ্রাপ্ত সচিব কাশেম মাসুদ, অবসরপ্রাপ্ত সচিব জিয়াউল হক, পরিবেশবিদ প্রফেসর কামারুজ্জামান মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি নুরুলহক নুর প্রমুখ।
জাতীয় পাঠাগার আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আরিফ চৌধুরী শুভ বলেন, পাঠাগার হলো জনগণের বিশ্ববিদ্যালয়। ‘বই পড়ি পাঠাগার গড়ি’ স্লোগানে আমরা সেই বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির কাজটি করছি ২০১৭ সাল থেকে। আমাদের কাজই আমাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিসহ আজকের এই জায়গায় নিয়ে এসেছে।
তিনি আরো বলেন, প্রতিটি সচেতন পরিবারেরই উচিত একটি পারিবারিক পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা। মুক্ত জ্ঞান চর্চার উন্মুক্ত মাধ্যম হলো পাঠাগার অথচ সমাজে সবই আছে, কিন্তু একটি পাঠাগারই নেই। পাঠাগারের এই অভাব বোধ যেন কারো মাঝে কাজ করছে না। আমরা প্রতিটি গ্রামে অন্তত একটি করে পাঠাগার গড়ার মাধ্যমে বই পড়া আন্দোলনকে প্রতিটি ঘরে ঘরে ছড়িয়ে দিতে চাই। এরই মধ্যে ৬৪ জেলাতে আমরা পাঠাগার গড়েছি। আজও সারাদেশে ৪০টি নতুন পাঠাগার উদ্বোধন করেছি। এভাবে একদিন গ্রামে গ্রামে পাঠাগার গড়ে তুলতে পারবো। আমি বিশ্বাস করি, সুস্থ অহিংস সংস্কৃত ধারার জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিণির্মাণে পাঠাগার আন্দোলনের বিকল্প নেই। তাই পাঠাগার আন্দোলনকে সবার পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া দরকার। বৃহত্তর স্বার্থে জ্ঞানভিত্তিক সমাজই পারে কাঙ্খিত বাংলাদেশ উপহার দিতে।
প্রধান অতিথি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এই সময়ে এসে আন্দোলন করতে হচ্ছে এই তরুণদের। জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে জাতীয় পাঠাগার আন্দোলনের যে লড়াই, সে লড়াই টিকিয়ে রাখতে হলে সরকার ও আমাদের জোরালো সমর্থন থাকা দরকার। সরকার এরই মধ্যে তাদের সমর্থন দিয়েছেন, আমরাও তাদের সাথে আছি। তাদের আর্থিক সহায়তার জন্য সরকারকে অনুরোধ করছি। এটুকুনি বলা ছাড়া আর কি করতে পারি।
তিনি আরো বলেন, যে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠাগার নেই, তাদের এমপিও বাতিল করা হোক। আর পাঠাগার ছাড়া কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেন নতুন করে এমপিও না করা হয় সেজন্য সরকারকে অনুরোধ করছি।
জাতীয় সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) সৈয়দ মো. নুরুল বাসির বলেন, এত সুন্দর একটি আয়োজন না আসলে বোঝার ক্ষমতা ছিল না। আমি যেটা জানলাম, মেঠোপথের আলোকিত পাঠাগার থেকে জাতীয় পাঠাগার আন্দোলনের জন্ম।পাঠাগার গড়ার এই আন্দোলনকে আমাদের স্বত:স্ফূত করতে হবে। সমাজসেবা অধিদপ্তর জাতীয় পাঠাগার আন্দোলনের পাশে সব সময় থাকবে।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এম এন জামান বলেন, পাঠাগার আন্দোলন এই সময়ের জন্য রেনেসা। মেঠোপথ থেকে সমাজের জন্য আজকে যেসকল তরুণরা ছুটে এসেছেন রাজধানীতে, তারাই জ্ঞানভিত্তিক সমাজ নির্মাণ করবে আগামীতে।
পরিবেশবিদ প্রফেসর কামারুজ্জাম মজুমদার বলেন, যে বই মানুষকে পথ দেখায়, অথচ সেই বই থেকে আমরা আজ অনেকটা দূরে। পাঠাগার আন্দোলন বই ও পাঠকের মধ্যে এই দূরুত্ব অনেকটা গোছাবে বলে মনে করছি।
ঢাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, সরকার মাফিয়া রাষ্ট্র বানানোর জন্য যে অর্থ ব্যয় করে, সেই অর্থ যদি জাতীয় পাঠাগার আন্দোলনের মতো সামাজিক সংগঠনগুলোর পিছনে ব্যায় করতেন, তাহলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশ মাফিয়া রাষ্ট্রের উপাধী পেত না। জাতীয় পাঠাগার দিবসে যে পাঠাগারগুলো উদ্বোধন করা হলো, সেই পাঠাগারগুলোতে জ্ঞানের চর্চা হবে। পাঠকরা সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতে শিখবে। জাতীয় পাঠাগার আন্দোলন এগিয়ে যাবে পাঠক ও পাঠাগার প্রেমিদের নিয়ে।
সভাপতির বক্তব্যে ড. এম ফিরোজ আহমেদ বলেন, পাঠাগার আন্দোলন কেন দরকার তার বিচার বহুভাবে করা যায়। কিন্তু পাঠাগার গড়ার যে স্রোত তরুণদের মাঝে আরিফ চৌধুরী শুভ জাতীয় পাঠাগার আন্দোলনের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে, সেটি আমাদের আশার আলো দেখাচ্ছে। প্রথম প্রথম ভেবেছি ডিজিটাল সময়ে সবাই যখন ফেসবুক পড়ে, তখন তার এই আন্দোলনের বাস্তবতা কতটুকু কিন্তু আজ আপনাদের দেখে মনে হচ্ছে আমরা বোদয় আবার পাঠাগারমুখি হচ্ছি আরিফ চৌধুরীর কারণে।আমরা বোদয় বইকে আবারো সঙ্গি করে নিতে যাচ্ছি। এই আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়ার জন্য আমি সরকার ও বড়বড় প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
আয়োজনের শেষ পর্বে মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা উপহার দেন এ সময়ের জনপ্রিয় ব্যান্ড গান কবি ও ক্লেফস মিউজিক ফাউন্ডেশন।
উল্লেখ্য যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের সভায় ৫ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় গ্রন্থাগার/পাঠাগার দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস উদযাপন করা হয়। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ৫ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল। তাই এ দিনটিকে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস, হিসেবে ঘোষণা করা হয়।