আবু নাঈম : বিশ্বে ২৩তম এবং বাংলাদেশে দ্বিতীয় বারের মত দেখা মিললো ‘রেড কোরাল কুকরি’ নামের বিরল প্রজাতির সাপ।
শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাকলাট ইউনিয়নের পশ্চিম ভাণ্ডারু গ্রাম এলাকার একটি বাশ ঝাঁড় থেকে মৃত অবস্থায় সাপটি উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। বর্তমান সাপটি বন্যপ্রাণী সংরক্ষক ও ফটোগ্রাফার ফিরোজ আল সাবাহ’র কাছে সংরক্ষণে রয়েছে।
জানা গেছে, ভান্ডারু গ্রাম এলাকায় মৃত মমতাজ আলীর ছেলে আশরাফুল ইসলাম বাড়ির পাশে বাঁশ ঝাড়ের মাটি সড়ানোর সময় সাপটি দেখতে পান। পরে স্থানীয়রা সাপটিকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন এবং আটকে রাখেন। এতে সাপটি মারা যায়। খবর পেয়ে বন্যপ্রাণী সংরক্ষক ও ফটোগ্রাফার ফিরোজ আল সাবাহ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃত অবস্থায় সাপটি উদ্ধার করে তার বাড়িয়ে নিয়ে যান। বর্তমানে তার তত্ত্বাবধানেই সাপটি রয়েছে।
ফিরোজ আল সাবাহ বলেন, ‘আমাকে স্থানীয়রা সাপ উদ্ধারের বিষয়টি জানালে আমি খবর পাওয়া মাত্র ঘটনাস্থলে গিয়ে ‘রেড কোরাল কুকরি’ নামের সাপটিকে মৃত অবস্থায় সংরক্ষণ করি। পরে বিষয়টি আমি ঢাকা বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের ফরেনসিক কর্মকর্তা কনক রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি আমাকে সাপটি আমার কাছেই রাখতে বলেন এবং তারা পঞ্চগড়ে এসে সাপটি নিয়ে যাবেন বলে আমাকে নিশ্চিত করেছেন।’
এ বিষয়ে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের ফরেনসিক কর্মকর্তা কনক রায় বলেন, ‘আমরা শুক্রবার বিকেলে খবর পেয়েছি বাংলাদেশে দ্বিতীয় বারের মতো পঞ্চগড়ে মৃত অবস্থায় ‘রেড কোড়াল কুকরি’ নামে বিরল প্রজাতির সাপটি উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা উদ্ধারকারী ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষক ফটোগ্রাফার ফিরোজ আল সাবাহ’র সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা সাপটি ঢাকায় নিয়ে আসবো এবং সংরক্ষণ করে রাখবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু এটি একটি বিরল প্রজাতির সাপ তাই এটি সংরক্ষণ করলে গবেষণাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যাবে। আমরা সাপটি সংরক্ষণের জন্য এরইমধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।’
জানা গেছে, উজ্জ্বল কমলা ও লাল প্রবাল রঙের এ সাপটি অত্যন্ত মোহনীয়। লাল প্রবাল রঙের এ সাপটি মৃদু বিষধারী ও অত্যন্ত নিরীহ। এই সাপ পৃথিবীতে দুর্লভ সাপদের মধ্যে একটি। রেড কোরাল কুকরি হিমালয়ের পাদদেশের দক্ষিণে ৫৫ কিলোমিটার ও পূর্ব-পশ্চিমে ৭০ কিলোমিটার এলাকায় দেখা যায়। এ বিরল প্রজাতির সাপটি প্রথম ১৯৩৬ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশে এবং প্রায় ৮২ বছর পর ২০১৯ সালে আবারও উত্তর প্রদেশে দেখা যায় এবং সর্বশেষ এবার পঞ্চগড়ে দেখা মিলল। সাপটি নিশাচর প্রাণী। বেশির ভাগ সময় এরা মাটির নিচেই অবস্থান করে। সম্ভবত সাপটি মাটির নিচে কেঁচো ও লাভা পিঁপড়ার ডিম ও উইপোকার ডিম খেয়ে জীবনধারণ করে। নরম মাটি পেলে এরা মাটির ভেতরে চলে যায়। মাটির ভেতরে থাকার জন্য রোস ট্রালস স্কেল ব্যবহার করে এরা। স্কেল হলো সাপের মুখে সম্মুখভাগে অবস্থিত অঙ্গবিশেষ, যার সাহায্যে মাটি খনন করে। ‘রেড কোরাল কুকরি’ পূর্ণ বিষধর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে সাপটি নিয়ে গবেষণা চলছে। ভুটান, নেপাল ও ভারতের নিকটে হওয়ায় পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকায় সাপটি থাকতে পারে বলে জানা যায়।
এর আগে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ঝলইশালশিরি ইউনিয়নের কালিয়াগঞ্জ বাজার এলাকায় মাটিকাটার সময় দেশে প্রথমবারের মতো এবং বিশ্বে ২২তম বারের মত জীবিত ‘রেড কোরাল কুকরি’ উদ্ধার করা হয়।