বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ তামাকপণ্যে সুনির্দিষ্ট করারোপসহ দাম বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স- আত্মা। মঙ্গলবার (৯ মার্চ) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাথে প্রাক-বাজেট সভায় এই দাবি জানিয়েছে গণমাধ্যম কর্মীদের সংগঠনটি।
সভায় আত্মা’র পক্ষ থেকে জানানো হয় দাবি বাস্তবায়ন করা হলে প্রায় ৮ লক্ষ অকাল মৃত্যু রোধ হবে এবং ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিগারেটের ব্যবহার তুলনামূলকভাবে প্রায় একইরকম রয়েছে। করের ভিত্তি এবং করহার খুবই কম হওয়ায় সিগারেট, বিড়ি এবং ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য (জর্দা ও গুল) অধিক সহজলভ্য থেকে যাচ্ছে। বাংলাদেশের বর্তমান তামাক কর অত্যন্ত জটিল যা মূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে তামাক ব্যবহার নিরুৎসাহিতকরণে যথেষ্ট নয়। ফলে বিদ্যমান তামাক কর ব্যবস্থা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারছেনা।
বাংলাদেশে এখনও প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক (ধূমপান ও ধোঁয়াবিহীন) ব্যবহার করেন, ধূমপান না করেও প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বিভিন্ন পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র ও পাবলিক পরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন (গ্যাটস ২০১৭)। তামাক ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লক্ষ ২৬ হাজারের অধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করে।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। তামাকের দাম বেশি হলে তরুণ জনগোষ্ঠী তামাক ব্যবহার শুরু করতে নিরুৎসাহিত হয় এবং তামাকাসক্তরাও বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠী তামাক ছাড়তে উৎসাহিত হয়।
প্রাক-বাজেট সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আত্মা’র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিয়েছেন মনির হোসেন লিটন, জয়েন্ট চিফ নিউজ এডিটর, একাত্তর টেলিভিশন; মর্তুজা হায়দার লিটন, চিফ ক্রাইম করেসপন্ডেন্ট, বিডিনিউজ২৪.কম এবং কনভেনর, আত্মা; নাদিরা কিরণ, নিউজ এডিটর, এটিএন বাংলা ও কো-কনভেনর, আত্মা; দৌলত আক্তার মালা, স্পেশাল করেসপনডেন্ট, দি ফাইনানশিয়াল এক্সপ্রেস এবং মিজান চৌধুরী, সিনিয়র রিপোর্টার, দৈনিক যুগান্তর ও কো-কনভেনর, আত্মা।
আত্মা’র পক্ষ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য তামাক-কর বিষয়ক বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন এবং এনবিআর এর নিকট হস্তান্তর করা হয়। সভায় এনবিআর সদস্য (ভ্যাট নীতি) মো. মাসুদ সাদিক বলেন,‘বাজেট প্রণয়নে আত্মার প্রস্তাব গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হবে। ’ প্রাক-বাজেট সভায় নিম্নোক্ত দাবিসমূহ তুলে ধরা হয়:
বাজেট প্রস্তাব:
১। সকল সিগারেট ব্রান্ডে অভিন্ন করভারসহ (সম্পূরক শুল্ক চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৬৫%) মূল্যস্তরভিত্তিক সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ (সম্পূরক) শুল্ক প্রচলন করা
– নিম্ন স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৩২.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা;
– মধ্যম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৭০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা;
– উচ্চ স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১১০ টাকা নির্ধারণ করে ৭১.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক করা; এবং
– প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৪০ টাকা খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে ৯১ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।
২। ফিল্টারযুক্ত ও ফিল্টারবিহীন বিড়িতে অভিন্ন করভারসহ (সম্পূরক শুল্ক চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৪৫%) সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ (সম্পূরক) শুল্ক প্রচলন করা
– ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১১.২৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা, এবং
– ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৯.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।
৩। জর্দা এবং গুলের কর ও দাম বৃদ্ধিসহ সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ (সম্পূরক) শুল্ক প্রচলন করা
– প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৪৫ টাকা নির্ধারণ করে ২৭.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক (৬০%) আরোপ করা; এবং
– প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১৫.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক (৬০%) আরোপ করা।
৪। সকল তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল থাকবে।
উল্লিখিত তামাক-কর ও মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে প্রায় ১১ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ী ধূমপান ছেড়ে দিতে উৎসাহিত হবে, দীর্ঘমেয়াদে প্রায় ৮ লক্ষ অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে এবং সরকারের ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় হবে।
সভায় ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার পদক্ষেপ হিসেবে এই বাজেট প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য এনবিআর এর প্রতি আহ্বান জানায় তামাকবিরোধী মিডিয়া জোট- আত্মা।
সূত্র: মেহেদি হাসান