বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ বদলে গেল এক বছরের দিনপঞ্জি। ১৪২৭ সনকে বিদায় জানিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হলো নতুন বছর। আজ পহেলা বৈশাখ।
গত বছরের মতো এবারো বৈশাখের প্রথম প্রভাতে রমনার বটমূলে গায়নি ছায়ানট। বের হয়নি চারুকলার শিক্ষার্থীদের মঙ্গল শোভাযাত্রা। চারুকলা ইনস্টিটিউটে আয়োজন নেই দিনব্যাপী পুতুলনাচ ও নাগরদোলার। মানুষের ঢল নামেনি রমনা শাহবাগে। পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক থেকেও বের হয়নি বর্ণাঢ্য র্যালি। ধানমণ্ডির রবীন্দ্রসরোবরেও লোকসংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তির কোন আয়োজন নেই।
কোন আয়োজন না থাক, তবু ভোরের আলো উদয় হবে নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর অসীম সম্ভাবনা নিয়ে । যে প্রত্যাশায় থাকবে করোনাভাইরাস মুক্ত নতুন বিশ্ব আর নতুন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।
আমরা ঘরে বসেই এবারের নববর্ষের আনন্দ উপভোগ করবো। গাইবো কবিগুরুর কালজয়ী গান ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো/মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’
চৈত্রের শেষ দিনে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘গত বছরের মত এ বছরও আমরা বাইরে কোন অনুষ্ঠান করতে পারছিনা। কারণ, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ নতুন করে আঘাত হেনেছে সারা দেশে। দ্বিতীয় ঢেউয়ের করোনাভাইরাস আরও মরণঘাতী হয়ে আভির্ভূত হয়েছে। পয়লা বৈশাখের আনন্দ তাই গত বছরের মত এবারও ঘরে বসেই উপভোগ করবো আমরা। টেলিভিশন চ্যানেলসহ নানা ডিজিটাল মাধ্যমে অনুষ্ঠানমালা প্রচারিত হবে। সে সব অনুষ্ঠান উপভোগ ছাড়াও আমরা নিজেরাও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘরোয়া পরিবেশে আনন্দ উপভোগ করতে পারি। অতীতের সকল জঞ্জাল-গ্লানি ধুয়ে-মুছে আমরা নিজেদের পরিশুদ্ধ করবো। দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে যাবো সামনের দিকে। গড়বো আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যত-এই হোক এবারের নতুন বছরের শপথ। ‘
তিনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় উচ্চারণ করেন :
আমরা চলিব পশ্চাতে ফেলি’ পচা অতীত
গিরি গুহা ছাড়ি’ খোলা প্রান্তরে গাহিব গীত।
সৃজিব জগৎ বিচিত্রতর বীর্যবান
তাজা জীবন্ত সে নব সৃষ্টি শ্রম-মহান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুগে যুগে মহামারি আসে, আসে নানা ঝড়-ঝঞ্ঝা, দুর্যোগ-দুর্বিপাক। এসব মোকাবিলা করেই মানবজাতিকে টিকে থাকতে হয়। জীবনের চলার পথ মসৃণ নয়। তবে পথ যত কঠিনই হোক, আমাদের তা জয় করে এগিয়ে যেতে হবে।’
দেশে দ্বিতীয়বারের মত করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে পয়লা বৈশাখসহ সবধরনের সমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। সারা দেশে আজ ১৪ এপ্রিল থেকে সাত দিনের জন্য সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত প্রথম লকডাউন আরো দুইদিন বর্ধিত করে ১৪ এপ্রিল ভোর পর্যন্ত চলমান করা হয়।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউতে সংক্রমণ অনেক বেশি হওয়ায় গত বছরের মতো এবারও বর্ষবরণ উৎসবের উপর সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। গত বছর নববর্ষের প্রথম প্রহরে রমনার বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠান হয়নি। এবছরও হচ্ছে না ছায়ানটের নতুন বছরের বন্দনা। তবে, এ উপলক্ষে নতুন কিছু গান রেকর্ড করা হয়েছে। নববর্ষের দিন সকালে এগানগুলোসহ সংগঠনের সভাপতি সনজীদা খাতুনের ‘কথন’ বাংলাদেশ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হবে। বেসরকারি টেলিভিশন গুলোতেও বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারিত হবে।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীসহ বাঙালিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
আজ যা নতুন, সময়ের ছুটে চলায় তা পেছনে পড়ে। পুরোনো হয়। সেই অমোঘ নিয়মে পুরোনো হলো আরো একটি বছর। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ভাষায়- ‘বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/ যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে যাওয়া গীতি/ অশ্রুবাষ্প সুদূরে মেলাক…।’
বাংলা নববর্ষ ও বৈশাখের ইতিহাসে চোখ ফেরালে দেখা যায়, বাংলা নববর্ষের সঙ্গে সবচেয়ে নিবিড় সম্পর্ক কৃষির। এ সম্পর্কের সূত্রেই বাংলা সাল প্রবর্তন করেন সম্রাট আকবর। তার আমলেই প্রবর্তন হয় বাংলা সাল। এখন তা বঙ্গাব্দ নামে পরিচিত।
উৎসব কিংবা বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান নয় গত বছরের মতো এবারো হোক নিজেকে সুরক্ষার মন্ত্রপাঠ।
সূত্র: শাহ মতিন টিপু, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক।