শাহ মতিন টিপু: বিদেশে বাংলাদেশের যেসব কৃতি পুরুষদের নিয়ে গর্ব করা যায়, তাদের অন্যতম একজন ফজলুর রহমান খান সংক্ষেপে এফ আর খান। যাকে বলা হয় স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আইনস্টাইন।
এই কৃতিপুরুষের ৭৩তম জন্মদিন আজ। ১৯২৯ সালের ৩ এপ্রিল তিনি মাদারীপুর জেলার, শিবচর উপজেলার ভান্ডারীকান্দী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা খান বাহাদুর আবদুর রহমান খাঁ, যিনি একজন শিক্ষাবিদ ছিলেন। বিশ্বসেরা স্থাপত্যবিদদের কাতারে আপন বৈশিষ্ট্যে ভাস্বর হয়ে আছে এই বাংলাদেশির অনন্য কীর্তি ।
আমেরিকার তৃতীয় বৃহত্তম শহর শিকাগো। এ শহরের সর্বোচ্চ ভবনের নাম উইলিস টাওয়ার। এ এক নান্দনিক শিল্পকর্ম। ভবনটি ১১০ তলা। বর্তমানে আমেরিকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভবন, ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ছিল পৃথিবীর সর্বোচ্চতম ভবন। এই ভবনের পূর্বনাম ছিল সিয়ার্স টাওয়ার। এর নকশা তৈরি করেন ফজলুর রহমান খান। উইলিস টাওয়ারের স্মৃতিফলকে খচিত আছে এফ আর খানের ছবি। যা দেখে গর্বে ভরে ওঠে কোনো বাংলাদেশি দর্শনার্থীর বুক। শিকাগোর একশ তলা উঁচু জন হ্যানকক সেন্টারেরও নকশা তৈরি করেন তিনি। অন্যদিকে বিশ্বসেরা স্থাপত্য জেদ্দা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, হজ্ব টার্মিনালের ছাদ কাঠামো (৫০,০০০ বর্গফুট) এবং বাদশাহ আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য নকশা তারই তৈরি।
ফজলুর রহমান খান সরকারের বৃত্তি নিয়ে ১৯৫২ সালে পাড়ি জমান শিকাগো শহরে। মাত্র তিন বছরে উচ্চশিক্ষার পাট চুকে যায় তার। দেশে ফিরে আসেন । সহসাই উপলব্ধি করলেন, তার মেধা বিকাশের সুযোগ দেশে নেই। বছর চারেক পর আবার শিকাগো ফিরে যান। কাজ শুরু করলেন পৃথিবীর বিখ্যাত স্থাপনা নির্মাণ কোম্পানিতে। ভালোবাসলেন এক অস্ট্রো-আমেরিকান নারী, লিজেলোটকে। ১৯৫৯ সালে দুজন বিয়ে করেন। দুই দশকের কর্মময় জীবনে তিনি পাল্টে দিলেন ইতিহাস। নিজেকে তুলে ধরলেন পৃথিবীর মঞ্চে। তাদের একমাত্র সন্তান ইয়াসমিন সাবিনা খান, পেশায় স্থপতি। মাত্র ৫৩ বছর বয়সে খান মারা যান ১৯৮২ সালে। জীবদ্দশাতেই দেখে গিয়েছেন তার খ্যাতি। রেখে গেছেন তার কর্ম—পৃথিবীর অনেক শহরে।
শিকাগো শহরের সিয়ার্স টাওয়ারের পাদদেশের জ্যাকসন সড়ক ও ফ্রাঙ্কলিন সড়কের সংযোগস্থলটির নামকরণ হয়েছে তার নামে ‘ফজলুর আর. খান ওয়ে’।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষেও প্রবাসে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেন ৷ মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন তিনি। তার নেতৃত্বে প্রবাসীদের নিয়ে গঠিত হয় ‘বাংলাদেশ ইমার্জেন্সি ওয়েলফেয়ার আপিল’ ও ‘বাংলাদেশ ডিফেন্স লীগ’।
১৯৮২ সনের ২৬ মার্চ তিনি জেদ্দায় মারা যান৷ চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন শিকাগো শহরেই। তিনি বাংলাদেশে বিস্মৃত প্রায়। কিন্তু শিকাগোবাসী তাকে ভুলবে না কোনো দিন। শিকাগোর গ্র্যাসল্যান্ড গোরস্থান। হাজারো মানুষের কবর। খানসহ শিকাগোর বিখ্যাত প্রায় ৫০ জনের কবর নির্দিষ্ট করে চিহ্নিত করা। শিকাগোবাসীর কাছে আজো ‘খান ইজ গ্রেট’।