রফিক সরকার: গাজীপুরের শ্রীপুরে নেদারল্যান্ডস’র টিউলিপ ফুলের বাগান দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন মানুষ। ‘মৌমিতা ফ্লাওয়ার’ নামের এ বাগানটি উপজেলার কেওয়া পূর্বখণ্ড গ্রামে। টিউলিপ দেখতে প্রতিদিনই আসছেন হাজারো দর্শনার্থী।
বাগানটির উদ্যোক্তা দেলোয়ার হোসেন। সম্প্রতি দেলোয়ারের দৃষ্টিনন্দন এই টিউলিপ বাগান ঘুরে গেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ও শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি।
মুগ্ধ কৃষিমন্ত্রী ফুল চাষি ও উদ্যোক্তাদের ঋণসহ সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। অন্যদিকে শিক্ষামন্ত্রীও টিউলিপ বাজারজাত করার পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন।
বাংলাদেশের আবহাওয়ায় টিউলিপ ফুল ফোটানো সম্ভব দাবি করে মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের বাগানে টিউলিপ ফুটেছে দেখে অন্যদের চেয়ে আমরাই বেশি খুশি। প্রায় ১৫ বছর আগে থেকে আমরা ফুল চাষ শুরু করি। প্রথমে বাণিজ্যিকভাবে পরিকল্পনা করিনি। নেদারল্যান্ডস থেকেই ফুলের চাষ প্রক্রিয়া, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তির ব্যবহার, ফুল গাছ রোপণ ও পরিচর্যা প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত প্রযুক্তি এবং প্রযুক্তিগত পণ্য সংগ্রহ করি।’
তিনি বলেন, ‘নেদারল্যান্ডস থেকে গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এক প্রজাতির চার রঙের বিশ হাজার টিউলিপ বাল্ব এনে তিনটি বাগানে রোপণ করি। গাজীপুরে সফল হওয়ার পর দেশের অন্যান্য স্থানে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য চুয়াডাঙ্গায় তিন হাজার ও ঠাকুরগাঁওয়ে সাড়ে তিন হাজার বাল্ব রোপণ করা হয়। বাকি বাল্ব শ্রীপুরের এ বাগানে রোপণ করা হয়। চলতি সপ্তাহর প্রথম থেকেই থেকেই এ বাগানে ফুল ফুটতে শুরু করে। অন্য দুটি স্থানেও ফুল ফোটা শুরু করেছে। আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে ২০ থেকে ২২ দিনেই ফোটে টিউলিপ ফুল।’
দেলোয়ার বলেন, ‘টিউলিপ গাছের ফলন ও ফোটার জন্য কমপক্ষে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রার প্রয়োজন। সেখানে আমাদের এলাকায় সর্বনিম্ন ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকে। এর মধ্যেই স্বপ্নের এ ফুলটি ফুটেছে। অনেকে ফুল প্রতি ৮০ টাকা দাম দিতে চেয়েছিলেন, বিক্রি করিনি। দেশে যেহেতু আমার বাগানেই প্রথম ফলন, সেহেতু আমি বিক্রি করব না। অনেক দর্শনার্থী এসে ফুলগুলো দেখছেন। এটি আমাদের অর্জন, দেখতে ভালো লাগে, মানুষ আসছে দেখার জন্য। এতেই আমাদের আনন্দ। ফুলটি না ফুটলে হয়তো এ আনন্দ আমি টাকা দিয়ে কিনতে পারতাম না।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুল মুঈদ বলেন, ‘বাংলাদেশে টিউলিপ চাষ সম্ভব। চাষি দেলোয়ার হোসেন তা করে দেখিয়ে দিয়েছেন। সাধারণত বরফ প্রধান দেশে এই ফুলের চাষ হয়। ইউরোপের দেশগুলোতে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা থাকায় সেসব দেশে টিউলিপের অহরহ চাষ হয়ে থাকে। কিন্তু টিউলিপ ফুলের সফল চাষ করে চাষি দেলোয়ার হোসেন অবাক করে দিয়েছেন। আমরা এ নিয়ে সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে কথা বলব।