চক্ষুসেবা সম্প্রসারণে অরবিসের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী বাংলাদেশ : ড. ইউনূস

ঢাকা, নভেম্বর ২২: দেশে চক্ষুসেবা সম্প্রসারণে আন্তর্জাতিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান অরবিস ইন্টারন্যাশনালের সাথে কাজ করার জন্য বাংলাদেশের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস।

বুধবার (২০ নভেম্বর) বিকেলে অরবিস ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেরেক হডকির সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বাংলাদেশে চক্ষুসেবা সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন এবং এ লক্ষ্যে অরবিস ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত তার দেশ।

বর্তমানে চট্টগ্রামে চলমান অরবিস উড়ন্ত চক্ষু হাসপাতালের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নিতে বাংলাদেশে আসা ডেরেক ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

সাক্ষাতকালে ডেরেকের সঙ্গে ছিলেন অরবিস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. মুনির আহমেদ। অরবিসের প্রেসিডেন্ট প্রধান উপদেষ্টাকে উড়ন্ত চক্ষু হাসপাতালের একটি মডেল সংস্করণ উপহার দেন, যার প্রশংসা করেন ড. ইউনুস।

ডেরেক অরবিস ইন্টারন্যাশনালের কাজ সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। তিনি জানান, অরবিস ১৯৮২ সালে বিশ্বব্যাপী দৃষ্টি-সুরক্ষা কর্মসূচি শুরু করেছিল।

বাংলাদেশে অরবিস ৩৯ বছর ধরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাথে কাজ করছে – একথা জানিয়ে ডেরেক বলেন, ওই সময় থেকে এখন পর্যন্ত অরবিস কমিউনিটি আউটরিচ কর্মসূচির মাধ্যমে ৭৮ লাখেরও বেশি চক্ষু পরীক্ষা করেছে, সাড়ে ৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুকে চিকিৎসা প্রদান করেছে, ২ লাখ ৫৮ হাজারেরও বেশি চোখের সার্জারি করেছে এবং ৪০ হাজারেরও বেশি চক্ষুসবা পেশাজীবীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে চক্ষুস্বাস্থ্য খাতে অরবিসের অবদানের কথা স্বীকার করেন এবং উড়ন্ত চক্ষু হাসপাতালের সেবার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, যেটি এখন বাংলাদেশে ১১তম প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

অরবিসকে বাংলাদেশের চক্ষুস্বাস্থ্য খাতের অন্যতম অংশীজন হিসাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমি অরবিসকে ভালবাসি। আমি ফ্লাইং আই হসপিটালকে ভালোবাসি।”

ডেরেক বলেন, ব্যক্তি, পরিবার ও কমিউনিটির উন্নতিতে সাহায্য করার জন্য অরবিস বিশ্বব্যাপী দুই শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে দৃষ্টি সুরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

সারাবিশ্বে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ সম্পূর্ণ পরিহারযোগ্য অন্ধত্ব ও দৃষ্টি সমস্যায় ভুগছে – একথা উল্লেখ করে ডেরেক বলেন, চার দশকেরও বেশি সময় ধরে অরবিস একটি শক্তিশালী ও টেকসই চক্ষুসেবা ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। তিনি বলেন, অরবিস আফ্রিকা, এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকায় দেশভিত্তিক কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং উদ্ভাবনী প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি প্রয়োগ করছে।

ডেরেক বলেন, শিশুর চোখের যত্ন, মাইক্রোসার্জারি, রেটিনাল সার্জারি, কর্নিয়ার রোগ, রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচুরিটি এবং ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে অরবিস গত চার দশক ধরে বাংলাদেশে স্থানীয় অংশীদারদের দক্ষতা ও জ্ঞান বাড়াতে সাহায্য করেছে।

প্রধান উপদেষ্টাকে ডেরেক জানান, বাংলাদেশে অরবিস ৪২টি ভিশন সেন্টার স্থাপন করেছে, যেগুলো সারা দেশের, বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষদের চক্ষুসেবার সঙ্গে যুক্ত করেছে। এছাড়া ১৭টি মাধ্যমিক হাসপাতাল, চারটি সর্বোচ্চ স্তরের হাসপাতাল, দুটি ওয়েট ল্যাব, একটি কোয়ালিটি রিসোর্স সেন্টার এবং একটি ডিজিটাল ট্রেনিং হাব স্থাপনে সহায়তা করেছে এ প্রত্ষ্ঠিান।

পাশাপাশি অরবিস ৪০০টি কমিউনিটি ক্লিনিককে চক্ষু পরীক্ষার যন্ত্রপাতি দিয়েছে এবং শিশু অন্ধত্বের প্রধান কারণ রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচুরিটির পরীক্ষা ও ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় নির্দেশিকা তৈরি করে দিয়েছে।

সায়ীদ রুমি/ঢাকা

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts