খান মাইনউদ্দিন,বরিশাল: বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝরাতে মেস থেকে নামিয়ে মারধরের ঘটনায় অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছে শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সোয়া পাঁচটায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. ছাদেকুল আরেফিন।
তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত দাবীসমূহ মেনে নেওয়া হয়েছে। তাদের ওপরে যারা হামলা করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, শিক্ষার্থীদের আবাসন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে এবং মঙ্গলবার রাতে শিক্ষার্থীদের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় প্রক্টরিয়াল বডির কারো দ্বায়িত্বহীনতা থাকলে তা ‘রিফর্ম’ করা হবে।
ড. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, আমিও চাইবো শিক্ষার্থীদের ওপর যারা ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়েছে তাদের শাস্তি হোকে। তবে তা মানুষের ভোগান্তি করে নয়। এজন্য শিক্ষার্থীদের সাথে বসে তাদের কথা শুনেছি এবং তাদের আশ্বস্ত করেছি বিচার পাওয়ার ব্যাপারে। শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিয়েছে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী সুজয় শুভ বলেন, আমরা ৪৮ ঘন্টার সময় বেঁধে দিয়েছি। তারমধ্যে হামলাকারীদের গ্রেফতার করতে হবে। নয়তো আবারো আমরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবো।
আরেক আন্দোলনকর্মী মাহমুদ হাসান তমাল বলেন, আমাদের দাবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বলে সড়ক অবরোধ তুলে নিয়েছি। তবে নির্ধারিত সময়ে আশ্বাস বাস্তবায়ন না হলে আবারো আমরা সড়কে নামবো।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতয়ালী) মো. রাসেল জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের আশ্বাস মেনে নিয়ে সড়ক অবরোধ তুলে নিয়েছে। বর্তমানে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে রূপাতলী হাজিংয়ের সি-ব্লকের হারুন ম্যানশন ভবনের মেসে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। সেখানে অবস্থানকারী ছাত্রদের মারধর করে মারাত্মক জখম করা হয়। হামলায় ১১ শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
তার আগে মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে ছুরি দিয়ে কোপ দেয় রূপাতলী বিআরটিসি কাউন্টারের রফিক নামের হেলপার। এসময়ে আরো এক ছাত্রীকে লাঞ্ছিত করে রফিক ও কাউন্টারম্যান বাদল। এরপ্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিআরটিসি কাউন্টার ভাংচুর ও সড়ক অবরোধ করে। এসময়ে সড়ক অবরোধ তুলে দেওয়ার জন্য ঘটনাস্থলে আসেন রূপাতলী বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন, ২৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন মোল্লাসহ ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ ও শ্রমিক লীগের নেতারা। এসময়ে কাওছার হোসেন শিপনের সাথে বাকবিতন্ডা হয় শিক্ষার্থীদের। আর সড়ক অবরোধের মধ্য থেকে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে ২৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন মোল্লাকে লাঞ্ছিত করে শিক্ষার্থীরা। সেই ঘটনার রেশ ধরে কাওছার হোসেন শিপন ও ইমরান হোসেন মোল্লার লোকেরা গভীর রাতে হাউজিংয়ে মেসে হামলা চালিয়ে শিক্ষার্থীদের আহত করে বলে আহত শিক্ষার্থীরা দাবী করেন।
তবে কাওছার হোসেন শিপন জানিয়েছেন, এই হামলা বা ঘটনার সাথে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই। হামলায় আহতরা হলেন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের আলীম সালেহী, মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের নুরুল্লাহ সিদ্দিকী, গণিত বিভাগের ফজলুল হক রাজীব, রসায়ন বিভাগের এস এম সোহানুর রহমান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আহসানুজ্জামান, বোটানি ও ক্রপ সাইন্সের আলী হাসান, বাংলা বিভাগের মো. রাজন হোসেন এবং মার্কেটিং বিভাগের মাহবুবুর রহমান, মাহাদী হাসান ইমন, মিরাজ হাওলাদার ও সজীব শেখ।
হামলার পরপরই রাত আড়াইটার দিকে সড়কে কাঠ পুড়িয়ে অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। যা শেষ হলো বিকেল পাঁচটায়। এরমধ্যে দুই দফা বৈঠকে বসেন শিক্ষার্থী ও ববি প্রশাসন। প্রথম দফায় তিন দফা দাবী মেনে নেওয়ার বিবেচনা করার কথা বললে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ না করে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন। শেষে দ্বিতীয় দফায় দাবী মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করেন শিক্ষার্থীরা।